alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

আখতারুজ্জামান হোতা, শিমুল বাস্তবায়নকারী : ডিবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার হোতা। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের মাস খানেক আগেই ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয়।

হত্যার পর সংসদ সদস্যের শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন হয়।

আরও পড়ুন : আখতারুজ্জামান, শিমুল-এরা কারা

ডিবি কর্মকর্তা জানান, ঘটনা তদন্তে ভারতের আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের একটি তদন্ত দল ঢাকায় এসেছে।

আনার খুনের ঘটনায় ডিবি হেফাজতে থাকা তিন সন্দেহভাজনকে ওই তদন্ত দল জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানান ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন। তার সঙ্গে ছিলেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে।

হারুন বলেন, ‘এক মাস আগে থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসায় একাধিকবার বসে তারা এই হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে চায়নি, ধরা পড়ার ভয়ে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ভারতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা আবার চলে আসবে, সে মোতাবেক তারা কাজ করেছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আমানুল্লাহর প্রকৃত নাম শিমুল।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডস্থলে ছিলেন আখতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। আমানউল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এর বাইরেও এ ঘটনায় ভারতীয় কিছু লোকজন টাকার বিনিময়ে হত্যাকারীদের জন্য কাজ করেন।

একদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছিলেন, কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল যে অ্যাপার্টমেন্টে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে, সেই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান।

এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।

ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলছেন, “তারা গুলশান ও বসুন্ধরায় মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের বাসায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করলেও তারা এখানে এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে চায়নি। তাদের মনে ভয় ছিল- ঢাকার ডিবির সক্ষমতা নিয়ে; কারণ তারা জানে, ডিবি আগের হত্যাকাণ্ডগুলো কীভাবে উদ্ঘাটন করেছে।”

সংসদ সদস্য আনারকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ২৫ এপ্রিল কলকাতার সেই বাসাটি ভাড়া করে। চুক্তি হয় তারা ৩০ এপ্রিল সেই বাসায় উঠবে। সেই মোতাবেক আখতারুজ্জামান শাহীন, আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি ৩০ মে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে কোলকাতা গিয়ে সেই বাসায় ওঠেন।

“তারা বোঝাতে চেয়েছিল যে এখানে পরিবার থাকবে। সেখানে গিয়ে তারা আরও দুজনকে হায়ার করে। এই বাসাতে আসা-যাওয়া করবে তারা। এর মধ্যে একজন জিহাদ অথবা জাহিদ, আরেকজন সিয়াম। আর মাস্টারমাইন্ড শাহীন কোন গাড়িটা- কোথায় ব্যবহার হবে, কাকে কতো টাকা দিতে হবে, কারা হত্যায় থাকবে- সবকিছু ঠিকঠাক করে ১০ মে বাংলাদেশে আসেন।’

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, ‘দুই মাস ধরে তারা খেয়াল রাখছিল কোন সময় সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় যাবেন, তিনি মাঝে মধ্যেই কলকাতা যান। গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন এমপি আনার। তার আগে থেকেই শাহীনরা জানেন যে এমপি আনার ১২ তারিখ যাবেন। ১৩ মে এই চক্রটির ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি একটি সাদা গাড়িতে এমপি আনারকে রিসিভ করে। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা আরেকটি গাড়িতে ওঠে। সেই গাড়িতে এমপি আনার ও ফয়সাল ছাড়াও আমানউল্লাহ ছিলেন।’

রাজা নামের একজন গাড়িটি চালাচ্ছিলেন জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক রাজা এসব কিছু জানে না, সে জাস্ট ক্যারিয়ার। ওই বাসায় যাওয়ার পর আরেক ব্যক্তি মুস্তাফিজও সেই বাসায় ঢোকেন। ১৩ মে ২টা ৫১ মিনিটে তারা সবাই ঢুকেছে।

‘আগে থেকেই ভেতরে ছিল জিহাদ ও সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তারা হত্যার এক ঘণ্টা পরে একজন- এমপি আনারের মোবাইলটা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় কল করেন; মানে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন বলেন, ‘তাদের পরিকল্পনা ছিল বিদেশের মাটিতে তারা হত্যা করবে এবং লাশটাকে এমনভাবে খুন করবে যাতে কেউ কোনোদিন না পায়। এরপর তারা লাশটাকে ছোট ছোট টুকরো করে ফেলেছে। হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলেছে।

‘তারা ওই হাড়-মাংসগুলোর সঙ্গে হলুদ ও মসলা মিশিয়ে দিয়েছিল; যাতে পথে কেউ ধরলে- তারা বলতে পারে যে, এটা বাজার থেকে কেনা মাংস। উদ্দেশ্য ছিল এমনভাবেই গুম করা হবে যাতে কেউ কোনোদিন তার কোনো অস্তিত্ব না পায়।’

ঘটনার বীভৎসতার বর্ণনা দিয়ে হারুন বলেন, ‘১৩ মে আমানউল্লাহ, জিহাদ ও সিয়াম দুটো স্যুটকেসে করে সেই দেহের টুকরোগুলো ভরে পাবলিক টয়লেটের সামনে দাঁড়ানো একটি গাড়িতে ওঠে। সেই গাড়ির ড্রাইভারও তেমন কিছু জানতো না।

‘এরপর সিয়াম ও জিহাদকে স্যুটকেসসহ বিদায় করে আমানউল্লাহ আবার বাসায় চলে আসে। পরেরদিন আমানউল্লাহসহ পরের দুইজন বাকি মাংসগুলোকে পলিথিনে পেঁচিয়ে ব্যাগে ভরে তারাও বের হয়ে যায়।’

ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, ‘১৫ মে আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান বাংলাদেশে আসেন। ১৬ মে মুস্তাফিজ চলে আসে। ওরা সবাই যখন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে, তারপরে আখতারুজ্জামান শাহীন ভিসতারা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দিল্লি যান। সেখানে দুই ঘণ্টার বিরতি শেষে তিনি কাঠমান্ডুর ফ্লাইটে চাপেন। সেখান থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন।

‘যেসব আসামিরা আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছে আমরা সব জেনেছি। তারা আমাদের কাছে সব স্বীকার করেছে। সেই বিষয়গুলো আমরা ভারতের তদন্ত সংস্থা ও পুলিশকে জানিয়েছি। তারাও কিছু কিছু উদ্ধার করেছে।’

কী কারণে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘এটা যে কারণেই হোক, আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে সব বলতে পারব। এখন আমাদের কাজ আসামিদের গ্রেপ্তার করা।’

ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, ‘মাস্টারমাইন্ডের ডাক নাম শাহীন, আসল নাম আখতারুজ্জামান। তার গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি। আর যে মূল কাজটা করেছে তার নাম আমানউল্লাহ (পাসপোর্ট অনুযায়ী)। কিন্তু তার আসল নাম আরেকটা, সে নতুন পাসপোর্ট নিয়ে আমনউল্লাহ সেজেছে।

‘সে গলাকাটা পার্টি, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তার বিরুদ্ধে খুলনা, যশোর ওই এলাকাগুলোতে হত্যাসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এই আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল হত্যাকাণ্ডের মূল সংগঠক হিসেবে কাজ করেছে।’

২২ মে বুধবার সন্ধ্যায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

লাশ না পেয়েও মামলায় হত্যার ধারা দেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘হত্যার মূল সমন্বয়কারী যে আমানউল্লাহ, তার কথা অনুযায়ী তো লাশ পাওয়ার কথা না। মাংস থেকে হাড় আলাদা করে হলুদের গুঁড়া দিয়ে তারা যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তারা ভিকটিমের মোবাইল থেকে বিভিন্ন সময় মেসেজ দিছে। কোনো সময় গোপাল বিশ্বাসের ফোনে রিং দিয়েছে, একটা মেসেজও পাঠিয়েছে যে, ‘আমি দিল্লি যাচ্ছি’। সেখানে তিনি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন।

‘তারা পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে এই কাজ করেছে। কোনো সময় তারা মোবাইল নিয়ে গেছে বেনাপোল, কোনো সময় মোজাফ্ফরাবাদ। তার এপিএসসহ আরও অনেকের কাছে মেসেজ দেয়।’

ঘটনাটি হানি ট্র্যাপ ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, হানি ট্র্যাপ ছিল কিনা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে ঘটনাটি কিনা কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এখানে আছে কিনা; সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ছাগলকাণ্ড : এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের ৫শ’ কোটি টাকার বেশি স্থাবর সম্পদের তথ্য

ছবি

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় পরীমনির জামিন

ছবি

মতিউর ও স্ত্রী-পুত্রের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, দুদকের তদন্ত শুরু

যশোরে অনিবন্ধিত ক্লিনিকে সিজার, প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যু

বেনজীরের স্ত্রী-সন্তানও হাজির হয়নি দুদকে

ছবি

ম্যাজিস্ট্রেটসহ আ.লীগ নেতা বাবুকে নিয়ে ফোন উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ

ছবি

দুদকের বরখাস্ত হওয়া সেই মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন

ছবি

এনবিআরের কর্মকতা মতিউর ও স্ত্রী-পুত্রের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

দুদকের ডাকে সাড়া দেননি বেনজীরের স্ত্রী-দুই মেয়ে

ছবি

মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক, আছাদুজ্জামানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

‘দুর্নীতি’ অনুসন্ধানে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন

ছবি

এনবিআর থেকে সরানো হলো মতিউরকে, সরতে হচ্ছে সোনালী ব্যাংক থেকেও

এটিইউ কর্তৃক ১২ মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার

ছবি

হাসপাতাল ভবনে ব্যাংক ভাড়া, সেবা ব্যাহত

তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে ‘জমির বিরোধও’

ব্যবসায়ীর ৫২ লাখ টাকা লুট

সিলেটে মুক্তিপণ না পেয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

শরীয়তপুরে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টাকালে একজন আটক

ছবি

মুক্তাগাছায় ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যা করে টাকা ছিনাতাইয়ের চেষ্টা, আটক ২, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

চুনারুঘাটে রঘুনন্দন পাহাড়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

মনোনয়ন পেতে চেয়েছিলেন মিন্টু, আক্তারুজ্জামান চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের প্রধান : ডিবি

ছবি

আনার হত্যা মামলায় ৮ দিনের রিমান্ডে মিন্টু

বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে: দুদকের আইনজীবী

ছবি

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চাইলেন ড. ইউনূস

ছবি

এমপি আজীম খুন : জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আটক

সোনারগাঁয়ে মাদকের টাকার দ্বন্দ্বে মাদক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

কলেজ ছাত্রীকে ব্ল্যাক মেইল,ধর্ষণ অভিযুক্ত গ্রেফতার,স্বীকারোক্তি

বেনজীরের সেই রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিল প্রশাসন

ছবি

এমপি আনার হত্যা : কলকাতায় সিয়াম ১৪ দিনের রিমান্ডে

নারায়ণগঞ্জে পুরোনো দ্বন্দ্বের জেরে যুবক খুন

ছবি

নেপালে আটক সিয়াম কলকাতা সিআইডির হেফাজতে

কালিয়াকৈরে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

ছবি

মোটর সাইকেল বিক্রি নিয়ে স্কুল ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

আজ দুদকে যাচ্ছেন না বেনজীর, ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন

গঙ্গাচড়ায় স্বামী জবাই করে স্ত্রীকে হত্যা করেছে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

আখতারুজ্জামান হোতা, শিমুল বাস্তবায়নকারী : ডিবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার হোতা। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের মাস খানেক আগেই ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয়।

হত্যার পর সংসদ সদস্যের শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন হয়।

আরও পড়ুন : আখতারুজ্জামান, শিমুল-এরা কারা

ডিবি কর্মকর্তা জানান, ঘটনা তদন্তে ভারতের আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের একটি তদন্ত দল ঢাকায় এসেছে।

আনার খুনের ঘটনায় ডিবি হেফাজতে থাকা তিন সন্দেহভাজনকে ওই তদন্ত দল জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানান ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন। তার সঙ্গে ছিলেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে।

হারুন বলেন, ‘এক মাস আগে থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসায় একাধিকবার বসে তারা এই হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে চায়নি, ধরা পড়ার ভয়ে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ভারতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা আবার চলে আসবে, সে মোতাবেক তারা কাজ করেছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আমানুল্লাহর প্রকৃত নাম শিমুল।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডস্থলে ছিলেন আখতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। আমানউল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এর বাইরেও এ ঘটনায় ভারতীয় কিছু লোকজন টাকার বিনিময়ে হত্যাকারীদের জন্য কাজ করেন।

একদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছিলেন, কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল যে অ্যাপার্টমেন্টে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে, সেই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান।

এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।

ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলছেন, “তারা গুলশান ও বসুন্ধরায় মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের বাসায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করলেও তারা এখানে এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে চায়নি। তাদের মনে ভয় ছিল- ঢাকার ডিবির সক্ষমতা নিয়ে; কারণ তারা জানে, ডিবি আগের হত্যাকাণ্ডগুলো কীভাবে উদ্ঘাটন করেছে।”

সংসদ সদস্য আনারকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ২৫ এপ্রিল কলকাতার সেই বাসাটি ভাড়া করে। চুক্তি হয় তারা ৩০ এপ্রিল সেই বাসায় উঠবে। সেই মোতাবেক আখতারুজ্জামান শাহীন, আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি ৩০ মে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে কোলকাতা গিয়ে সেই বাসায় ওঠেন।

“তারা বোঝাতে চেয়েছিল যে এখানে পরিবার থাকবে। সেখানে গিয়ে তারা আরও দুজনকে হায়ার করে। এই বাসাতে আসা-যাওয়া করবে তারা। এর মধ্যে একজন জিহাদ অথবা জাহিদ, আরেকজন সিয়াম। আর মাস্টারমাইন্ড শাহীন কোন গাড়িটা- কোথায় ব্যবহার হবে, কাকে কতো টাকা দিতে হবে, কারা হত্যায় থাকবে- সবকিছু ঠিকঠাক করে ১০ মে বাংলাদেশে আসেন।’

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, ‘দুই মাস ধরে তারা খেয়াল রাখছিল কোন সময় সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় যাবেন, তিনি মাঝে মধ্যেই কলকাতা যান। গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন এমপি আনার। তার আগে থেকেই শাহীনরা জানেন যে এমপি আনার ১২ তারিখ যাবেন। ১৩ মে এই চক্রটির ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি একটি সাদা গাড়িতে এমপি আনারকে রিসিভ করে। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা আরেকটি গাড়িতে ওঠে। সেই গাড়িতে এমপি আনার ও ফয়সাল ছাড়াও আমানউল্লাহ ছিলেন।’

রাজা নামের একজন গাড়িটি চালাচ্ছিলেন জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক রাজা এসব কিছু জানে না, সে জাস্ট ক্যারিয়ার। ওই বাসায় যাওয়ার পর আরেক ব্যক্তি মুস্তাফিজও সেই বাসায় ঢোকেন। ১৩ মে ২টা ৫১ মিনিটে তারা সবাই ঢুকেছে।

‘আগে থেকেই ভেতরে ছিল জিহাদ ও সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তারা হত্যার এক ঘণ্টা পরে একজন- এমপি আনারের মোবাইলটা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় কল করেন; মানে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন বলেন, ‘তাদের পরিকল্পনা ছিল বিদেশের মাটিতে তারা হত্যা করবে এবং লাশটাকে এমনভাবে খুন করবে যাতে কেউ কোনোদিন না পায়। এরপর তারা লাশটাকে ছোট ছোট টুকরো করে ফেলেছে। হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলেছে।

‘তারা ওই হাড়-মাংসগুলোর সঙ্গে হলুদ ও মসলা মিশিয়ে দিয়েছিল; যাতে পথে কেউ ধরলে- তারা বলতে পারে যে, এটা বাজার থেকে কেনা মাংস। উদ্দেশ্য ছিল এমনভাবেই গুম করা হবে যাতে কেউ কোনোদিন তার কোনো অস্তিত্ব না পায়।’

ঘটনার বীভৎসতার বর্ণনা দিয়ে হারুন বলেন, ‘১৩ মে আমানউল্লাহ, জিহাদ ও সিয়াম দুটো স্যুটকেসে করে সেই দেহের টুকরোগুলো ভরে পাবলিক টয়লেটের সামনে দাঁড়ানো একটি গাড়িতে ওঠে। সেই গাড়ির ড্রাইভারও তেমন কিছু জানতো না।

‘এরপর সিয়াম ও জিহাদকে স্যুটকেসসহ বিদায় করে আমানউল্লাহ আবার বাসায় চলে আসে। পরেরদিন আমানউল্লাহসহ পরের দুইজন বাকি মাংসগুলোকে পলিথিনে পেঁচিয়ে ব্যাগে ভরে তারাও বের হয়ে যায়।’

ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, ‘১৫ মে আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান বাংলাদেশে আসেন। ১৬ মে মুস্তাফিজ চলে আসে। ওরা সবাই যখন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে, তারপরে আখতারুজ্জামান শাহীন ভিসতারা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দিল্লি যান। সেখানে দুই ঘণ্টার বিরতি শেষে তিনি কাঠমান্ডুর ফ্লাইটে চাপেন। সেখান থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন।

‘যেসব আসামিরা আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছে আমরা সব জেনেছি। তারা আমাদের কাছে সব স্বীকার করেছে। সেই বিষয়গুলো আমরা ভারতের তদন্ত সংস্থা ও পুলিশকে জানিয়েছি। তারাও কিছু কিছু উদ্ধার করেছে।’

কী কারণে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘এটা যে কারণেই হোক, আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে সব বলতে পারব। এখন আমাদের কাজ আসামিদের গ্রেপ্তার করা।’

ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, ‘মাস্টারমাইন্ডের ডাক নাম শাহীন, আসল নাম আখতারুজ্জামান। তার গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি। আর যে মূল কাজটা করেছে তার নাম আমানউল্লাহ (পাসপোর্ট অনুযায়ী)। কিন্তু তার আসল নাম আরেকটা, সে নতুন পাসপোর্ট নিয়ে আমনউল্লাহ সেজেছে।

‘সে গলাকাটা পার্টি, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তার বিরুদ্ধে খুলনা, যশোর ওই এলাকাগুলোতে হত্যাসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এই আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল হত্যাকাণ্ডের মূল সংগঠক হিসেবে কাজ করেছে।’

২২ মে বুধবার সন্ধ্যায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

লাশ না পেয়েও মামলায় হত্যার ধারা দেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘হত্যার মূল সমন্বয়কারী যে আমানউল্লাহ, তার কথা অনুযায়ী তো লাশ পাওয়ার কথা না। মাংস থেকে হাড় আলাদা করে হলুদের গুঁড়া দিয়ে তারা যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তারা ভিকটিমের মোবাইল থেকে বিভিন্ন সময় মেসেজ দিছে। কোনো সময় গোপাল বিশ্বাসের ফোনে রিং দিয়েছে, একটা মেসেজও পাঠিয়েছে যে, ‘আমি দিল্লি যাচ্ছি’। সেখানে তিনি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন।

‘তারা পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে এই কাজ করেছে। কোনো সময় তারা মোবাইল নিয়ে গেছে বেনাপোল, কোনো সময় মোজাফ্ফরাবাদ। তার এপিএসসহ আরও অনেকের কাছে মেসেজ দেয়।’

ঘটনাটি হানি ট্র্যাপ ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, হানি ট্র্যাপ ছিল কিনা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে ঘটনাটি কিনা কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এখানে আছে কিনা; সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

back to top