image

চট্টগ্রামে ‘গানে গানে সংহতি’ কর্মসূচি অনুমতি না পাওয়ায় স্থগিত

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

চট্টগ্রামে নট-উদীচীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, শিল্পী ও সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত ‘গানে গানে সংহতি’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়নি। আয়োজকরা জানিয়েছেন, পুলিশ নিরাপত্তার কথা বলে অনুষ্ঠানটি করতে নিরুৎসাহিত করেছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, অনুমতি না থাকায় অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে।

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সামনের প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে’ এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিকাল সাড়ে ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রশাসনিক ‘সীমাবদ্ধতার কারণে’ গানে গানে সংহতি সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।

আয়োজকদের পক্ষে সংস্কৃতিকর্মী অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য বলেন, “গানে গানে সংহতি সমাবেশ ডাকা হয়েছিল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের উপর হামলা রোধের দাবিতে। হামলার প্রতিবাদে গান গেয়ে সংহতি জানানোর কর্মসূচি। প্রচারিত দশটি গান এবং একটি বিবৃতি পাঠের মাধ্যমেই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন পূর্বানুমতি এবং গতকাল ফরিদপুর জেলা স্কুলে সংগীত আয়োজনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্র ধরে নিরাপত্তার কথা বলে আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করেন।”

তিনি আরও বলেন, “পরে স্থান বদলে শিল্পকলার মাঠে আয়োজন করতে চাইলেও নিরাপত্তার কথা বলে অনুষ্ঠান না করার জন্য বলে পুলিশ। ফলে আমাদের সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কর্মসূচি করা সম্ভব হয়নি।”

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি বাবুল আজাদ বলেন, “ওই অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকরা আগে থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তাই তাদের অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সিটিএসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অনুমতি লাগে।”

২২ জনের বিবৃতি

অনুষ্ঠানের অনুমতি না মেলার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ২২ ব্যক্তি। বিবৃতিতে বলা হয়, “সংস্কৃতি চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথে কোনো ধরনের বাধা বা নিরাপত্তার হুমকি থাকলে তা নিরসন করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ।”

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, নাট্যজন শিশির দত্ত, বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, কবি কামরুল হাসান বাদল, অধ্যাপক জাহেদ আলী চৌধুরী যুবরাজ, অধ্যাপক আদনান মান্নান, অধ্যাপক অসীম দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌরি দে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির তৌফিক সাঈদ, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শুভাগত চৌধুরী, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শ্রেয়সী রায়, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের সভাপতি দীপেন চৌধুরী, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি শারমীন হোসেন, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, সোহেল আনোয়ার, ফারুক তাহের, প্রণব চৌধুরী, সেলিম রেজা সাগর এবং নাট্যকর্মী মবিদুর সুজাত ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আবহমান বাংলা সংস্কৃতির ধারক বাহক বাউল শিল্পী, ছায়ানট, উদীচীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র অফিস, সাংবাদিক ও শিল্পীদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশে সংস্কৃতি চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বারবার। পুলিশ ‘নিরাপত্তার’ কথা বলে অনুষ্ঠান না করার জন্য বলেছে। তাই সামগ্রিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও আজকের কর্মসূচি করা সম্ভব হয়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবাদ জানানোর পরিবেশও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও আশঙ্কার।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এভাবে স্বাধীন মত প্রকাশ ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে ‘উগ্রবাদী অশুভ শক্তির উত্থানকে উৎসাহিত করা হচ্ছে’। আমাদের দাবি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলায় দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।”

এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ আয়োজন করেছিল সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। সেদিনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি না পাওয়ায় বিজয় শোভাযাত্রার সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

‘সংস্কৃতি’ : আরও খবর

» একুশে বইমেলার আগেই বাংলা একাডেমিতে ‘বিজয় মেলা’ করবে বাপুস

» বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবি উদীচীর

সম্প্রতি