image

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর ও বিচারপতির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে একাধিক বিচারপতি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও তর্কাতর্কি হয়েছে। শুনানির একপর্যায়ে বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ চিফ প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ করে বলেন, কথায় কথায় দাঁড়িয়ে যান কেন? এছাড়া, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষের আইনজীবী তাবারক হোসেনের সঙ্গেও বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এ শুনানিতে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম। এদিন র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বর্তমান ও সাবেক ১২ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়।

অভিযোগ গঠনের পর, গ্রেপ্তার সাত সেনা কর্মকর্তার পক্ষের আইনজীবী তাবারক হোসেন প্রসিকিউশন কর্তৃক সরবরাহকৃত বিপুল নথি পর্যালোচনা, সাক্ষীদের বক্তব্য অধ্যয়ন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য সূচনা বক্তব্য শুরুর আগে তিন মাস সময় চান। তিনি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগের আদেশ লাভের পর পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার কথাও বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া তার মক্কেলদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এ সময় বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে রিভিউ আবেদনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করলে, সাথে সাথেই চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের কথা শুনে অর্ডার দিতে হবে। উনি (তাবারক হোসেন) রিভিউ করবেন, সে জন্য কি ট্রায়াল বসে থাকবে?

চিফ প্রসিকিউটরের এই আচরণ ও মন্তব্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনি যেভাবে কথা বলেন, আদালতে এভাবে কথা বলে না। যতক্ষণ না আদেশ পাস করা হচ্ছে, আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। আমরা কথা বলব, আপনি কথা বন্ধ করবেন? আমরা অর্ডার দিয়েছি? চিফ প্রসিকিউটর আবারও তাদের কথা শুনে আদেশ দেওয়ার দাবি জানান।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার চিফ প্রসিকিউটরকে বসতে বললেও, বিচারপতি শফিউল আলম আবারও জিজ্ঞেস করেন, "আমরা আপনাকে শুনি না? আপনি কথায় কথায় দাঁড়িয়ে যান কেন?" চিফ প্রসিকিউটর জবাব দেন, "আপনি যদি অর্ডার পাস করে দেন।" বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এতে প্রত্যুত্তর দেন যে, প্রসিকিউশনের কথা না শুনে তারা কখনোই আদেশ পাস করেননি।

শুনানির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করে যে, একজন কথা শেষ না করতেই আরেকজন দাঁড়িয়ে যাওয়া অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং ভবিষ্যতে যেন এমনটি না ঘটে সে আশা প্রকাশ করে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত (ড্র্যাগ) করার চেষ্টার অভিযোগ করেন। তিনি ট্রাইব্যুনাল আইনে বর্ণিত ন্যূনতম তিন সপ্তাহের বেশি সময় না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখান এবং মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "সাক্ষীদের হত্যা করা হচ্ছে। চাকু মারা হচ্ছে। মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ট্রায়াল করতে হচ্ছে। এর (বেশি সময় চাওয়ার) উদ্দেশ্য ভালো না। যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে; যদি সাক্ষীকে মেরে ফেলে, তাহলে বিচার করবেন কীভাবে?" ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জবাব দেন, তারা সেনাবাহিনীর বিচার করছেন না এবং বিচার দীর্ঘায়িতও করবেন না।

চিফ প্রসিকিউটর যখন দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তখন পাশেই দাঁড়িয়ে আইনজীবী তাবারক হোসেন জবাব দেন যে, তারা বিচার দীর্ঘায়িত করতে চান না, বরং প্রয়োজনীয় সময় চান। তিনি অভিযোগ করেন যে চিফ প্রসিকিউটর তাড়াহুড়ো করে বিচার করতে চাইছেন। এতে চিফ প্রসিকিউটর তাবারক হোসেনকে উদ্দেশ করে বলেন, "আপনি বসেন। আপনি এখানে কথা বলছেন কেন?" আইনজীবী তাবারক হোসেন এরপর বলেন, তিনি ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়েই কথা বলেছেন এবং চিফ প্রসিকিউটর তার বয়সেরও সম্মান রাখেননি।

ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সূচনা বক্তব্য শুরুর আগে প্রস্তুতির জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়ার আদেশ দেয়।

পরবর্তীতে মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শতাধিক ব্যক্তিকে গুম করে হত্যার অভিযোগের পৃথক মামলার শুনানি হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৪ জানুয়ারি তারিখ চাওয়া হলে, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ হাসিমুখে বলেন, তাদের যেন হ্যাপি নিউ ইয়ার পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, সে জন্যই তারা এক সপ্তাহ মামলা রাখেননি। এসময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, "কখন হ্যাপি নিউ ইয়ারের জায়গায় হ্যাপি জানাজা হয়ে যায়!" শেষে তিনি ট্রাইব্যুনালকে ইংরেজি নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।

‘নগর-মহানগর’ : আরও খবর

সম্প্রতি