কোরআন অবমাননার অভিযোগে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গণপিটুনি দিয়েছে একদল ব্যক্তি। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর শনিবার রাত পৌনে ৩টার দিকে অপূর্ব পাল নামের ওই শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান। তিনি জানান, “জনতার মারধরে আহত ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
শনিবার রাতে ফেইসবুকে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অভিযোগ করা হয়—অপূর্ব পাল কোরআন অবমাননা করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর ফেইসবুক পোস্ট শেয়ার করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও তোলা হয়। এরই মধ্যে রাত ১টার দিকে অপূর্ব পালের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুব্ধ অনেকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাটারা থানা পুলিশ। প্রথমে জনতার সহায়তায় শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পুলিশ অপূর্বকে আটক করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাকে মারধর শুরু করে। জনতাকে শান্ত করার চেষ্টায় পুলিশও হামলার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ডেকে আনা হয়।
রাত আড়াইটার দিকে ভাটারা থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা তাকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু লোকজনের ভিড় ও বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। পরে ফোর্স বাড়িয়ে তাকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে।”
শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ অপূর্বকে হেফাজতে নিতে সক্ষম হয়। ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, “আমরা বিষয়টি জানার পর তার ফেইসবুক আইডিতে কোরআন অবমাননার ভিডিওর সত্যতা পেয়েছি। তবে তাকে আটক করতে গেলে উত্তেজিত জনতার বাধার মুখে পড়তে হয়।”
ওই শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে ওই বাসায় থাকতেন, তবে পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ আছেন বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, সে অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তবে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ছে, সেটি এখনো জানা যায়নি।”
এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা নাকিব হাসান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপূর্ব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী।
তিনি জানান, “অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ইসলাম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করেন এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে ক্লাস করতেন।”
আসিফ বলেন, “দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। এনএসইউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে বা টাখনুর ওপর কাপড় না পরলে বকা দিত।”
এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার একাধিকবার ঝামেলা হয়। প্রভাষক আসিফ জানান, “তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরে তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আবার পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার মাদক ও মানসিক সমস্যার সঠিক চিকিৎসা হয়নি। সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অন্যায় ও ঘৃণিত, কিন্তু এটি কোনো ষড়যন্ত্র নয়। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো।”
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
কোরআন অবমাননার অভিযোগে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গণপিটুনি দিয়েছে একদল ব্যক্তি। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর শনিবার রাত পৌনে ৩টার দিকে অপূর্ব পাল নামের ওই শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান। তিনি জানান, “জনতার মারধরে আহত ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
শনিবার রাতে ফেইসবুকে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অভিযোগ করা হয়—অপূর্ব পাল কোরআন অবমাননা করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর ফেইসবুক পোস্ট শেয়ার করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও তোলা হয়। এরই মধ্যে রাত ১টার দিকে অপূর্ব পালের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুব্ধ অনেকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাটারা থানা পুলিশ। প্রথমে জনতার সহায়তায় শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পুলিশ অপূর্বকে আটক করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাকে মারধর শুরু করে। জনতাকে শান্ত করার চেষ্টায় পুলিশও হামলার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ডেকে আনা হয়।
রাত আড়াইটার দিকে ভাটারা থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা তাকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু লোকজনের ভিড় ও বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। পরে ফোর্স বাড়িয়ে তাকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে।”
শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ অপূর্বকে হেফাজতে নিতে সক্ষম হয়। ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, “আমরা বিষয়টি জানার পর তার ফেইসবুক আইডিতে কোরআন অবমাননার ভিডিওর সত্যতা পেয়েছি। তবে তাকে আটক করতে গেলে উত্তেজিত জনতার বাধার মুখে পড়তে হয়।”
ওই শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে ওই বাসায় থাকতেন, তবে পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ আছেন বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, সে অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তবে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ছে, সেটি এখনো জানা যায়নি।”
এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা নাকিব হাসান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপূর্ব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী।
তিনি জানান, “অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ইসলাম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করেন এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে ক্লাস করতেন।”
আসিফ বলেন, “দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। এনএসইউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে বা টাখনুর ওপর কাপড় না পরলে বকা দিত।”
এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার একাধিকবার ঝামেলা হয়। প্রভাষক আসিফ জানান, “তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরে তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আবার পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার মাদক ও মানসিক সমস্যার সঠিক চিকিৎসা হয়নি। সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অন্যায় ও ঘৃণিত, কিন্তু এটি কোনো ষড়যন্ত্র নয়। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো।”