জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় অবিলম্বে একটি বাস্তবভিত্তিক জাতীয় জ্বালানিনীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ, পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় এ মুহূর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। সোমবার,(০৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’-এর সমাপনী দিনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
এদিন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি নাগরিক ইশতেহার উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তাফা।
ইশতেহারে যা আছে- নতুন জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি দমন ও চুক্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাধ্যতামূলক ব্যবহার, নতুন জীবাশ্মভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নয় ও গ্যাস অপচয় রোধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জাতীয় লক্ষ্য ও বাজেট নির্ধারণ, পরিবহন খাতে ইভি ব্যবহারে কর শুল্ক কমানো, স্মার্ট গ্রিড ও ‘সূর্যবাড়ি’ কর্মসূচি সম্প্রসারণ, ২০ লাখ নতুন সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যয়বহুল প্রযুক্তি পরিহার করে সার্কুলার গ্রিন ইকোনমি বাস্তবায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং শিল্প গড়ে তোলা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা, কৃষিজমি সুরক্ষা ও বহুমুখী ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ।
সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ন্যায্য রূপান্তর এখন আর কোনো তাত্ত্বিক ধারণা নয়, এটি জাতির জন্য একটি মৌলিক রাজনৈতিক ও অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমলাতন্ত্রের জটিল চক্রে পড়ে অনেক রাজনীতিবিদ পথ হারিয়ে ফেলেন, ফলে কথা কথাই রয়ে যায়। বৈশ্বিক প্রভাব ঠেকানো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এসব সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রকৃতির ওপর যত বেশি অত্যাচার করছি, ন্যায্য রূপান্তর থেকে আমরা ততটাই দূরে সরে যাচ্ছি। এই ভয়ংকর বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনীতি, রাষ্ট্র ও জনগণকে একসঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা ভালো কিছুর আশা করি, কিন্তু বাস্তবে এগিয়ে চলে সবচেয়ে ভয়াবহ অনিয়মের রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক ইশতেহারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটপাট বন্ধের স্পষ্ট দাবি যথাযথ বলে মনে করছি।’’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন বলেন, ‘জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ছাড়া এসব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘জ্বালানি রূপান্তর এখন কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব দিতে চাই, যেখানে মানুষ কেবল একটি অংশ। ন্যায় বলতে আমরা শুধু মানুষের মধ্যে থাকতে চাই না। অনুজীব থেকে শুরু করে প্রকৃতির সবকিছুর ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে।’’
সম্মেলনে অংশ নেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।