নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) অভিযোগ করেছে, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর অনৈতিক চাহিদা পূরণে ঢাকা মহানগরীর ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধন ও ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। শনিবার,(২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিআইপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে ড্যাপের সংশোধন ও ইমারত বিধিমালার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানায় সংগঠনটি।
‘ঢাকা মহানগরীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধন এবং ইমারত বিধিমালা অনুমোদন: ঢাকার ক্রমবর্ধমান বাসযোগ্যতার সংকট’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিআইপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ২০২২ সালে ড্যাপ অনুমোদনের তিন বছরের মাথায় আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে দুবার সংশোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সম্প্রতি অনুমোদিত ইমারত বিধিমালায় আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে সরকার রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব ও আবাসন ইউনিট বাড়িয়েছে। এটা অপরিণামদর্শী, ঢাকার বাসযোগ্যতাসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকি।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দুবার ড্যাপ সংশোধনের কারণে ঢাকায় উঁচু ভবনের সংখ্যা বাড়বে। স্থবির হয়ে যাওয়া শহরে পরিবহন ও পরিষেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবার ওপর অসহনীয় চাপ পড়বে। এই চাপ বহন করার সক্ষমতা ঢাকা শহরের নেই। এ ধরনের উদ্যোগ ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্যতাকে একেবারে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।
আগের ড্যাপে যে এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটিই বেশি ছিল। এখন সেটি আবারও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ঢাকার আশপাশের এলাকা উঁচু ভবনের বস্তিতে বা আরবান স্লামে পরিণত হবে বলেন আদিল মুহাম্মদ খান।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাকে বাঁচাতে বিআইপির পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ড্যাপের জনঘনত্ব ও এফএআরসংক্রান্ত সংশোধন প্রক্রিয়ায় শহরের বাসযোগ্যতা এবং অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধাদি আর পরিবেশের ধারণক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া। মাটির জিওলজিক্যাল এবং হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য, সিসমিক মাইক্রো জোনেশন, লিকুইফেকশন প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগ সহনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক ভবনের উচ্চতা, এফএআর, জনঘনত্ব নির্ধারণ করা।
বিআইপি বলছে, ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালায় এফএআর, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদনের যথাযথ মান নির্ধারণ করতে হবে; যেন ভবনগুলোর অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রবাহের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর বসবাস নিশ্চিত করা যায়।
সংগঠনটির প্রস্তাবনা রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডির মতো যেসব এলাকায় আবাসিক প্লটে উচ্চ এফএআর মান দেয়া হয়েছে, সেগুলোকে কমিয়ে গ্রহণযোগ্য মানে নামিয়ে আনা। ঢাকার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এবং ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।