ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার খান ইউনিস এলাকায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা -এএফপি
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া পশ্চিমা দেশের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালের পর এই স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ ফ্রান্স। কিন্তু এমন পদক্ষেপের পরও ফিলিস্তিনের গাজায় থামছে না জাতিগত নিধন। সোমবারও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনি।
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে রোববার। এর পর দিন সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর এক অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং হামাসের হাতে এখনো আটক থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার সময় এসেছে।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে মাত্র কয়েক মুহূর্ত দূরে আছে বলে আশাবাদ জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আর অপেক্ষা করতে পারি না।’ ইসরায়েলের ভূখ-ে ঢুকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা যে হামলা চালান, তার নিন্দা জানিয়ে মাখোঁ বলেন, পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র তৈরির মাধ্যমে ওই এলাকায় শান্তি দেখতে চান তিনি। মাখোঁ বলেন, ‘কোনো কিছুই চলমান যুদ্ধের ন্যায্যতা তৈরি করে না।’
এর মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। অস্ট্রেলিয়া, আন্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সান মারিনোসহ কয়েকটি দেশের নাম বলেন তিনি।
এ ছাড়া স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন একই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের দেড় শ’র বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। যদিও ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এখন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্রদের দেওয়া এই স্বীকৃতি বাস্তবে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও তা ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক বার্তা। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আরও জোরদার হলো। যদিও এসবের তোয়াক্কা না করে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ফিলিস্তিনে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সর্বশেষ প্রায় দুই বছর আগে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৫ জন। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার শিশু রয়েছে। এ তো শুধু হত্যার হিসাব। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন হয় ধ্বংস, নাহয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার। সংঘাতের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত করা তাদের হিসাবে গাজায় ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৯৫ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল ২১৩টি। আর স্কুল ১ হাজার ২৯টি। এসব স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা। এমনই একজন ফিলিস্তিনি নাবিল জাবের। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পরও হামলা থামছে না। এর জেরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলে ওপর বড় কোনো চাপ আসবে বলে মনে করেন না তিনি।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার শুরুটা হয়েছিল ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে। এতে সই করেছিলেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর।
ওই ঘোষণায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি আবাস গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি; বরং ইসরায়েল ক্রমেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য নির্ধারিত ভূখণ্ড দখলের দিকে এগিয়েছে।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর দখল করে নেয় তারা। ২০০৭ সালে গাজার দখলদারি ছেড়ে দিলেও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়িয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার খান ইউনিস এলাকায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা -এএফপি
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া পশ্চিমা দেশের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালের পর এই স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ ফ্রান্স। কিন্তু এমন পদক্ষেপের পরও ফিলিস্তিনের গাজায় থামছে না জাতিগত নিধন। সোমবারও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনি।
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে রোববার। এর পর দিন সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর এক অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং হামাসের হাতে এখনো আটক থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার সময় এসেছে।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে মাত্র কয়েক মুহূর্ত দূরে আছে বলে আশাবাদ জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আর অপেক্ষা করতে পারি না।’ ইসরায়েলের ভূখ-ে ঢুকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা যে হামলা চালান, তার নিন্দা জানিয়ে মাখোঁ বলেন, পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র তৈরির মাধ্যমে ওই এলাকায় শান্তি দেখতে চান তিনি। মাখোঁ বলেন, ‘কোনো কিছুই চলমান যুদ্ধের ন্যায্যতা তৈরি করে না।’
এর মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। অস্ট্রেলিয়া, আন্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সান মারিনোসহ কয়েকটি দেশের নাম বলেন তিনি।
এ ছাড়া স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন একই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের দেড় শ’র বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। যদিও ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এখন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্রদের দেওয়া এই স্বীকৃতি বাস্তবে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও তা ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক বার্তা। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আরও জোরদার হলো। যদিও এসবের তোয়াক্কা না করে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ফিলিস্তিনে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সর্বশেষ প্রায় দুই বছর আগে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৫ জন। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার শিশু রয়েছে। এ তো শুধু হত্যার হিসাব। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন হয় ধ্বংস, নাহয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার। সংঘাতের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত করা তাদের হিসাবে গাজায় ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৯৫ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল ২১৩টি। আর স্কুল ১ হাজার ২৯টি। এসব স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা। এমনই একজন ফিলিস্তিনি নাবিল জাবের। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পরও হামলা থামছে না। এর জেরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলে ওপর বড় কোনো চাপ আসবে বলে মনে করেন না তিনি।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার শুরুটা হয়েছিল ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে। এতে সই করেছিলেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর।
ওই ঘোষণায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি আবাস গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি; বরং ইসরায়েল ক্রমেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য নির্ধারিত ভূখণ্ড দখলের দিকে এগিয়েছে।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর দখল করে নেয় তারা। ২০০৭ সালে গাজার দখলদারি ছেড়ে দিলেও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়িয়েছে ইসরায়েল।