ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনার কয়েক দিন আগে তার কার্যালয়ে যাওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী কবির। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় তিনি এ কথা বলেন।
শুনানি শেষে আদালত কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রসিকিউশন পুলিশের উপপরিদর্শক রুকনুজ্জামান।
এর আগে সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে র্যাব কবিরকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
রিমান্ড শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সঙ্গে কবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলটির মালিকানা সংশ্লিষ্ট এ আসামি হাদিকে হত্যাচেষ্টায় সহায়তা করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, কবির আদাবর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। প্রকাশ্য দিবালোকে যে মোটরসাইকেলে করে হাদিকে গুলি করা হয়, সেখানে কবির উপস্থিত ছিলেন বলেও তিনি দাবি করেন।
প্রসিকিউটর আরও বলেন, ফয়সাল করিম মাসুদের সঙ্গে কবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কবিরই ফয়সালকে সঙ্গে নিয়ে হাদির বাসায় যান। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কবির আত্মগোপনে চলে যান। তিনি হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছেন এবং মোটরসাইকেলটির মালিকও কবির। অস্ত্র উদ্ধার ও এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে সর্বোচ্চ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন জানান তিনি।
কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আদালত তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি উবার অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি চালাতেন এবং মাঝেমধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদ তাকে ফোন করতেন। কাছাকাছি থাকলে তিনি তার সঙ্গে যেতেন। কবির জানান, ফয়সাল তাকে গুলশানসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রায় ১৮ থেকে ২০ দিন আগে ফয়সাল ফোন করে তাকে হাদির অফিসে নিয়ে যেতে বলেন এবং জানান, সেখানে গেলে উপকার হবে। পরে তিনি ফয়সালকে নিয়ে হাদির অফিসে যান।
মোটরসাইকেলের বিষয়ে কবির আদালতকে বলেন, মোটরসাইকেলটি তার বন্ধু মাউনুদ্দিন ইসলাম শুভ কিনেছেন। তারা দুজন একই দিনে গাড়ি কিনতে যান এবং শুভ তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মোটরসাইকেলটি কেনেন। গাড়ির সব কাগজপত্র শুভর নামে থাকলেও তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়। গাড়ি কেনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন বলেও কবির জানান।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এ মামলায় সোমবার আদালত প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড দেন। তার আগের দিন রোববার মোটরসাইকেল মালিক মো. আব্দুল হান্নানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের উদ্দেশ্যে বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।
চলন্ত একটি রিকশায় থাকা অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা এক আততায়ী গুলি চালায়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে অস্ত্রোপচারের পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার অবস্থাকে ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’ বলে জানান।
পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শরীফ ওসমান বিন হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।