‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে প্রতারণার মাধ্যমে বাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার সাংবাদিকদের দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন। এরইমধ্যে কমিশন মামলার অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৩ সালে গাজীপুরে বড় একটি আবাসন প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের কথা বলে ‘ভালো লভ্যাংশ’ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বন্ড ইস্যু করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড। ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে বন্ডটি বাজারে ছাড়ে তারা এবং এর মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
নাম ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ হলেও এটি আইএফআইসি ব্যাংকের নয়। ব্যাংকটি কেবল বন্ডটির গ্যারান্টার। তবে প্রচারে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন এটি আইএফআইসি ব্যাংকই ইস্যু করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অংশীদার এবং আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। ফলে বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন ওঠে।
২০২৩ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের কোনো ফ্ল্যাট নির্মাণ বা প্লট উন্নয়নের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা বন্ড ইস্যু করে এবং আইএফআইসি ব্যাংক গ্যারান্টার হয়। বিজ্ঞাপনে আইএফআইসি ব্যাংকের নাম বড় করে লেখা হলেও শ্রীপুর টাউনশিপের নাম ছোট করে লেখা হয়, যা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্ডের নিরাপত্তা হিসেবে দেখানো জমির প্রকৃত মূল্য ৮৭ কোটি টাকা হলেও তা ১০২০ কোটি টাকা দেখানো হয়। বাজার থেকে তোলা অর্থের মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) রাখা হয় সুদ পরিশোধের জন্য এবং বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ সালমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ওই অর্থ সন্দেহজনক লেনদেন ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাত ও মানি লন্ডারিং করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করে এবং মর্টগেজ সম্পত্তির যথাযথ যাচাই না করেই অতিমূল্যায়নের ভিত্তিতে বন্ড ইস্যু করেন। ফলে জনগণের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান, পরিচালক তিলাত শাহরিন, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এআরএম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, রাবেয়া জামালী, গোলাম মোস্তফা ও মো. জাফর ইকবাল।
এছাড়া বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এবং সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. আবদুল হালিমকেও মামলার আসামি করা হচ্ছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, হেড অব লোন পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট শাহ মো. মঈনউদ্দিন, চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল) মো. রফিকুল ইসলাম, চিফ বিজনেস অফিসার (কর্পোরেট) গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, চিফ অব আইটি মো. নুরুল হাসনাত, চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মো. শাহিন উদ্দিনের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে।
ধানমন্ডি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও এফভিপি নাজিমুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী, রিলেশনশিপস ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও নিমাই কুমার সাহা, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্রাঞ্চ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা এবং সিলভিয়া চৌধুরীও আসামির তালিকায় রয়েছেন।
তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে।
দুদক বলছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিআইবি প্রতিবেদন ছাড়াই এবং প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তির সঠিক পরিদর্শন বা মূল্য নির্ধারণ না করেই ৮৭ কোটি টাকার জমিকে কৃত্রিমভাবে ১০২০ কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে বন্ড ইস্যু করেন। এই বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সদ্য নিবন্ধিত ও অনভিজ্ঞ শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের নামে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়।
এই অর্থ কোম্পানিটির চলতি হিসাবে জমা হওয়ার পর ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করা হয় এবং বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে নগদে উত্তোলন ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করা হয় বলে দুদক জানিয়েছে।
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে প্রতারণার মাধ্যমে বাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার সাংবাদিকদের দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন। এরইমধ্যে কমিশন মামলার অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৩ সালে গাজীপুরে বড় একটি আবাসন প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের কথা বলে ‘ভালো লভ্যাংশ’ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বন্ড ইস্যু করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড। ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে বন্ডটি বাজারে ছাড়ে তারা এবং এর মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
নাম ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ হলেও এটি আইএফআইসি ব্যাংকের নয়। ব্যাংকটি কেবল বন্ডটির গ্যারান্টার। তবে প্রচারে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন এটি আইএফআইসি ব্যাংকই ইস্যু করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অংশীদার এবং আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। ফলে বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন ওঠে।
২০২৩ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের কোনো ফ্ল্যাট নির্মাণ বা প্লট উন্নয়নের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা বন্ড ইস্যু করে এবং আইএফআইসি ব্যাংক গ্যারান্টার হয়। বিজ্ঞাপনে আইএফআইসি ব্যাংকের নাম বড় করে লেখা হলেও শ্রীপুর টাউনশিপের নাম ছোট করে লেখা হয়, যা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্ডের নিরাপত্তা হিসেবে দেখানো জমির প্রকৃত মূল্য ৮৭ কোটি টাকা হলেও তা ১০২০ কোটি টাকা দেখানো হয়। বাজার থেকে তোলা অর্থের মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) রাখা হয় সুদ পরিশোধের জন্য এবং বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ সালমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ওই অর্থ সন্দেহজনক লেনদেন ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাত ও মানি লন্ডারিং করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করে এবং মর্টগেজ সম্পত্তির যথাযথ যাচাই না করেই অতিমূল্যায়নের ভিত্তিতে বন্ড ইস্যু করেন। ফলে জনগণের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান, পরিচালক তিলাত শাহরিন, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এআরএম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, রাবেয়া জামালী, গোলাম মোস্তফা ও মো. জাফর ইকবাল।
এছাড়া বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এবং সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. আবদুল হালিমকেও মামলার আসামি করা হচ্ছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, হেড অব লোন পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট শাহ মো. মঈনউদ্দিন, চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল) মো. রফিকুল ইসলাম, চিফ বিজনেস অফিসার (কর্পোরেট) গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, চিফ অব আইটি মো. নুরুল হাসনাত, চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মো. শাহিন উদ্দিনের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে।
ধানমন্ডি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও এফভিপি নাজিমুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী, রিলেশনশিপস ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও নিমাই কুমার সাহা, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্রাঞ্চ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা এবং সিলভিয়া চৌধুরীও আসামির তালিকায় রয়েছেন।
তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে।
দুদক বলছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিআইবি প্রতিবেদন ছাড়াই এবং প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তির সঠিক পরিদর্শন বা মূল্য নির্ধারণ না করেই ৮৭ কোটি টাকার জমিকে কৃত্রিমভাবে ১০২০ কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে বন্ড ইস্যু করেন। এই বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সদ্য নিবন্ধিত ও অনভিজ্ঞ শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের নামে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়।
এই অর্থ কোম্পানিটির চলতি হিসাবে জমা হওয়ার পর ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করা হয় এবং বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে নগদে উত্তোলন ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করা হয় বলে দুদক জানিয়েছে।