মাত্র সেকেন্ডখানেক আকাশে ছিল এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১। এরপরই ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
এটি ছিল ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এবং রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনা। উড়োজাহাজে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে গেছেন। উড়োজাহাজটি একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ায় সেখানেও কিছু প্রাণহানি ঘটেছে।
তদন্তকারীদের এখন মূল দায়িত্ব হলো ধ্বংসস্তূপ থেকে তথ্য উদ্ধার করা, ‘ব্ল্যাক বক্স’—ককপিট ভয়েস ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার—বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা, কীভাবে উড্ডয়নের পরপরই এমন বিপর্যয় ঘটল।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়, আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে এক বছর সময় পায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি আহমেদাবাদ থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করে। ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল ও সহ-পাইলট ক্লাইভ কুন্দার। বোর্ডে ছিলেন ২৪২ জন যাত্রী ও প্রায় ১০০ টন জ্বালানি। উড্ডয়নের কিছু সময় পরই ‘মে ডে’ সংকেত পাঠানো হয়—এটাই ছিল বিমানের শেষ বার্তা। মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর এক সাবেক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন কিশোর এই ঘটনাকে বলেছেন “রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার”—অর্থাৎ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’। তিনি জানান, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনা এর আগে দেখেননি।
তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন ঘটল এই বিপর্যয়? পাখির ধাক্কা, জ্বালানির দূষণ, প্রচণ্ড গরমে ফ্ল্যাপ কাজ না করা, ইঞ্জিন মেরামতের ত্রুটি কিংবা ক্রুদের অসাবধানতা—সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ যাই হোক, এর ক্লু মিলতে পারে কেবল ব্ল্যাক বক্স থেকে। এতে থাকে উচ্চতা, গতি, পথ, ইঞ্জিনের অবস্থা, ককপিটের কথোপকথন, রেডিও বার্তা, ওয়ার্নিং অ্যালার্মসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক শব্দ।
ব্ল্যাক বক্সের তথ্যের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে প্রত্যেকটি পোড়া তার, ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনের ব্লেড, রক্ষণাবেক্ষণের নথি, এমনকি ককপিটের পটভূমির শব্দও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তদন্তের প্রথম বড় সূত্র পাওয়া যেতে পারে ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ডের সাবেক পরিচালক পিটার গ্যোলজ বলেন, “ইঞ্জিন যদি চালু থাকা অবস্থায় আঘাত পায়, তা একভাবে বোঝা যায়। আর যদি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তদন্তের নজর যাবে ককপিটের দিকে।”
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তা পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের আরলিংটনে বোয়িং সদর দপ্তরে। বোয়িংও এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে চায়।
গ্যোলজ জানান, যদি দেখা যায় ইঞ্জিন পূর্ণ শক্তিতে চলছিল, তাহলে ফ্ল্যাপ ও স্ল্যাট ঠিকমতো কাজ করছিল কিনা তা দেখা হবে। সেগুলোও ঠিক থাকলে তদন্ত আরও জটিল হয়ে উঠবে। আর যদি সমস্যা থাকে ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেমে, তবে তা গোটা উড়োজাহাজ শিল্পের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
এই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি উড়োজাহাজের পারফরম্যান্স, জ্বালানি ব্যবহার ও রুট নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ২০১১ সাল থেকে ১১০০টির বেশি বোয়িং ৭৮৭ আকাশে উড়ছে। ফলে এই মডেলে ত্রুটি থাকলে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার ৩৩টি বোয়িং ৭৮৭-এর মধ্যে ২৪টি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে বোয়িংয়ের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কেলি ওর্টবার্গ জানান, তদন্তে তারা ভারতের তদন্ত ব্যুরোর নেতৃত্বে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী।
তদন্তে অংশ নিচ্ছে বোয়িং, ইঞ্জিন নির্মাতা জেনারেল ইলেকট্রিক, এয়ার ইন্ডিয়া, ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের এনটিএসবি এবং যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল।
গ্যোলজ বলেন, “সাধারণত কী ঘটেছে, সেটা দ্রুত বোঝা যায়। কিন্তু কেন ঘটেছে, সেটা বুঝতেই বেশি সময় লাগে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেইনে বিধ্বস্ত হওয়া মালয়েশিয়ান বিমানের ঘটনায় ধ্বংসাবশেষ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের প্রমাণ।
এই তদন্তেও দেখা হচ্ছে জ্বালানির নমুনা, ইঞ্জিনের ভেতরের লাইন, ফিল্টার, ভালভসহ রিফুয়েলিংয়ের সরঞ্জামও। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখবেন রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড, যন্ত্রপাতি বদলের তথ্য, ক্রুদের লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ, সিমুলেটর ফলাফল এবং তারা পূর্বে পরিচালিত ফ্লাইটগুলোর রেকর্ড।
গ্যোলজ মনে করেন, “এই তদন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হলেও প্রাথমিক কিছু ইঙ্গিত দ্রুত পাওয়া সম্ভব।”
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
মাত্র সেকেন্ডখানেক আকাশে ছিল এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১। এরপরই ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
এটি ছিল ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এবং রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনা। উড়োজাহাজে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে গেছেন। উড়োজাহাজটি একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ায় সেখানেও কিছু প্রাণহানি ঘটেছে।
তদন্তকারীদের এখন মূল দায়িত্ব হলো ধ্বংসস্তূপ থেকে তথ্য উদ্ধার করা, ‘ব্ল্যাক বক্স’—ককপিট ভয়েস ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার—বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা, কীভাবে উড্ডয়নের পরপরই এমন বিপর্যয় ঘটল।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়, আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে এক বছর সময় পায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি আহমেদাবাদ থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করে। ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল ও সহ-পাইলট ক্লাইভ কুন্দার। বোর্ডে ছিলেন ২৪২ জন যাত্রী ও প্রায় ১০০ টন জ্বালানি। উড্ডয়নের কিছু সময় পরই ‘মে ডে’ সংকেত পাঠানো হয়—এটাই ছিল বিমানের শেষ বার্তা। মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর এক সাবেক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন কিশোর এই ঘটনাকে বলেছেন “রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার”—অর্থাৎ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’। তিনি জানান, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনা এর আগে দেখেননি।
তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন ঘটল এই বিপর্যয়? পাখির ধাক্কা, জ্বালানির দূষণ, প্রচণ্ড গরমে ফ্ল্যাপ কাজ না করা, ইঞ্জিন মেরামতের ত্রুটি কিংবা ক্রুদের অসাবধানতা—সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ যাই হোক, এর ক্লু মিলতে পারে কেবল ব্ল্যাক বক্স থেকে। এতে থাকে উচ্চতা, গতি, পথ, ইঞ্জিনের অবস্থা, ককপিটের কথোপকথন, রেডিও বার্তা, ওয়ার্নিং অ্যালার্মসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক শব্দ।
ব্ল্যাক বক্সের তথ্যের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে প্রত্যেকটি পোড়া তার, ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনের ব্লেড, রক্ষণাবেক্ষণের নথি, এমনকি ককপিটের পটভূমির শব্দও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তদন্তের প্রথম বড় সূত্র পাওয়া যেতে পারে ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ডের সাবেক পরিচালক পিটার গ্যোলজ বলেন, “ইঞ্জিন যদি চালু থাকা অবস্থায় আঘাত পায়, তা একভাবে বোঝা যায়। আর যদি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তদন্তের নজর যাবে ককপিটের দিকে।”
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তা পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের আরলিংটনে বোয়িং সদর দপ্তরে। বোয়িংও এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে চায়।
গ্যোলজ জানান, যদি দেখা যায় ইঞ্জিন পূর্ণ শক্তিতে চলছিল, তাহলে ফ্ল্যাপ ও স্ল্যাট ঠিকমতো কাজ করছিল কিনা তা দেখা হবে। সেগুলোও ঠিক থাকলে তদন্ত আরও জটিল হয়ে উঠবে। আর যদি সমস্যা থাকে ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেমে, তবে তা গোটা উড়োজাহাজ শিল্পের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
এই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি উড়োজাহাজের পারফরম্যান্স, জ্বালানি ব্যবহার ও রুট নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ২০১১ সাল থেকে ১১০০টির বেশি বোয়িং ৭৮৭ আকাশে উড়ছে। ফলে এই মডেলে ত্রুটি থাকলে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার ৩৩টি বোয়িং ৭৮৭-এর মধ্যে ২৪টি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে বোয়িংয়ের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কেলি ওর্টবার্গ জানান, তদন্তে তারা ভারতের তদন্ত ব্যুরোর নেতৃত্বে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী।
তদন্তে অংশ নিচ্ছে বোয়িং, ইঞ্জিন নির্মাতা জেনারেল ইলেকট্রিক, এয়ার ইন্ডিয়া, ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের এনটিএসবি এবং যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল।
গ্যোলজ বলেন, “সাধারণত কী ঘটেছে, সেটা দ্রুত বোঝা যায়। কিন্তু কেন ঘটেছে, সেটা বুঝতেই বেশি সময় লাগে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেইনে বিধ্বস্ত হওয়া মালয়েশিয়ান বিমানের ঘটনায় ধ্বংসাবশেষ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের প্রমাণ।
এই তদন্তেও দেখা হচ্ছে জ্বালানির নমুনা, ইঞ্জিনের ভেতরের লাইন, ফিল্টার, ভালভসহ রিফুয়েলিংয়ের সরঞ্জামও। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখবেন রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড, যন্ত্রপাতি বদলের তথ্য, ক্রুদের লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ, সিমুলেটর ফলাফল এবং তারা পূর্বে পরিচালিত ফ্লাইটগুলোর রেকর্ড।
গ্যোলজ মনে করেন, “এই তদন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হলেও প্রাথমিক কিছু ইঙ্গিত দ্রুত পাওয়া সম্ভব।”