লঞ্চের কেবিন ভাড়া নিয়ে ধর্ষণের পর বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে
গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প থেকে কোতোয়ালি থানায় ফোনে জানান, রাজধানীর সদরঘাট থেকে সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় এক নারী ও তার শিশুকে হাসপাতালে রেখে চলে গেছেন। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক অজ্ঞাত নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। আর শিশু সন্তানকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে।
এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে প্রথমে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। ওই নারীর স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে যোগাযোগ করলে ওই নারীর ভাই হাসপাতালে গিয়ে অজ্ঞাত নারীর লাশ শনাক্ত করে। তার নাম মাধুরী বিশ্বাস (৩৬)। চিকিৎসাধীন তার শিশু কন্যার নাম শ্রেষ্ঠা (৭)।
এই ঘটনায় গত ৬ ডিসেম্বর মাধুরীর বড় ভাই নারায়ন বিশ্বাসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মিডিয়া তালেবুর রহমান জানান, ঘটনার পরপর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তের শুরুতে জানতে পারে, ৮ বছর আগে খুলনা জেলার তেরখাদা থানার পিংকু মজুমদারের সঙ্গে মাধুরী বিশ্বাসের বিয়ে হয়। তাদের সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়ে শ্রেষ্ঠা ও মাধুরী বিশ্বাস গত ২৮ নভেম্বর সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বাগেরহাটে রওনা হয়। এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পুলিশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিধান দাস নামে একজনকে চিহ্নিত করে। ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গভীররাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রী এ্যাঙ্গেল ডক এলাকা থেকে বিধানকে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিধান পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পটুয়াখালী জেলার দশমিনায় তার গ্রামের বাড়ি। সে একটি বাল্ব হেডের ইঞ্জিন শ্রমিক। ঘটনার ৪ থেকে ৫ মাস আগে তার জাহাজের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে মাধুরীর মোবাইল ফোন নম্বর পায়। এরপর তাকে কল করে। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাধুরী বিধানকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিধান বিয়েতে রাজি না। এরপর সে ছুটিতে বরিশাল যাবে। তখন মাধুরীও বরিশাল যাবে বলে জানান।
গত ২৮ নভেম্বর মাধুরী বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়ে মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে বরিশাল রওনা হয়। একই দিন বিধান ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওই দিন বিকাল ৩টার দিকে বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে তাদের দেখা হয়। তারা স্থানীয় এক আবাসিক হোটেলে একটি রুম ভাড়া নেয়। ২৯ নভেম্বর বিধান মাধুরীকে রেখে পটুয়াখালী যায়। এরপর বিধান পারিবারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে পটুখালীতে অবস্থান করে। আর মাধুরীকে বলে সে যেন পটুয়াখালী চলে যায়। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে ঢাকায় আসবে।
হত্যার পরিকল্পনা বিধান মাধুরীকে তার জীবন থেকে সরানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে ৪ ডিসেম্বর সকালে দশমিনা বাজারের নলখোলা বন্দরের একটি দোকান থেকে ঘাস মারার কীটনাশক ওষুধ কিনে। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিধান, মাধুরী ও তার শিশু কন্যা শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে কালাইয়া লঞ্চ ঘাটে যায়। বিধান লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করে।
কেবিনে উঠার পর মাধুরী শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে বাথরুমে যায়। তখন বিধান পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার পকেটে থাকা বিষ একটি পানির বোতলে ভরে কেবিনে লুকিয়ে রাখে। লঞ্চ ছাড়ার পর খাওয়া দাওয়া শেষে শ্রেষ্ঠা ঘুমিয়ে পড়লে বিধান মাধুররীকে ধর্ষণ করে। এরপর বিধান মাধুরীকে গ্যাস্টিকের ওষুধ বলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিষ মেশানো পানি পান করতে দেয়। পরবর্তীতে শিশুটিকেও ঘুম থেকে ডেকে বিষ মেশানো পানি পান করায়।
বিষ মিশানো পানি পান করে মা ও মেয়ে দুইজনই বমি করেছে। এতে মা মেয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে। ৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছলে বিধান ,মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে টার্মিনাল নামে। এরপর তাদেরকে এক জায়গায় বসিয়ে খাবার আনার কথা বলে বিধান যাত্রাবাড়ি তার জাহাজে চলে যায়।
অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদেরকে টার্মিনালে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে মাধুরী মারা যায়। এরপর তার স্বজনরা শিশু কন্যাকে নিয়ে গোপালগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ১৪ ডিসেম্বর শিশুটি মারা যায়।
গ্রেফতারকৃত বিধানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আদালতে নিজে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
লঞ্চের কেবিন ভাড়া নিয়ে ধর্ষণের পর বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প থেকে কোতোয়ালি থানায় ফোনে জানান, রাজধানীর সদরঘাট থেকে সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় এক নারী ও তার শিশুকে হাসপাতালে রেখে চলে গেছেন। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক অজ্ঞাত নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। আর শিশু সন্তানকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে।
এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে প্রথমে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। ওই নারীর স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে যোগাযোগ করলে ওই নারীর ভাই হাসপাতালে গিয়ে অজ্ঞাত নারীর লাশ শনাক্ত করে। তার নাম মাধুরী বিশ্বাস (৩৬)। চিকিৎসাধীন তার শিশু কন্যার নাম শ্রেষ্ঠা (৭)।
এই ঘটনায় গত ৬ ডিসেম্বর মাধুরীর বড় ভাই নারায়ন বিশ্বাসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মিডিয়া তালেবুর রহমান জানান, ঘটনার পরপর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তের শুরুতে জানতে পারে, ৮ বছর আগে খুলনা জেলার তেরখাদা থানার পিংকু মজুমদারের সঙ্গে মাধুরী বিশ্বাসের বিয়ে হয়। তাদের সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়ে শ্রেষ্ঠা ও মাধুরী বিশ্বাস গত ২৮ নভেম্বর সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বাগেরহাটে রওনা হয়। এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পুলিশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিধান দাস নামে একজনকে চিহ্নিত করে। ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গভীররাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রী এ্যাঙ্গেল ডক এলাকা থেকে বিধানকে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিধান পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পটুয়াখালী জেলার দশমিনায় তার গ্রামের বাড়ি। সে একটি বাল্ব হেডের ইঞ্জিন শ্রমিক। ঘটনার ৪ থেকে ৫ মাস আগে তার জাহাজের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে মাধুরীর মোবাইল ফোন নম্বর পায়। এরপর তাকে কল করে। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাধুরী বিধানকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিধান বিয়েতে রাজি না। এরপর সে ছুটিতে বরিশাল যাবে। তখন মাধুরীও বরিশাল যাবে বলে জানান।
গত ২৮ নভেম্বর মাধুরী বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়ে মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে বরিশাল রওনা হয়। একই দিন বিধান ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওই দিন বিকাল ৩টার দিকে বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে তাদের দেখা হয়। তারা স্থানীয় এক আবাসিক হোটেলে একটি রুম ভাড়া নেয়। ২৯ নভেম্বর বিধান মাধুরীকে রেখে পটুয়াখালী যায়। এরপর বিধান পারিবারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে পটুখালীতে অবস্থান করে। আর মাধুরীকে বলে সে যেন পটুয়াখালী চলে যায়। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে ঢাকায় আসবে।
হত্যার পরিকল্পনা বিধান মাধুরীকে তার জীবন থেকে সরানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে ৪ ডিসেম্বর সকালে দশমিনা বাজারের নলখোলা বন্দরের একটি দোকান থেকে ঘাস মারার কীটনাশক ওষুধ কিনে। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিধান, মাধুরী ও তার শিশু কন্যা শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে কালাইয়া লঞ্চ ঘাটে যায়। বিধান লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করে।
কেবিনে উঠার পর মাধুরী শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে বাথরুমে যায়। তখন বিধান পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার পকেটে থাকা বিষ একটি পানির বোতলে ভরে কেবিনে লুকিয়ে রাখে। লঞ্চ ছাড়ার পর খাওয়া দাওয়া শেষে শ্রেষ্ঠা ঘুমিয়ে পড়লে বিধান মাধুররীকে ধর্ষণ করে। এরপর বিধান মাধুরীকে গ্যাস্টিকের ওষুধ বলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিষ মেশানো পানি পান করতে দেয়। পরবর্তীতে শিশুটিকেও ঘুম থেকে ডেকে বিষ মেশানো পানি পান করায়।
বিষ মিশানো পানি পান করে মা ও মেয়ে দুইজনই বমি করেছে। এতে মা মেয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে। ৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছলে বিধান ,মাধুরী ও শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে টার্মিনাল নামে। এরপর তাদেরকে এক জায়গায় বসিয়ে খাবার আনার কথা বলে বিধান যাত্রাবাড়ি তার জাহাজে চলে যায়।
অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদেরকে টার্মিনালে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে মাধুরী মারা যায়। এরপর তার স্বজনরা শিশু কন্যাকে নিয়ে গোপালগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ১৪ ডিসেম্বর শিশুটি মারা যায়।
গ্রেফতারকৃত বিধানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আদালতে নিজে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।