চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো গোল্ডেন সিল্ক রোড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে দুইদেশের বন্ধুত্ব ফুটিয়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার পেলেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ২৯ জন সাংবাদিক।
শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বুধবার এক অনুষ্ঠানে প্রতিটি বিভাগে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে এক লাখ টাকা ও সনদ, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দুজনকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও সনদ এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজনের প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা ও সনদ দেওয়া হয়। মোট পাঁচটি শ্রেণিতে ২৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেং, চায়না মিডিয়া গ্রুপ – সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী, চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস এসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জনাব হান খুন, আপন ফ্রেন্ডশিপ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জনাব চুয়াং লিফং। এ ছাড়া প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশের সরকারী সংবাদ সংস্থা বাসস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনরা।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, গোল্ডেন সিল্ক রোড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস কেবল সেরা কাজের স্বীকৃতি নয়, বরং দুই দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। তথ্য ও সংস্কৃতির আদান-প্রদান আমাদের দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে আরও গভীর করবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ চর্চার মাধ্যমে আমাদের সাংবাদিকরা দুই দেশের উন্নয়ন ও জনজীবনের গল্পগুলো বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন।
পুরস্কার পেলেন যারা
৫টি ক্যাটাগরিতে জমা পড়া মনোনয়ন থেকে বছরের সেরা ২৯টি প্রতিবেদনকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোকে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়।
অর্থনীতি ও প্রযুক্তি বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন ডেইলি সানের মো. মুনির হোসেন, দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের গোলাম মওলা এবং রূপালী বাংলাদেশের আব্দুর রহিম। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ডেইলি সানের রফিকুল ইসলাম, ঢাকা পোস্টের আব্দুর রহমান এবং ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের আসজাদুল কিবরিয়া।
খেলাধুলা ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক ভোরের কাগজের এস এম নাজমুল হক ইমন। দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের তানজিম আহমেদ, সকাল সন্ধ্যার রাহেনুর ইসলাম। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের জোবায়ের হোসেন, স্টার নিউজের ফাসিউর রহমান সিফাত এবং দৈনিক ইনকিলাবের কামরুল হাসান খান।
ভিজ্যুয়ালস শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন বিডিনিউজের মাহমুদ জামান অভি। দ্বিতীয় হয়েছেন সারাবাংলার হাবিবুর রহমান। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন আজকের পত্রিকার জাহিদুল ইসলাম সজল, নাগরিক প্রতিদিনের ওলিদ ইবনে শাহ এবং বিডিনিউজের মাসুম বিল্লাহ।
জেনারেল নিউজ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন রূপালী বাংলাদেশের সেলিম আহমেদ। দ্বিতীয় হয়েছেন ডেইলি সানের মৌসুমি ইসলাম এবং কালের কণ্ঠের মোহাম্মদ শরীফুল আলম। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জাগো নিউজের মফিজুল সাদিক, বিডিনিউজের জেসমিন মলি এবং যমুনা টিভির সালাউদ্দিন আহমেদ।
মিডিয়া ইনোভেশন বিভাগ প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন আরটিভির মো. ইমরুল হাসান। যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রাশেদুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট টিভির ওয়ালিউল আলম বিশ্বাস এবং একই রিপোর্টের জন্য যৌথভাবে বাংলা ট্রিবিউনের আরশাদ আলী ও সুদীপ্ত নুরুল কবীর। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের আরিফুল ইসলাম আরমান।
অনুষ্ঠানে দীপ্ত টিভি, চ্যানেল ২৪, আরটিভি, বাংলাভিশন এবং রেডিও টুডেকে আউটস্ট্যান্ডিং পার্টনারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন সিএমজি বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।
এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ডিপ্লোম্যাটিক কারেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিনে-জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশ, টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশন, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ চায়না আপন মিডিয়া ক্লাবকে আউটস্ট্যান্ডিং অর্গানাইজেশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
চীনা দূতাবাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগ। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল আপন ফ্রেন্ডশিপ এক্সচেঞ্জ সেন্টার, চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ, ওভারসিজ চায়নিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ চায়না আপন মিডিয়া ক্লাব, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ডিক্যাব, ইআরএফ, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিনে-জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
জমকালো এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও চীনের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ঋতু রাজ, কানিজ খন্দকার মিতু, সাজিয়া সুলতানা পুতুল, লুইপা, ওয়েন্ডি লিউ এবং জেসন ওয়াং সংগীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া আগত অতিথিদের জন্য ছিল র্যাফেল ড্র। পুরস্কার হিসেবে ছিল চীনের জনপ্রিয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনরের স্মার্টফোন।
অনুষ্ঠানে সমপানী বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, গোল্ডেন সিল্ক রোড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসে আপনাদের সাথে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি সকল বিজয়ী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। একইসাথে দুই দেশের সেই সকল মিডিয়া গ্রুপ ও বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই যারা দীর্ঘকাল ধরে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সমর্থন দিয়ে আসছেন। মিডিয়া বিনিময় বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শেখার সুযোগ তৈরি করে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংবাদ আদান-প্রদানের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। চীন-বাংলাদেশ মিডিয়া সহযোগিতা মানুষের জীবনযাত্রার প্রকৃত উন্নতি এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, এই বছর চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর এবং চীন-বাংলাদেশ জনবিনিময় বর্ষ। আগামী বছর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ বাংলাদেশের যোগদানের ১০ বছর পূর্ণ হবে। চীন বর্তমানে তার ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে এবং ১৫তম পরিকল্পনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন জনবান্ধব ও উচ্চ-মানের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, পরিবেশবান্ধব রূপান্তর এবং সবার জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে চীন একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা ও পথ দেখাবে। আমি আশা করি, উভয় দেশের মিডিয়া চীনের উন্নয়নের গল্প এবং চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের জীবন্ত কাহিনীগুলো আরও বেশি করে তুলে ধরবে। আসুন আমরা এই নতুন গোল্ডেন সিল্ক রোড-এর বন্ধুত্বের নির্মাতা হিসেবে একসাথে কাজ করি।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই সুবর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে দুই দেশের হৃদ্যতাকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে গোল্ডেন সিল্ক রোড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। মূলত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের চোখ দিয়ে এই সম্পর্কের গভীরতা ও বহুমাত্রিকতাকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সারাদেশ: জয়পুরহাটে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সারাদেশ: পাঁচবিবিতে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ
সারাদেশ: চুনারুঘাটে দুইমণ গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১