সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করে রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করার প্রায় এক ঘন্টা পর অবরোধ ছেড়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে বাংলাবাজার মোড়, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতিবাজার মোড়ে এসে ২ টা ৫০ মিনিটে রাস্তা অবরোধ করে। এসময় কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার জেগে উঠো আরেকবার’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথায় কবর দে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক’ — এরকম নানা স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় গুলিস্তান এবং বাবুবাজার ব্রিজ থেকে তাঁতিবাজার মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার রাস্তা করে দেয়।
এসময় শাহীনুর ইসলাম সান বলেন, ‘আমাদের কোনোদিনও ইচ্ছে ছিলো না রাস্তায় নামার। আমরা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সেই বৈষম্যের প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় নেমেছি। আর কদদিন আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হবে? বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমাদের একটি সরকারি চাকরির দরকার, সেখানে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা এই বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাই।’
আন্দোলনে মাসুম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যের শিকার হয়েই আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২-৫৩ বছর পরে এসেও দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। একজন রিক্সাচালক, একজন চা বিক্রেতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে স্নাতক পড়াচ্ছে, কিন্তু সে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে।
এসময় মেহেরুন নেসা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকের বিশ্বে, আজকের দেশে এই সময়ে নারীরা পিছিয়ে নেই। আমরা নারীররাও মেধাবী। বর্তমান সময়ের নারীকোটাসহ যত অযৌক্তিক কোটা আছে, সকল কোটা বাতিল করা হোক।
এরপর গত দুইদিনের ৪ দফা দাবিগুলো আবারও পড়ে শোনান সাজ্জাদ হোসেন মুন্না। দাবিগুলো হলো :
১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
২। ’১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪। দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এরপর অবরোধকারীরা তাঁতিবাজার মোড় ছেড়ে দিয়ে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আজকের মতো আন্দোলন শেষ করেন।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, আমরা সংস্কার না সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
কোটা পুনর্বহাল : বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করে রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করার প্রায় এক ঘন্টা পর অবরোধ ছেড়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে বাংলাবাজার মোড়, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতিবাজার মোড়ে এসে ২ টা ৫০ মিনিটে রাস্তা অবরোধ করে। এসময় কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার জেগে উঠো আরেকবার’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথায় কবর দে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক’ — এরকম নানা স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় গুলিস্তান এবং বাবুবাজার ব্রিজ থেকে তাঁতিবাজার মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার রাস্তা করে দেয়।
এসময় শাহীনুর ইসলাম সান বলেন, ‘আমাদের কোনোদিনও ইচ্ছে ছিলো না রাস্তায় নামার। আমরা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সেই বৈষম্যের প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় নেমেছি। আর কদদিন আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হবে? বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমাদের একটি সরকারি চাকরির দরকার, সেখানে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা এই বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাই।’
আন্দোলনে মাসুম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যের শিকার হয়েই আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২-৫৩ বছর পরে এসেও দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। একজন রিক্সাচালক, একজন চা বিক্রেতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে স্নাতক পড়াচ্ছে, কিন্তু সে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে।
এসময় মেহেরুন নেসা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকের বিশ্বে, আজকের দেশে এই সময়ে নারীরা পিছিয়ে নেই। আমরা নারীররাও মেধাবী। বর্তমান সময়ের নারীকোটাসহ যত অযৌক্তিক কোটা আছে, সকল কোটা বাতিল করা হোক।
এরপর গত দুইদিনের ৪ দফা দাবিগুলো আবারও পড়ে শোনান সাজ্জাদ হোসেন মুন্না। দাবিগুলো হলো :
১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
২। ’১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪। দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এরপর অবরোধকারীরা তাঁতিবাজার মোড় ছেড়ে দিয়ে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আজকের মতো আন্দোলন শেষ করেন।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, আমরা সংস্কার না সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
কোটা পুনর্বহাল : বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ