রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করেছে একদল লোক। সোমবার,(২৯ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাম না জানা একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় বলে তেজগাঁও থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা জানান। তিনি বলেন, ‘কিচেন মার্কেটের’ ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিল। তখন একদল অজ্ঞাতনামা লোক হামলা চালায়। ‘এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে চাঁদাবাজি শুরু হওয়ায় তারা প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিলেন। মানববন্ধন কর্মসূচি শুরুর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে তাদের ওপর হামলা করা হয়। ব্যবসায়ীরা হামলায় যুবদলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ করলেও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘এখনও কেউ আমাদের কাছে হতাহতের রিপোর্ট করেনি, অভিযোগও করেনি।’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তেজগাঁও থানা যুবদলের বহিষ্কৃত সদস্য সচিব আবদুর রহমানের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আবদুর রহমান ও তার অনুসারীরা কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন মার্কেট থেকে চাঁদাবাজি করে আসছেন। এর প্রতিবাদেই এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা হয়। এতে কয়েকজন ব্যবসায়ী আহত হন। পরে ব্যবসায়ীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করেন।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কিচেন মার্কেটের সামনে সহস্রাধিক ব্যবসায়ী মানববন্ধনে অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে একদল লোক এসে তাদের ওপর হামলা চালান। এতে মানববন্ধনে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর ব্যবসায়ীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে কিচেন মার্কেটের সামনে এলে হামলাকারী ব্যক্তিরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। তারপর ব্যবসায়ীরা কিচেন মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার জেরে প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ সময় কিচেন মার্কেটের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অবস্থান করছিল।
কারওয়ান বাজারের ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কারওয়ান বাজার সুপারমার্কেট, কিচেন মার্কেট, ১ ও ২ নম্বর সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ীরা আবদুর রহমান ও তার সহযোগীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন দোকানভিত্তিক মাসিক ও দৈনিক হারে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। এমনকি বরফ বিক্রেতাদের কাছ থেকেও অর্থ আদায় করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার তিনটি মামলা করা হয়েছে।
বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চাঁদাবাজির প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ বহিরাগত কিছু লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে অনেক ব্যবসায়ী আহত হন। মানববন্ধনের বিষয়টি আগে থেকেই থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছিল। তারপরও হামলা হলো।’ বেলায়েত হোসেন বলেন, আবদুর রহমান তেজগাঁও থানা যুবদলের সদস্য সচিব ছিলেন, তবে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে তিনি এখনও চাঁদাবাজি করছেন।
ব্যবসায়ীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ বলেন, যারা মানববন্ধন করেছেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যবসায়ীদের কমিটিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে। সেখানে আরেকটি গ্রুপ হামলা করেছে। আর আবদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছিল গণমাধ্যমে একটি বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে। এটা তখন ভুলবোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে হয়েছিল।
পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ফজলুল করিম বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। এখানে মানববন্ধনে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষ দাঁড়িয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে একটি পক্ষ এসে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, মানববন্ধন শেষ হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন, তাদের থানায় এসে মামলা করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।