ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের আখতারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে, তারা আন্দোলনকারীদের ফায়ার (গুলি) করে তাদেরকে মেরে ফেলো।’
সোমবার,(০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম। সেখানেই তিনি এ কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি চানখাঁরপুল এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, তাকেও গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক এডিসি আখতারুল। তবে তিনি গুলি করা থেকে বিরত ছিলেন।
গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় এসআই আশরাফুল সোমবার ৩৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে পুলিশে যোগ দেন। ২০০২ সাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত আছেন। ২০১৮ সালে এসআই (সশস্ত্র) হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন এডিসি আখতারুল ইসলামের নির্দেশে তৎকালীন এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ, আনুমানিক ১৫-২০ জন এপিবিএন সদস্য, ডিএমপির ১০-১৫ জন সদস্যের সঙ্গে তিনি হেঁটে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে চানখাঁরপুলে পৌঁছান। চানখাঁরপুলসংলগ্ন বংশাল ও চকবাজার এলাকা থেকে আসা ছাত্র-জনতা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এডিসি আখতারুল ইসলামের নির্দেশে কোনো প্রয়োজন ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শটগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এই গুলি করা হয় চানখাঁরপুল মোড়ে। এপিবিএন পুলিশকে দিয়ে শটগান ফায়ার করে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় এডিসি আখতারুল বলেন, ‘তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে, তারা আন্দোলনকারীদের প্রতি ফায়ার করে তাদেরকে মেরে ফেলো।’
তখন এসআই আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন এই অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ আদেশ পালন না করলে এডিসি আখতারুল তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি। এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন এডিসি আখতারুল তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো।’ তারপরও তিনি (এসআই আশরাফুল) তার পিস্তল দিয়ে ফায়ার (গুলি) করা থেকে বিরত থাকেন।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারপর এডিসি আখতারুলের সরবরাহ করা অতিরিক্ত গুলি ব্যবহার করে তার (আখতারুল) নির্দেশে ও দেখানো মতে কনস্টেবল মো. নাসিরুল ইসলাম রাস্তায় বসে চায়না রাইফেলে গুলি লোড করেন এবং আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে বারবার ফায়ার (গুলি) করতে থাকেন। এ সময় এডিসি আখতারুল ইসলাম এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল অজয়ের হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নিয়ে এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনের হাতে দেন। অজয় গুলি করা থেকে বিরত ছিলেন। এরপর তৎকালীন কনস্টেবল সুজন হোসেন চানখাঁরপুল মোড়ে কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও শুয়ে, কখনও হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে থাকেন।
এ ছাড়া এপিবিএনের তৎকালীন কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এসআই আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেখতে পান এসব গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তৎকালীন এসি ইমরুল ও ইন্সপেক্টর আরশাদ এপিবিএনের ৫-৭ জন সদস্য নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের বিভিন্ন গলিতে গুলি করতে করতে প্রবেশ করেন এবং তারা চায়না রাইফেলের গুলির শব্দ শুনতে পান।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের আখতারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে, তারা আন্দোলনকারীদের ফায়ার (গুলি) করে তাদেরকে মেরে ফেলো।’
সোমবার,(০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম। সেখানেই তিনি এ কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি চানখাঁরপুল এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, তাকেও গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক এডিসি আখতারুল। তবে তিনি গুলি করা থেকে বিরত ছিলেন।
গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় এসআই আশরাফুল সোমবার ৩৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে পুলিশে যোগ দেন। ২০০২ সাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত আছেন। ২০১৮ সালে এসআই (সশস্ত্র) হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন এডিসি আখতারুল ইসলামের নির্দেশে তৎকালীন এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ, আনুমানিক ১৫-২০ জন এপিবিএন সদস্য, ডিএমপির ১০-১৫ জন সদস্যের সঙ্গে তিনি হেঁটে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে চানখাঁরপুলে পৌঁছান। চানখাঁরপুলসংলগ্ন বংশাল ও চকবাজার এলাকা থেকে আসা ছাত্র-জনতা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এডিসি আখতারুল ইসলামের নির্দেশে কোনো প্রয়োজন ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শটগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এই গুলি করা হয় চানখাঁরপুল মোড়ে। এপিবিএন পুলিশকে দিয়ে শটগান ফায়ার করে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় এডিসি আখতারুল বলেন, ‘তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে, তারা আন্দোলনকারীদের প্রতি ফায়ার করে তাদেরকে মেরে ফেলো।’
তখন এসআই আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন এই অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ আদেশ পালন না করলে এডিসি আখতারুল তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি। এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন এডিসি আখতারুল তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো।’ তারপরও তিনি (এসআই আশরাফুল) তার পিস্তল দিয়ে ফায়ার (গুলি) করা থেকে বিরত থাকেন।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারপর এডিসি আখতারুলের সরবরাহ করা অতিরিক্ত গুলি ব্যবহার করে তার (আখতারুল) নির্দেশে ও দেখানো মতে কনস্টেবল মো. নাসিরুল ইসলাম রাস্তায় বসে চায়না রাইফেলে গুলি লোড করেন এবং আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে বারবার ফায়ার (গুলি) করতে থাকেন। এ সময় এডিসি আখতারুল ইসলাম এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল অজয়ের হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নিয়ে এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনের হাতে দেন। অজয় গুলি করা থেকে বিরত ছিলেন। এরপর তৎকালীন কনস্টেবল সুজন হোসেন চানখাঁরপুল মোড়ে কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও শুয়ে, কখনও হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে থাকেন।
এ ছাড়া এপিবিএনের তৎকালীন কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এসআই আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেখতে পান এসব গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তৎকালীন এসি ইমরুল ও ইন্সপেক্টর আরশাদ এপিবিএনের ৫-৭ জন সদস্য নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের বিভিন্ন গলিতে গুলি করতে করতে প্রবেশ করেন এবং তারা চায়না রাইফেলের গুলির শব্দ শুনতে পান।