image

সাড়ে ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এলো কেরাণীগঞ্জের বহুতল ভবনের আগুন

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা টানা চেষ্টার পর শনিবার বিকাল ৫টা ৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের মোট ২০টি ইউনিট কাজ করে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে ব্রিফিং করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, শনিবার বিকাল ৫টা ৩৭ মিনিটে একটি মার্কেট ও আবাসিক–বাণিজ্যিক মিশ্র ভবনে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার মাত্র আট মিনিটের মধ্যে, বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে প্রায় ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং দীর্ঘ সময় পর বিকাল ৫টা ৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তিনি বলেন, এটিকে একক কোনো ভবন বলা ঠিক হবে না। এটি মোট সাতটি ভবন নিয়ে গঠিত একটি ইউ-আকৃতির কমপ্লেক্স, যেখানে সব ভবনের বেজমেন্ট একই জায়গায় সংযুক্ত। ভবনটি মিক্সড অকুপেন্সির হলেও এর ভেতরে বিপুল পরিমাণ ঝুট ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ মজুত ছিল। প্রতিটি ছোট-বড় দোকান ও গুদাম শাটার ও কলাপসিবল গেট দিয়ে বন্ধ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লেগেছে।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভবনটিতে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল, প্রায় নেই বললেই চলে। এ কারণে ফায়ার ফাইটারদের অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্রিদিং অ্যাপারেটাস ছাড়া কাজ করা একেবারেই সম্ভব ছিল না। তিনি আরও বলেন, ভবনের ভেতরে একাধিক স্থানে ব্যাকড্রাফটের ঘটনা ঘটেছে, ফলে হঠাৎ হঠাৎ আগুন ধপ করে জ্বলে উঠেছে। অনেকের মধ্যে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আতঙ্ক তৈরি হলেও আসলে এসব ঘটনা ব্যাকড্রাফটের কারণেই ঘটেছে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও ঝুটের কারণে ঘন কালো ধোঁয়া তৈরি হয়, যা পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ঝুটের স্তূপ সরানোর সময় আবারও আগুন জ্বলে উঠছিল, ফলে আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। বেজমেন্ট থেকে শুরু করে দোতলা এবং মাঝে মাঝে তিনতলা পর্যন্ত কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জানান, আগুন পুরোপুরি নির্বাপণে আনতে রোববার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কারণ বেজমেন্ট ও অন্যান্য অংশে থাকা বিপুল পরিমাণ মালামাল ধাপে ধাপে সরানো হচ্ছে। এসব মালামাল সরানো না হলে আগুনের উৎস পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কয়েকশ ছোট-বড় শাটার কাটার দিয়ে কেটে খুলতে হচ্ছে। প্রতিবার শাটার খোলার সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, যা কাজকে আরও জটিল করে তুলছে।

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কালো ধোঁয়া দেখা গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে এবং বড় কোনো দুর্যোগ ঘটার আশঙ্কা আপাতত নেই। তবে নির্বাপণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং এতে আরও সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার ফাইটারদের বারবার পরিবর্তন করে নতুন রিলিভার টিম এনে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আগুনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছেন। আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের পর তদন্ত করে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ভবনটিতে নিয়মিতভাবে অগ্নি নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টররা এর আগেও চার-পাঁচবার এখানে এসে সতর্ক করেছিলেন এবং অফিসিয়ালি দুইবার নোটিস দিয়েছিলেন। ভবন মালিককে ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানানো হয়েছিল।

ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন নির্বাপণের পর ভবনটির পূর্ণাঙ্গ জরিপ ও স্ট্রাকচারাল অডিট করা জরুরি। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন লাগায় উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ভবনের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা না করে বসবাসযোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। ঝুটের গুদামে থাকা বিপুল মালামাল অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

ভবন মালিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তবে ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টররা মালিকের ম্যানেজারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভবনটির কাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি অগ্নি নিরাপত্তার জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা বা সরঞ্জাম সেখানে ছিল না।

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেজমেন্টে দোকানের পাশাপাশি ঝুটের গোডাউন ছিল। ঝুটের স্তূপে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় এবং বেজমেন্টের সীমিত প্রবেশপথের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।

এর আগে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, জাবালে নূর টাওয়ারটি কয়েকটি স্বতন্ত্র ভবন নিয়ে গঠিত হলেও বেজমেন্ট একটি। এটি বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় গার্মেন্টস পণ্যের দোকান ও ছোট ছোট ঝুটের গোডাউন রয়েছে এবং উপরের তলাগুলোতে আবাসিক কোয়ার্টার। বেজমেন্টে প্রবেশের পথ মাত্র দুটি হওয়ায় আগুন নেভাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ দোকানের তালা ও শাটার কেটে কেটে আগুন নেভাতে হয়েছে।

দুপুরের দিকে জানানো হয়, প্রচুর ধোঁয়ার কারণে ব্রিদিং ও হ্যাজম্যাটসহ মোট ২০টি ইউনিট কাজ করছিল। এ সময় ভবনে আটকে পড়া আরও তিনজনকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত ভবনটি থেকে ৪২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুনটি একটি বেজমেন্টে শুরু হয়, যার ওপর সাতটি ভবন রয়েছে। বেজমেন্টে গোডাউন, তার ওপরে মার্কেট এবং সর্বোপরি আবাসিক অংশ থাকায় পুরো পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে ওঠে। বেজমেন্টে ঢোকার ক্ষেত্রে একদিক থেকেই মূলত প্রবেশাধিকার পাওয়া যাচ্ছিল, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

‘নগর-মহানগর’ : আরও খবর

» কেরাণীগঞ্জে বহুতল ভবনে আগুন, ১০ ঘণ্টা পেরোলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি

সম্প্রতি