alt

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

কলেজে একাদশ শ্রেণীতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব কলেজে ফি দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম রোববার শেষ হচ্ছে। যদিও তৃতীয় ধাপ শেষে এখনও ভর্তি জন্য মনোনীত হয়নি পাঁচ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ২৯৫ জনই সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়া বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

শিক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহারের অভিযোগ

একাদশ শ্রেণীতে ক্লাশ শুরু সোমবার

সাধারণ কোটায় জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির জন্য মনোনীত না হলেও ভর্তিতে ‘শিক্ষা কোটায়’ দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। অথচ শিক্ষা প্রশাসনের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তার সন্তান এবার এসএসসি পাস করেছে বলে জানা গেছে। শিক্ষা কোটার অপব্যবহারের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

এছাড়া কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির জন্য মনোনীত অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার শনিবার,(১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সংবাদকে বলেছেন, কোটায় আবেদন করে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেই ভর্তি হওয়া যাবে না। তারা যখন কলেজে ভর্তি হতে যাবে তখন কোটাসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র কলেজে জমা দিতে হবে।

শিক্ষা কোটায় আবেদনের বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড ও বুয়েটের (অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনাকারী) কিছু করার থাকে না জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘এ বিষয়টি স্ব-স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে। তারা কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে ভর্তি নিতে পারবে না। সেখানে কোটার প্রমাণপত্র দেখাতে না পারলে ভর্তির মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে। এটা প্রতি বছরই হয়ে আসছে।’

অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সময় প্রমাণ হিসেবে কোনো কাগজপত্র বা সনদ দিতে হয় না। কলেজে ভর্তির সময় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব কলেজে রোববার ফি জমা দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি হবে। তৃতীয় ধাপের পরও যেসব শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি তাদের জন্য চতুর্থ পর্যায়ে ভর্তি আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। রোববার এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতে পারে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রিজাউল হক জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপের পর কত শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে আছেন তা রোববার বোঝা যাবে। সেটি বিবেচনা নিয়ে চতুর্থ পর্যায়ে ভর্তি আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছ, প্রথম ধাপে আবেদন করেছিলেন দশ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ফি জমা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করেছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজে মনোনীত হয়েনে।

দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শেষ হয় ২৫ আগস্ট। এ ধাপে আবেদন করে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী, যার ফল প্রকাশ হয় গত ২৮ আগস্ট। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির জন্য সর্বশেষ মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সবমিলিয়ে তিন ধাপে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ১ হাজার ৫০৬ জন, শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ৭৭ জন এবং শিক্ষা কোটা-২-এ এক হাজার ২৯৪ জন।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে মনোনীত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম গত ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম রোববার শেষ হচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরু হচ্ছে।

ভর্তিতে শিক্ষা কোটা নিয়ে বির্তক:

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-১) এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন সরকারি স্কুল-কলেজ ও কার্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-২) রয়েছে।

আলাদা কোটা হওয়া সত্ত্বেও অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অনেকেই শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করে নির্বাচিত হয়েছে।

প্রথম ধাপের আবেদনের ফলাফল প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির। এরপর এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে বলা হয়, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যয়নপত্র অর্থাৎ কোটার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। এর সঠিক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ভর্তি বাতিল হবে।

তৃতীয় ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে দেখা যায়, শিক্ষা কোটা-১ বিপরীতে ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এটিকে অনিয়ম বলছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। কারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের সন্তান এবার এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাস করেছে; যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেই আবেদন করেছেন।

ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, শিক্ষা কোটায় কেউ ভর্তির জন্য মনোনীত হলে তার ভর্তি বাতিল করা ‘কঠিন’। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে নানা রকম তদবির আসে।

তিনি শনিবার আরও জানান, ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে এবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে; যাদের মধ্যে শনিবার পর্যন্ত মাত্র তিনজন ভর্তি হয়েছে। বাকি ভর্তি হতে আসেনি। আর প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় শিক্ষা কোটায়ও কয়েকজনের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ৫-১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রমে আবেদন করেছে। এরপর মেধা, কোটা ও পছন্দের ভিত্তিতে একেকজনের ভর্তি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের নীতিমালা অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ আসন মেধার ভিত্তিতে পূরণ হয়। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। তবে পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষা কোটা।

গত ২৪ আগস্ট আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির সাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যারা আবেদন করেছে, তাদের পুনরায় আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নোটিশের পরেও এ বিষয়ে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কারণ, প্রথম দফায় শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ২৬৩ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। আর সব দফায় বাছাই শেষেও ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী এ কোটায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষা কোটা-২-এর জন্য যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করেছে।

গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৯ লাখ চার হাজার ৮৬ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন সর্বোচ্চ স্কোর অর্থাৎ জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) পেয়েছে। পরবর্তীতে পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে নতুন করে আরও প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করেছে।

ছবি

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে ১০ শিক্ষার্থী

ছবি

বুয়েটের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন শুরু ১৬ নভেম্বর

ছবি

শনিবারেও ক্লাস এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

ছবি

বছরে ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের

ছবি

৪৯তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ২ নভেম্বর শুরু

ছবি

সিরাজগঞ্জে ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

ছবি

ইডেন ও বদরুন্নেসায় ‘সহশিক্ষা’ চালুর প্রস্তাব বাতিলের দাবি

আজ থেকে আমরণ অনশনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের সব পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

ঢাকা কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ‘হাতাহাতি’: সরকারি কলেজগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সূচি প্রকাশ

ছবি

এমআইএসটির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

ছবি

এইচএসসির ফল ১৬ অক্টোবর প্রকাশ হতে পারে

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে খুলেছে স্কুল, রোববার থেকে কলেজ

ছবি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ২-৩ হাজার টাকার প্রস্তাব পাঠাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

১২ ডিসেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

ছবি

শিক্ষক দিবসে নারায়ণগঞ্জে ৫ শিক্ষককে সন্মাননা দেয়া হয়েছে

ছবি

এমপিও শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাড়লো ৫০০ টাকা, প্রত্যাখান

ছবি

ইউজিসি সদস্য হলেন চাবিপ্রবি উপাচার্য

ছবি

শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের হার্টে অস্ত্রোপচার

ছবি

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান-সহকারী প্রধান নিয়োগেও নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সরকার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার ফল ৬০ দিনের মধ্যেই

ছবি

স্বাতন্ত্র্য ও শিক্ষার উন্নয়নে ‘অক্সফোর্ড মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সাত কলেজের শিক্ষকদের

ছবি

অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর

ছবি

জরিপ: পিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের, ভোট দিতে চান ৯৪ শতাংশ

ছবি

এসএসসি পরীক্ষায় ১৪০টি ভেন্যু কেন্দ্রের সবগুলোই বাতিল করছে যশোর বোর্ড

ছবি

র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনে নেই অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়!

ছবি

ইইডি ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি: কাউন্সিল নিয়ে কর্তৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’

ছবি

ডিমলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

৪৭তম বিসিএস: পৌনে চার লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রিলিমিনারি সম্পন্ন

ছবি

ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ: উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষা সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১১ দিনের লম্বা ছুটিতে স্কুল-কলেজ

ছবি

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই: প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে

ছবি

ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত

ছবি

এসএসসি ২০২৬: নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত, অনিয়মিতদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস

tab

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

রাকিব উদ্দিন

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কলেজে একাদশ শ্রেণীতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব কলেজে ফি দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম রোববার শেষ হচ্ছে। যদিও তৃতীয় ধাপ শেষে এখনও ভর্তি জন্য মনোনীত হয়নি পাঁচ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ২৯৫ জনই সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়া বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

শিক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহারের অভিযোগ

একাদশ শ্রেণীতে ক্লাশ শুরু সোমবার

সাধারণ কোটায় জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির জন্য মনোনীত না হলেও ভর্তিতে ‘শিক্ষা কোটায়’ দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। অথচ শিক্ষা প্রশাসনের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তার সন্তান এবার এসএসসি পাস করেছে বলে জানা গেছে। শিক্ষা কোটার অপব্যবহারের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

এছাড়া কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির জন্য মনোনীত অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার শনিবার,(১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সংবাদকে বলেছেন, কোটায় আবেদন করে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেই ভর্তি হওয়া যাবে না। তারা যখন কলেজে ভর্তি হতে যাবে তখন কোটাসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র কলেজে জমা দিতে হবে।

শিক্ষা কোটায় আবেদনের বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড ও বুয়েটের (অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনাকারী) কিছু করার থাকে না জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘এ বিষয়টি স্ব-স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে। তারা কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে ভর্তি নিতে পারবে না। সেখানে কোটার প্রমাণপত্র দেখাতে না পারলে ভর্তির মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে। এটা প্রতি বছরই হয়ে আসছে।’

অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সময় প্রমাণ হিসেবে কোনো কাগজপত্র বা সনদ দিতে হয় না। কলেজে ভর্তির সময় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব কলেজে রোববার ফি জমা দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি হবে। তৃতীয় ধাপের পরও যেসব শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি তাদের জন্য চতুর্থ পর্যায়ে ভর্তি আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। রোববার এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতে পারে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রিজাউল হক জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপের পর কত শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে আছেন তা রোববার বোঝা যাবে। সেটি বিবেচনা নিয়ে চতুর্থ পর্যায়ে ভর্তি আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছ, প্রথম ধাপে আবেদন করেছিলেন দশ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ফি জমা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করেছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজে মনোনীত হয়েনে।

দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শেষ হয় ২৫ আগস্ট। এ ধাপে আবেদন করে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী, যার ফল প্রকাশ হয় গত ২৮ আগস্ট। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির জন্য সর্বশেষ মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সবমিলিয়ে তিন ধাপে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ১ হাজার ৫০৬ জন, শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ৭৭ জন এবং শিক্ষা কোটা-২-এ এক হাজার ২৯৪ জন।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে মনোনীত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম গত ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম রোববার শেষ হচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরু হচ্ছে।

ভর্তিতে শিক্ষা কোটা নিয়ে বির্তক:

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-১) এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন সরকারি স্কুল-কলেজ ও কার্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ১ শতাংশ কোটা (শিক্ষা কোটা-২) রয়েছে।

আলাদা কোটা হওয়া সত্ত্বেও অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অনেকেই শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করে নির্বাচিত হয়েছে।

প্রথম ধাপের আবেদনের ফলাফল প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির। এরপর এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে বলা হয়, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যয়নপত্র অর্থাৎ কোটার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। এর সঠিক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ভর্তি বাতিল হবে।

তৃতীয় ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে দেখা যায়, শিক্ষা কোটা-১ বিপরীতে ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এটিকে অনিয়ম বলছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। কারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের সন্তান এবার এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাস করেছে; যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেই আবেদন করেছেন।

ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, শিক্ষা কোটায় কেউ ভর্তির জন্য মনোনীত হলে তার ভর্তি বাতিল করা ‘কঠিন’। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে নানা রকম তদবির আসে।

তিনি শনিবার আরও জানান, ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে এবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে; যাদের মধ্যে শনিবার পর্যন্ত মাত্র তিনজন ভর্তি হয়েছে। বাকি ভর্তি হতে আসেনি। আর প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় শিক্ষা কোটায়ও কয়েকজনের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ৫-১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রমে আবেদন করেছে। এরপর মেধা, কোটা ও পছন্দের ভিত্তিতে একেকজনের ভর্তি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের নীতিমালা অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ আসন মেধার ভিত্তিতে পূরণ হয়। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। তবে পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষা কোটা।

গত ২৪ আগস্ট আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির সাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যারা আবেদন করেছে, তাদের পুনরায় আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নোটিশের পরেও এ বিষয়ে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কারণ, প্রথম দফায় শিক্ষা কোটা-১-এ ২ হাজার ২৬৩ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। আর সব দফায় বাছাই শেষেও ২ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী এ কোটায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষা কোটা-২-এর জন্য যোগ্য অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা কোটা-১-এ আবেদন করেছে।

গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৯ লাখ চার হাজার ৮৬ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন সর্বোচ্চ স্কোর অর্থাৎ জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) পেয়েছে। পরবর্তীতে পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে নতুন করে আরও প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করেছে।

back to top