কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: তিন নারীসহ ৬ জন রিমান্ডে

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর তিন নারীসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার, (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডের আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮), তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (৩০), আসমানী খাতুন (৩৪), শাহীন ওরফে আবু বকর (৩২), আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন (৫০) ও শাফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)। তাদের মধ্যে নারীদের ৩ দিন করে এবং পুরুষদের ৭ দিন করে রিমান্ড দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের এসব তথ্য দেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই জহিরুল ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামি শাহিন, আমিনুর ও শাফিয়ারের ১০ দিন এবং আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুনের ৫ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এসময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিদের কার সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চান।

তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আল আমিন ঘটনার আগের দিন সারারাত বোমা তৈরি করে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটা তছনছ হয়ে যায়। আছিয়া আল-আমিনের স্ত্রী। আর আছিয়ার ভাবি আসমা। ‘অপর আসামি আসমানী একসময় জঙ্গি কর্মকা-ে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাত মাস আগে জঙ্গি মামলায় জামিন পান। শাহিনের বিরুদ্ধে চারটা মামলা হয় জঙ্গি সংশ্লিষ্টার অভিযোগে। অপর আসামিরা তাদের সহযোগী।’

আসামি আসমানীর পক্ষে তার আইনজীবী গাউছুর রহমান সিরাজী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আগে চারটা মামলা হয়। তবে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় দুই মামলায় ইতোমধ্যে খালাস পেয়েছেন। তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাকে রিমান্ডে নেয়ার মতো কোনো উপাদান নেই।

‘তিনি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পৃক্ত নন। সম্পৃক্ত থাকলে দুই মামলায় খালাস পেতেন না। তার অপরাধ শুধু পূর্বের মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে প্রয়োজনে জেলগেইটে জিজ্ঞাসা করার প্রার্থনা করছি।’ অপর আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান আছিয়া।

বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার ভাই-ভাবি, আত্মীয় কেউ কোনোভাবে জড়িত না। আমার স্বামী আল আমিন দ্বিতীয়বার জেলে গেলে আমার ভাই আমাকে মাদ্রাসাটা করে দেয়। যেন আমি টিকে থাকতে পারি। আল আমিন ২০২২ সালের শেষের দিকে জেল থেকে বের হয়। এসে বলে, সে ভালো হয়ে গেছে। ফোনও চালাতো না। এক/দেড় বছর ভালো ছিল।

‘আল আমিনের বিষয়ে অনেক কিছু জানতাম না। জানলে আগেই (পুলিশকে) জানাতাম। কারণ সে কিছু করলে আমরাই ফেঁসে যাবো এই ভয়ে। সে আমাকে অনেক নির্যাতন করতো। ফোন চেক করলে বুঝতে পারবেন। সে অপরাধ করতে পারে। আমরা তো অপরাধ করিনি।’

এ সময় আদালত তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন আছে। তদন্তের দরকারে রিমান্ড চেয়েছে। রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করবেন।’ পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

এর আগে গতকাল শনিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জে গত শুক্রবার সকাল ১০টার পর উম্মাল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই মাদ্রাসায় ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়। এতে মাদ্রাসার দুটি কক্ষের পাশের দেয়াল ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিন শেখ (৩২), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে উমায়ের (১০) ও আব্দুল্লাহ (৭) আহত হন। আহত স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে রেখেই আল আমিন পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আহতদের মধ্যে উমায়েরের শরীরে পোড়া ক্ষতের পাশাপাশি ভবন ধসের জখম চিহ্ন থাকার কথা বলেছে পুলিশ। বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়া মাদ্রাসাটি থেকে বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের তথ্য দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের থানার এসআই মো. লিটন সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

‘নগর-মহানগর’ : আরও খবর

সম্প্রতি