রোববার এনআইডি পাবেন, আশা ইসি সচিবের
এনআইডি কার্ড পেতে এবং ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আঙুলের ছাপ, আইরিশের প্রতিচ্ছবি আর বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মেয়ে জাইমা রহমানও ভোটার হওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন।
শনিবার,(২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর ১টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে গিয়ে তারেক রহমান ভোটার হওয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
এর আগে আধা ঘণ্টা আগে ওই ভবনে প্রবেশ করেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। একইভাবে দশ আঙুলের ছাপ, আইরিশের প্রতিচ্ছবি (চোখের মণির ছাপ) আর বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি তোলা, ডিজিটাল স্বাক্ষর) দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার এবং আসন্ন নির্বাচনে ভোটার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সারেন জাইমা।
শনিবার সব আনুষ্ঠানিকতা সারলেও তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে রোববার নির্বাচন কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তারেক রহমান ভোটার নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নির্বাচন ভবন ত্যাগ করার পর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘জনাব তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপি এবং উনার মেয়ে জাইমা রহমান উনারা দুজনে আজকে (শনিবার) ভোটার নিবন্ধন ফর্ম জমা দিয়ে এখানে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। ভোটার তালিকা আইনের ২০০৯-এর-১৫ ধারা অনুযায়ী কমিশনের এখতিয়ার আছে যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক বা ভোটার হওয়ার সক্ষম ব্যক্তিকে ভোটার করতে পারেন।
ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ধাপের ব্যাখ্যায় আখতার আহমেদ বলেন, ‘এটা আজকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া যেটা আছে, সেটা আমাদের বলা হয় যে- ফর্ম ২। ওই ফর্ম ফিলাপ করে উনারা ছবি তুলেছেন, বায়োমেট্রিক দিয়েছেন এবং দিয়ে উনারা আবেদন করেছেন যে উনাদের যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন আগামীকাল (রোববার) কমিশনে এটা পেশ করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পরে উনাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা হবে।’
এ সিদ্ধান্ত নিতে পুরো কমিশন বৈঠকে বসবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘নিবন্ধনটা চলমান প্রক্রিয়া। নিবন্ধন কমপ্লিট করেছেন তিনি। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, যেটা আগামী আপনার ১২-ই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত লাগবে। কমিশন তো আছেন সবাই এখানে। আপনারা জানেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত- কমিশনের অনুমতি দুইভাবে পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে আনুষ্ঠানিক সভা করে, আরেকটা হচ্ছে নথির মাধ্যমে। এখন কমিশন যেটা যে পদ্ধতিতে অনুমোদন করবেন সেটা; আমরা নথি উপস্থাপন করবো নিষ্পত্তির জন্য। কমিশন যদি বলেন যে সভা করবেন, তাহলে সভা করবেন। আর যদি মনে হয় যে, নথিতে প্রক্রিয়াজাত করে দেবেন, দেবেন। এটা তো কমিশনের এখতিয়ার। আমার দায়িত্বটা হচ্ছে কমিশন পর্যন্ত পৌঁছানো। এটা আগামীকাল (রোববার) করবো।”
তারেক রহমানের এনআইডি পেতে ‘সর্বোচ্চ একদিন লাগবে’ বলে জানিয়েছেন এনআইডি উইংয়ের ডিজি এ এস এম হুমায়ুন কবীর। শনিবার ইটিআই ভবনের নিচ তলায় নিবন্ধন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফিঙ্গার দেয়ার পর থেকে সর্বনিম্ন ৭ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি পাবেন তারেক রহমান। তবে সঠিক সময় আগ থেকে বলার সুযোগ নাই।’
এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তারেক রহমান তখন কারাগারে ছিলেন।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পেয়ে সেদিনই তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে লন্ডনে চলে যান। শুরু হয় নির্বাসিত জীবন। এরপর টানা ১৭ বছরের বেশি সময় তার দেশে ফেরা হয়নি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড, কোনোটিই তিনি পাননি।
তবে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ভোটার হয়েছে। শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দেশে এসে এনআইডির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সারেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রার্থী হবেন তারেক রহমান। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর (আগামীকাল)।
মনোনয়নপত্র জার সময় তারেক রহমানকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। প্রার্থী হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে। এই প্রক্রিয়া সারতেই গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে শনিবার তিনি ইসিতে গেলেন।