এখনও আছে ১৪৪ ধারা, তবে দিনে শিথিল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীলের বাবার দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো. আব্দুল বাতেন মৃধা।
ওসি জানান, ১৪৪ ধারা এখনও জারি রয়েছে। তবে দিনে শিথিল থাকবে। তিনি আরও জানান, খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা সহিংসতায় আক্রান্তের হতাহতের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো মামলা, থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ।
এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় রামসু বাজারে হামলা সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলার গুইমারা বাজার থেকে আনুমানিক মাত্র আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজার। ১৯৯১ সালে বটতলা নামক গ্রামের রামসু মারমা প্রথম সেখানে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। তখন ছাত্র-ছাত্রীরা গুইমারা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় তার দোকানে বিশ্রাম নিত।
এরপর তাকে দেখে তার দোকানের পাশে মংরে মারমা নামে আরও একজন চায়ের দোকান খোলেন। এভাবে ক্রমে সেখানে একটি বাজার গড়ে ওঠে। আর বাজারটির নাম হয়ে যায় রামসু মারমার নামেই।
পুড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে পাহাড়িদের (মারমা) ৫৩টি দোকান ছিল। হলুদের গোডাউনসহ বাঙালিদের দোকান ৮টি। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, গুইমারা বাজারের একেবারে কাছে হওয়ায় রামসু বাজারটি অনেক ব্যবসায়ীর ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল। এ বর্ধিষ্ণু বাজারটিকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতো। কারণ আশপাশের অনেক পাহাড়ি গ্রামের লোকজন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারতো। তাদের গুইমারা বাজারে যাওয়া লাগতো না।
অন্যদিকে অংসাচিং মারমা তারা মনে করেন, রামসু বাজারটি একশ্রেণীর লোকের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। তারা মারমা অধ্যুষিত এ বাজারটি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। গত ২ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধের দিনটিকে তারা হামলার মোক্ষম সময় বলে ধরে নেয়।
তার মতে, ষড়যন্ত্রকারী-হামলাকারীরা মনে করেছিল, হামলার দায় ইউপিডিএফের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের অপরাধ আড়াল করা সম্ভব হবে এবং সড়ক অবরোধের সময়আক্রান্ত হওয়ার কারণে এলাকার পাহাড়িরা অর্থাৎ মারমারা ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠবে বা তাদের বিপক্ষে চলে যাবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সেই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল, জনগণ তাদের ইচ্ছা পূরণ করেনি বরং হামলার পর এলাকার মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমারাসহ সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, বাঁচার জন্য নিজস্ব পার্টি ও সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ জনগণের কাছে এখন অনেক দালাল সংগঠনের মুখোশও খুলে পড়েছে। এ সংগঠনগুলো কখনো আওয়ামী লীগের, আবার কখনো বিএনপির দালালি করেছে, এখনও করছে।
আইচুক ত্রিপুরা বলেন, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না, কোনো নিপীড়িত জাতি মুক্তি বা অধিকার পেতে পারে না। শরীর থেকে মাথা কেটে দিলে যেমন কোনো মানুষ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না, তেমনি কোনো জাতির নেতৃত্ব বা পার্টিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সেই জাতিও টেকে না। এ কারণে ইউপিডিএফকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। বিচ্ছিন্ন করার অনেক কৌশলের মধ্যে দুটি হলো- পার্টির বিরুদ্ধে দমনপীড়ন ও অপপ্রচার চালানো। যাতে জনগণ প্রকাশ্যে পার্টিকে সমর্থন করতে ভয় পায় এবং এভাবে পার্টিকে সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
মিল্টন চাকমা বলেন, রামসু বাজারের হামলার পর পাহাড়ি জনগণ বুঝেছে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে কেউ নিরাপদ নয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বরের হামলার আগের দিনও নিশ্চয়ই রামসু বাজারের পাহাড়ি মানুষ ভেবেছিল তারা ‘ভালো’ ছিলেন। তারা কি ঘুর্ণাক্ষরেও মনে করেছিলেন তাদের ওপর হামলা হবে? আজ যারা মনে করছেন তারা ‘ভালো’ আছেন, তাদেরও বোধদয় হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, শত দমনপীড়ন সত্ত্বেও ইউপিডিএফ অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করবে না।
গুইমারা উপজেলায় মধ্যরাতে ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক রীতি লঙ্ঘন করে তিন শহীদকে দাহ করানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ইউপিডিএফ। এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতিও দিয়েছিল তারা।
এখনও আছে ১৪৪ ধারা, তবে দিনে শিথিল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীলের বাবার দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো. আব্দুল বাতেন মৃধা।
ওসি জানান, ১৪৪ ধারা এখনও জারি রয়েছে। তবে দিনে শিথিল থাকবে। তিনি আরও জানান, খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা সহিংসতায় আক্রান্তের হতাহতের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো মামলা, থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ।
এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় রামসু বাজারে হামলা সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলার গুইমারা বাজার থেকে আনুমানিক মাত্র আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজার। ১৯৯১ সালে বটতলা নামক গ্রামের রামসু মারমা প্রথম সেখানে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। তখন ছাত্র-ছাত্রীরা গুইমারা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় তার দোকানে বিশ্রাম নিত।
এরপর তাকে দেখে তার দোকানের পাশে মংরে মারমা নামে আরও একজন চায়ের দোকান খোলেন। এভাবে ক্রমে সেখানে একটি বাজার গড়ে ওঠে। আর বাজারটির নাম হয়ে যায় রামসু মারমার নামেই।
পুড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে পাহাড়িদের (মারমা) ৫৩টি দোকান ছিল। হলুদের গোডাউনসহ বাঙালিদের দোকান ৮টি। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, গুইমারা বাজারের একেবারে কাছে হওয়ায় রামসু বাজারটি অনেক ব্যবসায়ীর ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল। এ বর্ধিষ্ণু বাজারটিকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতো। কারণ আশপাশের অনেক পাহাড়ি গ্রামের লোকজন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারতো। তাদের গুইমারা বাজারে যাওয়া লাগতো না।
অন্যদিকে অংসাচিং মারমা তারা মনে করেন, রামসু বাজারটি একশ্রেণীর লোকের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। তারা মারমা অধ্যুষিত এ বাজারটি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। গত ২ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধের দিনটিকে তারা হামলার মোক্ষম সময় বলে ধরে নেয়।
তার মতে, ষড়যন্ত্রকারী-হামলাকারীরা মনে করেছিল, হামলার দায় ইউপিডিএফের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের অপরাধ আড়াল করা সম্ভব হবে এবং সড়ক অবরোধের সময়আক্রান্ত হওয়ার কারণে এলাকার পাহাড়িরা অর্থাৎ মারমারা ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠবে বা তাদের বিপক্ষে চলে যাবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সেই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল, জনগণ তাদের ইচ্ছা পূরণ করেনি বরং হামলার পর এলাকার মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমারাসহ সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, বাঁচার জন্য নিজস্ব পার্টি ও সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ জনগণের কাছে এখন অনেক দালাল সংগঠনের মুখোশও খুলে পড়েছে। এ সংগঠনগুলো কখনো আওয়ামী লীগের, আবার কখনো বিএনপির দালালি করেছে, এখনও করছে।
আইচুক ত্রিপুরা বলেন, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না, কোনো নিপীড়িত জাতি মুক্তি বা অধিকার পেতে পারে না। শরীর থেকে মাথা কেটে দিলে যেমন কোনো মানুষ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না, তেমনি কোনো জাতির নেতৃত্ব বা পার্টিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সেই জাতিও টেকে না। এ কারণে ইউপিডিএফকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। বিচ্ছিন্ন করার অনেক কৌশলের মধ্যে দুটি হলো- পার্টির বিরুদ্ধে দমনপীড়ন ও অপপ্রচার চালানো। যাতে জনগণ প্রকাশ্যে পার্টিকে সমর্থন করতে ভয় পায় এবং এভাবে পার্টিকে সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
মিল্টন চাকমা বলেন, রামসু বাজারের হামলার পর পাহাড়ি জনগণ বুঝেছে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে কেউ নিরাপদ নয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বরের হামলার আগের দিনও নিশ্চয়ই রামসু বাজারের পাহাড়ি মানুষ ভেবেছিল তারা ‘ভালো’ ছিলেন। তারা কি ঘুর্ণাক্ষরেও মনে করেছিলেন তাদের ওপর হামলা হবে? আজ যারা মনে করছেন তারা ‘ভালো’ আছেন, তাদেরও বোধদয় হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, শত দমনপীড়ন সত্ত্বেও ইউপিডিএফ অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করবে না।
গুইমারা উপজেলায় মধ্যরাতে ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক রীতি লঙ্ঘন করে তিন শহীদকে দাহ করানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ইউপিডিএফ। এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতিও দিয়েছিল তারা।