alt

সংস্কৃতি

গুণগত বইয়ের খোঁজে পাঠক

খালেদ মাহমুদ, ঢাবি : বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিশ্বের অনেক দেশেই বইমেলা হয়। কোথাও কোথাও তা হয় নিছক বাণিজ্যের প্রয়োজনে। বাংলাদেশে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতি তুলে ধরা। বলা যায়, দেশের প্রকাশনা শিল্পের কর্মকা- অনেকটাই অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক। গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত থাকেন পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা। সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন হাজারো গ্রন্থপ্রেমী বাঙালি।

বইমেলায় সৃজনশীল বইয়ের প্রদর্শন ও বিপণনের উদ্যোগে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে সাফল্যের নতুন মাত্রা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বইমেলা উপলক্ষে গুণগত ও মানসম্মত বই প্রকাশিত হচ্ছে খুবই কম। হাজার হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে, সে তুলনায় ভালো বইয়ের সংখ্যা কম। ফলে কমছে পাঠক সংখ্যা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না মানসম্মত বই। অনেক বই মলাটবন্দী হয়ে আসছে কোন সম্পাদনা ছাড়াই। মানহীন, তথ্য ও মুদ্রণ ত্রুটিযুক্ত বইয়ে বাজার ভরে যাচ্ছে। এ ধরনের বই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পাঠকদের পীড়া দেয়। এ বিষয়ে প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।’

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত শতাব্দীর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকের পর সেই মাপের উল্লেখযোগ্য কোন বাঙালি লেখকের আবির্ভাব ঘটেনি। পরবর্তী পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিক ছিলেন যারা, তাদেরও বেশিরভাগ গত হয়েছেন। বর্তমানে কিছু উদীয়মান লেখক পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করছেন। তবে দেখা যায় পাঠকরা নতুন লেখকদের বই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। ফলে সেই উদীয়মান লেখকরা লেখালেখির উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। সর্বোপরি বলা যায়, বইমেলায় যেমন রয়েছে ভালো বইয়ের অভাব, তেমনি রয়েছে পাঠকের মূল্যায়নের ঘাটতি।’ মিরপুর থেকে মেলায় আসেন জারির আহমেদ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টল ঘুরেছেন। নতুন বইগুলো বেশি দেখেছেন। কিন্তু মানসম্মত ভালো বই খুবই কম পেয়েছেন। দুই-তিন ঘণ্টা ঘুরে তিনটি বই কিনেছেন। বাংলা একাডেমির তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, পূর্বে প্রকাশিত ভালো বইয়ের নতুন সংস্করণ খুব কম। বেশিরভাগ নতুন বইয়ে শিক্ষণীয় উপাদান কম। বাংলা একাডেমিও এবার তেমন ভালো বই প্রকাশ করেনি।

বইমেলায় ঘুরতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘একটি সময় বই ছিল বাঙালির মনের তৃষ্ণা নিবারণ ও অবসর যাপনের অনুষঙ্গ। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কম থাকায় এবং বইও সহজলভ্য না থাকায় পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার একটি সুন্দর চর্চা গড়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে ছিল ধার করে বই পড়ার রেওয়াজ। একটি বই হাতে হাতে ঘুরতে ঘুরতে জীর্ণ হয়ে যেত। কালের বিবর্তনে আজ এমন রেওয়াজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।’

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানসূচী
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথা-সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা ও মুক্তগদ্যচর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং ফরিদ কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রফিকুর রশীদ, সুভাষ সিংহ রায়, সরিফা সালোয়া ডিনা, মাসুদ পথিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক আদর্শ, তার মৃত্যু ও মৃত্যুঞ্জয়ী ভূমিকা উপস্থাপিত হয়েছে শতাধিক ছোটগল্প এবং তিরিশের অধিক উপন্যাস, পঞ্চাশটির মতো মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্রে। বর্তমান শতাব্দীতেও বঙ্গবন্ধু বাঙালি সাহিত্যিকদের কাছে সৃষ্টিশীলতার এক অফুরান উৎস। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যতো গবেষণা, যতো মুক্তগদ্য ও স্মৃতিগদ্য লেখা হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন ব্যক্তিকে নিয়ে এতো গবেষণা এবং এতো গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে জানা নেই। তবে এতো গবেষণা, এতো গ্রন্থ রচিত হলেও এ নিয়ে আত্মশ্লাঘায় ভোগার সুযোগ কতটুকু আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথাসাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র-মুক্তগদ্য ও স্মৃতিগদ্য সংখ্যায় বিপুল, তবে গুণগত উৎকর্ষের বিষয়টিও এক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব রচনাকর্ম আমরা উপহার পেয়েছি এখন প্রয়োজন তার যথাযথ বিশ্লেষণ।

সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক শিল্প-সাহিত্যচর্চা একটি চলমান বিষয়। প্রতিদিনই এ বিষয়ে নতুন নতুন সৃষ্টিকর্ম যুক্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে বিপুল সৃষ্টিকর্ম যেমন একদিকে আশা-জাগানিয়া তেমনি মানের বিষয়টি নিশ্চিত না হলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতার প্রয়োজন আছে।

আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামাল চৌধুরী, জহরত আরা, মোস্তফা আল-মেহমুদ-রাসেল এবং আনজীর লিটন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ভাস্কর রাশা, দুলাল সরকার, কামরুজ্জামান, রাজীব কুমার সাহা, মাহবুবা ফারুক, আতিক আজিজ।

এছাড়া ছিল হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল’, শাহিনুর আল-আমিনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি সংসদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ঝুমা খন্দকার, চঞ্চল খান, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অণিমা রায়, মঞ্জু সাহা, মিরা ম-ল, আশরাফ মাহমুদ।

শুক্রবারের অনুষ্ঠানসূচি
শিশুপ্রহর : আজ সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে। সকাল ১০:৩০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ও পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্ব শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নিরঞ্জন অধিকারী, এজাজ ইউসুফী, বিপ্লব মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রাশিদ আসকারী।

সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে

ছবি

রোটারি ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান

ছবি

দর্শক নে, ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হল

প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র, চার শর্ত মানলে ফিরবেন জামিল আহমেদ

ছবি

বইমেলায় তপন কান্তি সরকারের বই ‘নতুন বিশ্বের নতুন ক্যারিয়ার’

ছবি

পর্দা নেমেছে সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের

ছবি

পাঠাও-এর ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

শেষ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব

ছবি

হুমকির মুখে স্থগিত ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি আয়েশা মুন্নির ‘গুলবাহার ভোর’

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প মেলা, লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য শীতল পাটির প্রদর্শনী

ছবি

সোনারগাঁয়ে ছুটির দিনে লোকারন্য লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কারের খবর নেই, এবার সরে গেলেন জুরি সদস্য

ছবি

কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রত্যাখ্যান করেছেন

এবার দশজন পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।

ছবি

সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন

ছবি

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদীচী যশোর জেলা সংসদের ২২তম সম্মেলন শুরু

ছবি

ভিভো ও এসওএস এর যৌথ উদ্যোগে ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী

ছবি

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দিনব্যাপী চ্যারিটি মেলা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে জাতীয় অধ্যাপক করার দাবি

ছবি

শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক বিভাগ চায় চলচ্চিত্রকর্মীরা

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

এবার শিল্পকলায় নাটক বন্ধের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা

ছবি

রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

ছবি

শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বান: ভয়কে জয় করে চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়

ছবি

রিয়েলমি’র আয়োজনে ন্যাশনাল মোবাইল ফটোগ্রাফি কনটেস্ট ২০২৪

ছবি

ময়মনসিংহে ৩ শতাধিক আলোকচিত্র নিয়ে ’ফ্যাসিস্ট প্রদর্শনী’

ছবি

ফ্লোরিডায় সোহরাব আলমের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী

ছবি

ডিজিটাল মিডিয়ার আসক্তি পৃথিবীকে অশান্ত করছে

জাতীয় সাংস্কৃতিক মৈত্রী নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

ছবি

মাসজুড়ে ভিভো’র ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা

ছবি

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ

ছবি

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীর পদত্যাগ

tab

সংস্কৃতি

গুণগত বইয়ের খোঁজে পাঠক

খালেদ মাহমুদ, ঢাবি

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিশ্বের অনেক দেশেই বইমেলা হয়। কোথাও কোথাও তা হয় নিছক বাণিজ্যের প্রয়োজনে। বাংলাদেশে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতি তুলে ধরা। বলা যায়, দেশের প্রকাশনা শিল্পের কর্মকা- অনেকটাই অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক। গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত থাকেন পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা। সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন হাজারো গ্রন্থপ্রেমী বাঙালি।

বইমেলায় সৃজনশীল বইয়ের প্রদর্শন ও বিপণনের উদ্যোগে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে সাফল্যের নতুন মাত্রা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বইমেলা উপলক্ষে গুণগত ও মানসম্মত বই প্রকাশিত হচ্ছে খুবই কম। হাজার হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে, সে তুলনায় ভালো বইয়ের সংখ্যা কম। ফলে কমছে পাঠক সংখ্যা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না মানসম্মত বই। অনেক বই মলাটবন্দী হয়ে আসছে কোন সম্পাদনা ছাড়াই। মানহীন, তথ্য ও মুদ্রণ ত্রুটিযুক্ত বইয়ে বাজার ভরে যাচ্ছে। এ ধরনের বই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পাঠকদের পীড়া দেয়। এ বিষয়ে প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।’

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত শতাব্দীর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকের পর সেই মাপের উল্লেখযোগ্য কোন বাঙালি লেখকের আবির্ভাব ঘটেনি। পরবর্তী পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিক ছিলেন যারা, তাদেরও বেশিরভাগ গত হয়েছেন। বর্তমানে কিছু উদীয়মান লেখক পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করছেন। তবে দেখা যায় পাঠকরা নতুন লেখকদের বই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। ফলে সেই উদীয়মান লেখকরা লেখালেখির উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। সর্বোপরি বলা যায়, বইমেলায় যেমন রয়েছে ভালো বইয়ের অভাব, তেমনি রয়েছে পাঠকের মূল্যায়নের ঘাটতি।’ মিরপুর থেকে মেলায় আসেন জারির আহমেদ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টল ঘুরেছেন। নতুন বইগুলো বেশি দেখেছেন। কিন্তু মানসম্মত ভালো বই খুবই কম পেয়েছেন। দুই-তিন ঘণ্টা ঘুরে তিনটি বই কিনেছেন। বাংলা একাডেমির তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, পূর্বে প্রকাশিত ভালো বইয়ের নতুন সংস্করণ খুব কম। বেশিরভাগ নতুন বইয়ে শিক্ষণীয় উপাদান কম। বাংলা একাডেমিও এবার তেমন ভালো বই প্রকাশ করেনি।

বইমেলায় ঘুরতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘একটি সময় বই ছিল বাঙালির মনের তৃষ্ণা নিবারণ ও অবসর যাপনের অনুষঙ্গ। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কম থাকায় এবং বইও সহজলভ্য না থাকায় পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার একটি সুন্দর চর্চা গড়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে ছিল ধার করে বই পড়ার রেওয়াজ। একটি বই হাতে হাতে ঘুরতে ঘুরতে জীর্ণ হয়ে যেত। কালের বিবর্তনে আজ এমন রেওয়াজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।’

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানসূচী
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথা-সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা ও মুক্তগদ্যচর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং ফরিদ কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রফিকুর রশীদ, সুভাষ সিংহ রায়, সরিফা সালোয়া ডিনা, মাসুদ পথিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক আদর্শ, তার মৃত্যু ও মৃত্যুঞ্জয়ী ভূমিকা উপস্থাপিত হয়েছে শতাধিক ছোটগল্প এবং তিরিশের অধিক উপন্যাস, পঞ্চাশটির মতো মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্রে। বর্তমান শতাব্দীতেও বঙ্গবন্ধু বাঙালি সাহিত্যিকদের কাছে সৃষ্টিশীলতার এক অফুরান উৎস। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যতো গবেষণা, যতো মুক্তগদ্য ও স্মৃতিগদ্য লেখা হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন ব্যক্তিকে নিয়ে এতো গবেষণা এবং এতো গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে জানা নেই। তবে এতো গবেষণা, এতো গ্রন্থ রচিত হলেও এ নিয়ে আত্মশ্লাঘায় ভোগার সুযোগ কতটুকু আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথাসাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র-মুক্তগদ্য ও স্মৃতিগদ্য সংখ্যায় বিপুল, তবে গুণগত উৎকর্ষের বিষয়টিও এক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব রচনাকর্ম আমরা উপহার পেয়েছি এখন প্রয়োজন তার যথাযথ বিশ্লেষণ।

সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক শিল্প-সাহিত্যচর্চা একটি চলমান বিষয়। প্রতিদিনই এ বিষয়ে নতুন নতুন সৃষ্টিকর্ম যুক্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে বিপুল সৃষ্টিকর্ম যেমন একদিকে আশা-জাগানিয়া তেমনি মানের বিষয়টি নিশ্চিত না হলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতার প্রয়োজন আছে।

আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামাল চৌধুরী, জহরত আরা, মোস্তফা আল-মেহমুদ-রাসেল এবং আনজীর লিটন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ভাস্কর রাশা, দুলাল সরকার, কামরুজ্জামান, রাজীব কুমার সাহা, মাহবুবা ফারুক, আতিক আজিজ।

এছাড়া ছিল হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল’, শাহিনুর আল-আমিনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি সংসদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ঝুমা খন্দকার, চঞ্চল খান, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অণিমা রায়, মঞ্জু সাহা, মিরা ম-ল, আশরাফ মাহমুদ।

শুক্রবারের অনুষ্ঠানসূচি
শিশুপ্রহর : আজ সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে। সকাল ১০:৩০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ও পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্ব শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নিরঞ্জন অধিকারী, এজাজ ইউসুফী, বিপ্লব মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রাশিদ আসকারী।

back to top