alt

১২ দিনে সিরিয়া দখল করে নিলো এইচটিএস: এই বিদ্রোহী কারা?

সেবাস্তিয়ান আশার

: রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছে, “দামেস্ক এখন আসাদমুক্ত”

সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অপ্রতিরোধ্য অভিযানের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটেছে। রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছে, “এখন দামেস্ক আসাদমুক্ত।” দেশজুড়ে বিদ্রোহীদের এই দ্রুত অগ্রযাত্রা আসাদের ২৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটিয়েছে।

গত রবিবার ভোরে বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করে। শহরের রাস্তায় কোনো সেনাবাহিনী মোতায়েনের চিহ্ন দেখা যায়নি। বিদ্রোহীদের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে সেনা কমান্ডাররাও ঘোষণা দিয়েছেন, আসাদের শাসন আর কার্যকর নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর প্রধান স্কয়ারে জমায়েত হয়ে ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘আসাদের পতন’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন। শহরজুড়ে উদযাপনের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে দামেস্ক ত্যাগ করেছেন। ফ্লাইটের গতিপথ অনুযায়ী এটি প্রথমে উপকূলীয় এলাকায় উড়ে গেলেও পরে আকস্মিকভাবে দিক পরিবর্তন করে অজ্ঞাত গন্তব্যে উধাও হয়ে যায়। যদিও উড়োজাহাজে আসাদ ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হয়নি।

এইচটিএস কারা?

মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস আলেপ্পো থেকে শুরু করে রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। তারা দামেস্ককে মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, "একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। নতুন যুগের সূচনা হলো।"

হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সিরিয়ার বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ২০১১ সালে জাবহাত আল-নুসরা নামে এই গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করে। শুরুতে এটি সরাসরি আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির ভূমিকা ছিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে বাশার আল-আসাদবিরোধী যুদ্ধে এই গোষ্ঠীকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর বলে বিবেচনা করা হতো।

আদর্শের বিবর্তন

প্রাথমিক অবস্থায় বিপ্লবী চেতনায় অনুপ্রাণিত হলেও, সময়ের সঙ্গে ইসলামি জিহাদি মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ে হায়াত তাহরির আল-শাম। এই আদর্শিক পরিবর্তনই ‘ফ্রি সিরিয়া’ ব্যানারে থাকা অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিরোধের জন্ম দেয়।

২০১৬ সালে সংগঠনের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি জাবহাত আল-নুসরা বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে এইচটিএস আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে একীভূত হয়ে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়।

ইদলিবে কার্যক্রম ও বিতর্ক

এইচটিএস সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে কার্যত নিজেদের শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল। তবে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং স্থানীয় অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত সংগঠনটির শাসনব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে এইচটিএস সিরিয়ায় বৃহত্তর খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মৌলবাদী ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেয়। তবে ইসলামিক স্টেটের মতো তাদেরও এই প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরিয়ার সংঘাতে ভূমিকা

এইচটিএস কিছু সময়ের জন্য সিরিয়ার সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা আলেপ্পো এবং অন্যান্য শহরে কিছু সামরিক উদ্যোগ নিলেও আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সিরিয়ার প্রধান বিদ্রোহী শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

হায়াত তাহরির আল-শাম এখনো সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী হলেও তাদের আদর্শিক অবস্থান, অভ্যন্তরীণ বিরোধ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে।

বিদ্রোহীদের লক্ষ্য

বিদ্রোহীরা একটি নতুন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গঠনের অঙ্গীকার করেছে। তাঁদের ভাষায়, "এটি হবে এমন এক সিরিয়া যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবেন।" তাদের দাবি, এই বিজয় আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের এই দ্রুতগতির জয়যাত্রা কেবল দেশটির ইতিহাস নয়, গোটা অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে।

বিদ্রোহী নেতার বার্তা

বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন, “যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের আঘাত করা হবে না।”

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ

বাশার আল-আসাদের অনুপস্থিতিতে বিদ্রোহীদের এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ঘাজি আল-জালালি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিদ্রোহীরা একটি সমন্বিত প্রশাসন গঠনের আশ্বাস দিয়েছে।

বিদ্রোহীদের এই বিজয় দেশটির ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। একটি দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়ার জনগণ কি সত্যিই শান্তি পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।

[লেখক:মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সম্পাদক, বিবিসি]

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

ছবি

দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৯ জন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি’ চায় ইরান

ছবি

জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন

শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেয়া হবে: ট্রাম্প

ছবি

বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ট্রাম্পের, ক্ষমা চাইলেন সমির শাহ

ছবি

বিবিসি এখন বিশৃঙ্খল, নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান: সাবেক কর্মকর্তা অলিভার

ছবি

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাদশাহ আব্দুল আজিজ মেডেল পেলেন পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল

ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দেবে না

ছবি

সারকোজিকে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফরাসি আদালত

ছবি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নৌকাডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ১১

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ

ছবি

নয়া দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভ, ডজনের বেশি আটক

ছবি

একুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গার মধ্যে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু

ছবি

মামদানির নিউইয়র্ক পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় মৃত্যু ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করলো হামাস

ছবি

পাকিস্তানে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল সিনেটে উপস্থাপন

ছবি

সংবিধান সংশোধনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা বিরোধী জোটের

ছবি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ছবি

সিরিয়া- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, ওয়াশিংটনে আল শারা

ছবি

তীব্র দূষণের ঝুঁকিতে গাজার জনস্বাস্থ্য

ছবি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি ইংল্যান্ড

ছবি

মামদানির প্রচারকৌশলে এগোনোর চেষ্টা ট্রাম্পের

ছবি

২৬ মার্কিন ধনকুবেরের সোয়া দুই কোটি ডলারও মামদানির জয় ঠেকাতে পারেনি

ছবি

আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল

ছবি

পুতিনের সঙ্গে এখনও বৈঠকের সুযোগ আছে : ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা

ছবি

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম মুছলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অ্যান্টার্কটিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

ছবি

ভেস্তে গেলো আফগানিস্তান-পাকিস্তান আলোচনা

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত : রাজনাথ সিং

ছবি

প্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থিরা মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন

ছবি

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্প-মামদানি কি সমানে সমান

ছবি

কেন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সুদানের নাগরিকরা

tab

১২ দিনে সিরিয়া দখল করে নিলো এইচটিএস: এই বিদ্রোহী কারা?

সেবাস্তিয়ান আশার

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছে, “দামেস্ক এখন আসাদমুক্ত”

রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অপ্রতিরোধ্য অভিযানের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটেছে। রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছে, “এখন দামেস্ক আসাদমুক্ত।” দেশজুড়ে বিদ্রোহীদের এই দ্রুত অগ্রযাত্রা আসাদের ২৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটিয়েছে।

গত রবিবার ভোরে বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করে। শহরের রাস্তায় কোনো সেনাবাহিনী মোতায়েনের চিহ্ন দেখা যায়নি। বিদ্রোহীদের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে সেনা কমান্ডাররাও ঘোষণা দিয়েছেন, আসাদের শাসন আর কার্যকর নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর প্রধান স্কয়ারে জমায়েত হয়ে ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘আসাদের পতন’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন। শহরজুড়ে উদযাপনের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে দামেস্ক ত্যাগ করেছেন। ফ্লাইটের গতিপথ অনুযায়ী এটি প্রথমে উপকূলীয় এলাকায় উড়ে গেলেও পরে আকস্মিকভাবে দিক পরিবর্তন করে অজ্ঞাত গন্তব্যে উধাও হয়ে যায়। যদিও উড়োজাহাজে আসাদ ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হয়নি।

এইচটিএস কারা?

মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস আলেপ্পো থেকে শুরু করে রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। তারা দামেস্ককে মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, "একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। নতুন যুগের সূচনা হলো।"

হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সিরিয়ার বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ২০১১ সালে জাবহাত আল-নুসরা নামে এই গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করে। শুরুতে এটি সরাসরি আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির ভূমিকা ছিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে বাশার আল-আসাদবিরোধী যুদ্ধে এই গোষ্ঠীকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর বলে বিবেচনা করা হতো।

আদর্শের বিবর্তন

প্রাথমিক অবস্থায় বিপ্লবী চেতনায় অনুপ্রাণিত হলেও, সময়ের সঙ্গে ইসলামি জিহাদি মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ে হায়াত তাহরির আল-শাম। এই আদর্শিক পরিবর্তনই ‘ফ্রি সিরিয়া’ ব্যানারে থাকা অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিরোধের জন্ম দেয়।

২০১৬ সালে সংগঠনের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি জাবহাত আল-নুসরা বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে এইচটিএস আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে একীভূত হয়ে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়।

ইদলিবে কার্যক্রম ও বিতর্ক

এইচটিএস সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে কার্যত নিজেদের শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল। তবে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং স্থানীয় অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত সংগঠনটির শাসনব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে এইচটিএস সিরিয়ায় বৃহত্তর খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মৌলবাদী ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেয়। তবে ইসলামিক স্টেটের মতো তাদেরও এই প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরিয়ার সংঘাতে ভূমিকা

এইচটিএস কিছু সময়ের জন্য সিরিয়ার সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা আলেপ্পো এবং অন্যান্য শহরে কিছু সামরিক উদ্যোগ নিলেও আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সিরিয়ার প্রধান বিদ্রোহী শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

হায়াত তাহরির আল-শাম এখনো সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী হলেও তাদের আদর্শিক অবস্থান, অভ্যন্তরীণ বিরোধ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে।

বিদ্রোহীদের লক্ষ্য

বিদ্রোহীরা একটি নতুন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গঠনের অঙ্গীকার করেছে। তাঁদের ভাষায়, "এটি হবে এমন এক সিরিয়া যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবেন।" তাদের দাবি, এই বিজয় আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের এই দ্রুতগতির জয়যাত্রা কেবল দেশটির ইতিহাস নয়, গোটা অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে।

বিদ্রোহী নেতার বার্তা

বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন, “যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের আঘাত করা হবে না।”

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ

বাশার আল-আসাদের অনুপস্থিতিতে বিদ্রোহীদের এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ঘাজি আল-জালালি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিদ্রোহীরা একটি সমন্বিত প্রশাসন গঠনের আশ্বাস দিয়েছে।

বিদ্রোহীদের এই বিজয় দেশটির ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। একটি দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়ার জনগণ কি সত্যিই শান্তি পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।

[লেখক:মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সম্পাদক, বিবিসি]

back to top