ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে বিএনপি নেতা তারেক রহমান ওই এলাকা ত্যাগ করার পর আবারও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মঞ্চের নেতাকর্মীরা। শনিবার, (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর সাড়ে ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ‘এ লড়াইয়ে জিতবে কারা, হাদির সৈনিকেরা’, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ’, ‘শাহবাগ না ইনসাফ, ইনসাফ-ইনসাফ’, ‘তুমিও জানো, আমিও জানি, শাহবাগীরা হিন্দুস্তানি’সহ নানা স্লোগান দেন।
বিএনপি নেতা তারেক রহমান যাতে নির্বিঘে্নে ওসমান হাদির কবরে যেতে পারেন, সেজন্য এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগ মোড় ছেড়ে আজিজ সুপারমার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গিয়ে ফুল দিয়ে হাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারেক রহমান। সেখানে মোনাজাত শেষে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ১১টা ৪০ মিনিটে ভোটার হতে নির্বাচন ভবনের পথে রওনা হন তিনি। হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে গত শুক্রবার দুপুরে শাহবাগ অবরোধ করেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা। এ সময় শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের সন্ধ্যার পর ঘোষণা দেন, হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন। এরপর সারা রাত শাহবাগে অবস্থান নিয়ে তাদের বিক্ষোভ চলে। ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিমকে হাজির করার দাবি জানানো হয় সেখান থেকে।
গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন, যা হাদির মৃত্যুর পর হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির, মা মোসা. হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বন্ধু মারিয়া আক্তার লিমা, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে কথিত সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। তাদের মধ্যে হুমায়ুন ও হাসি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যু হয়। গত শনিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তাকে কবি নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়েছে।