alt

বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সাত কলেজের শিক্ষকদের

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরোধীতা এবার একযোগে মানববন্ধন করেছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকরা। তারা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচনের পাশাপাশি কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের (শিক্ষক) পদগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দাবি করে মানববন্ধনে বলা হয়, এ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হবে। শিক্ষার্থীদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।

বুধবার,(২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একযোগে এ মানববন্ধন করেন সাত কলেজের শিক্ষকরা। এ সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। বিসিএস জেনারেল অ্যাডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়।

শিক্ষকরা বলেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, তারা সেটির বিপক্ষে নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে অধিভুক্তিমূলক। কোনোভাবেই কলেজের সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা যাবে না। কলেজগুলোর নামে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষকদের মানববন্ধনে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এমএম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে এ সাত কলেজের দিকে কেন নজর দেয়া হলো? আমি জানি এর পেছনে কী কারণ আছে’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল চাচ্ছে এ সাতটা কলেজকে ভ্যানিশ (বিলুপ্ত করা) করে দেয়ার জন্য। সেটি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চালু করার জন্য।’

ঢাকা কলেজে মানববন্ধনে অংশে নেয়া শিক্ষকরা বলেছেন, তারা গুণগত শিক্ষার পক্ষে। এজন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা হোক। কিন্তু যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা বলা হচ্ছে, তাতে কলেজগুলোর সমস্যা বাড়বে। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে দাবি করে শিক্ষকরা বলেন, নারী শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা সংকোচন হোক, তারা সেটি চান না। আবার এ সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক আছে। উচ্চ মাধ্যমিকের মান কমে যাওয়া বা উচ্চ মাধ্যমিকের অবকাঠামোগত সংকোচনের পদক্ষেপ

তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর শিক্ষা ক্যাডারের পদগুলোর সুরক্ষা চান শিক্ষকরা।

মানববন্ধন থেকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবির কথা জানানো হয়। এগুলোর মধ্যে আছে- সাত কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না; কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিজ নিজ কলেজের নামে অক্ষুন্ন রাখা; বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন না করা; প্রয়োজনে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা; সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেয়া যাবে না ইত্যাদি।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করেছিলেন এ সাত কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষক। ওইদিন তারা নিজেদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন।

ঢাকার সাত সাত কলেজ এক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালে এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাবি থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কিন্তু প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো প্রতিটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে (অনুষদের মতো) বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে ও ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীরে।উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে

এ বিষয় নিয়ে এখন ত্রিমুখী অবস্থান নিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একদিকে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। আবার শিক্ষার্থীরাও দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এরমধ্যে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কলেজ অক্ষুন্ন রাখার পক্ষে আন্দোলনে নেমেছে। ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বুধবার ও কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেছে। আগের দিন তারা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের প্রতিবাদে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরা বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার এ প্রতিষ্ঠান সংকুচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য তাদের দাবি, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নতুন জায়গায় করা হোক। সেটি পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ বা ঢাকার পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো এলাকায় করতে হবে। কোনোভাবেই বিদ্যমান মহিলা কলেজকে সংকুচিত করে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যাদেশের খসড়া একটি বৈষম্যমূলক এবং অবিবেচনাপ্রসূত দলিল। সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চায় শিক্ষার্থীরা। অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন না হলে ফের রাজপথে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করে আসা ওই সব কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ছবি

স্বাতন্ত্র্য ও শিক্ষার উন্নয়নে ‘অক্সফোর্ড মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের

ছবি

অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর

ছবি

জরিপ: পিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের, ভোট দিতে চান ৯৪ শতাংশ

ছবি

এসএসসি পরীক্ষায় ১৪০টি ভেন্যু কেন্দ্রের সবগুলোই বাতিল করছে যশোর বোর্ড

ছবি

র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনে নেই অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়!

ছবি

ইইডি ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি: কাউন্সিল নিয়ে কর্তৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’

ছবি

ডিমলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

৪৭তম বিসিএস: পৌনে চার লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রিলিমিনারি সম্পন্ন

ছবি

ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ: উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষা সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১১ দিনের লম্বা ছুটিতে স্কুল-কলেজ

ছবি

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই: প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে

ছবি

ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত

ছবি

এসএসসি ২০২৬: নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত, অনিয়মিতদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস

ছবি

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু

ছবি

এসএসসি খাতা মূল্যায়নে অবহেলা, কালো তালিকায় ৭১ শিক্ষক

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে গেল সাত কলেজ

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার্থী তৈরি করছে: উপাচার্য

ছবি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: ১৫ দিন পর মাইলস্টোন কলেজে লেখাপড়া শুরু

ছবি

পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ

ছবি

মারিয়া স্কোডোস্কা-কুরি ডক্টরাল ফেলোশিপ পেলেন আইইউবির আবরার

ছবি

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মানব বন্ধন

ছবি

কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল নারায়ণগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে এআই অ্যাপ ‘এলসা স্পিক’ এর যাত্রা শুরু

ছবি

ইসলামপুরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট উপহার

ছবি

সর্বোচ্চ ফি সাড়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ

ছবি

স্থগিত হওয়া চার দিনের এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

সহিংসতায় রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, এক বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

স্বতন্ত্র কাউন্সিলের দাবিতে আন্দোলন: ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত

ছবি

পাসের হার ও জিপিএ-৫-এ ছাত্রীদের এগিয়ে থাকার ধারা বজায়

ছবি

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে এসএসসি ও সমমানের ফল, পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১১ জুলাই থেকে

ছবি

এসএসসির ফল ১০ থেকে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে

ছবি

শিক্ষার্থীর ‘কটূক্তি’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষায় বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি

২৬ জুন শুরু এইচএসসি, কেন্দ্র এলাকায় চলাচলে ডিএমপির বিধিনিষেধ জারি

ছবি

রাতের ঘটনায় আসন বাতিল, শৃঙ্খলা কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার প্রস্তুতি

tab

বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সাত কলেজের শিক্ষকদের

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরোধীতা এবার একযোগে মানববন্ধন করেছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকরা। তারা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচনের পাশাপাশি কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের (শিক্ষক) পদগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দাবি করে মানববন্ধনে বলা হয়, এ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হবে। শিক্ষার্থীদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।

বুধবার,(২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একযোগে এ মানববন্ধন করেন সাত কলেজের শিক্ষকরা। এ সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। বিসিএস জেনারেল অ্যাডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়।

শিক্ষকরা বলেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, তারা সেটির বিপক্ষে নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে অধিভুক্তিমূলক। কোনোভাবেই কলেজের সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা যাবে না। কলেজগুলোর নামে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষকদের মানববন্ধনে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এমএম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে এ সাত কলেজের দিকে কেন নজর দেয়া হলো? আমি জানি এর পেছনে কী কারণ আছে’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল চাচ্ছে এ সাতটা কলেজকে ভ্যানিশ (বিলুপ্ত করা) করে দেয়ার জন্য। সেটি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চালু করার জন্য।’

ঢাকা কলেজে মানববন্ধনে অংশে নেয়া শিক্ষকরা বলেছেন, তারা গুণগত শিক্ষার পক্ষে। এজন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা হোক। কিন্তু যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা বলা হচ্ছে, তাতে কলেজগুলোর সমস্যা বাড়বে। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে দাবি করে শিক্ষকরা বলেন, নারী শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা সংকোচন হোক, তারা সেটি চান না। আবার এ সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক আছে। উচ্চ মাধ্যমিকের মান কমে যাওয়া বা উচ্চ মাধ্যমিকের অবকাঠামোগত সংকোচনের পদক্ষেপ

তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর শিক্ষা ক্যাডারের পদগুলোর সুরক্ষা চান শিক্ষকরা।

মানববন্ধন থেকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবির কথা জানানো হয়। এগুলোর মধ্যে আছে- সাত কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না; কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিজ নিজ কলেজের নামে অক্ষুন্ন রাখা; বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন না করা; প্রয়োজনে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা; সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেয়া যাবে না ইত্যাদি।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করেছিলেন এ সাত কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষক। ওইদিন তারা নিজেদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন।

ঢাকার সাত সাত কলেজ এক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালে এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাবি থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কিন্তু প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো প্রতিটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে (অনুষদের মতো) বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে ও ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীরে।উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে

এ বিষয় নিয়ে এখন ত্রিমুখী অবস্থান নিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একদিকে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। আবার শিক্ষার্থীরাও দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এরমধ্যে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কলেজ অক্ষুন্ন রাখার পক্ষে আন্দোলনে নেমেছে। ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বুধবার ও কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেছে। আগের দিন তারা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের প্রতিবাদে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরা বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার এ প্রতিষ্ঠান সংকুচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য তাদের দাবি, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নতুন জায়গায় করা হোক। সেটি পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ বা ঢাকার পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো এলাকায় করতে হবে। কোনোভাবেই বিদ্যমান মহিলা কলেজকে সংকুচিত করে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যাদেশের খসড়া একটি বৈষম্যমূলক এবং অবিবেচনাপ্রসূত দলিল। সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চায় শিক্ষার্থীরা। অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন না হলে ফের রাজপথে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করে আসা ওই সব কলেজের শিক্ষার্থীরা।

back to top