alt

লাদাখে জেন-জি আন্দোলনে কতটা চ্যালেঞ্জে পড়ল কেন্দ্রীয় শাসন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

লাদাখের রাজধানী লেহেতে বিজেপির কার্যালয়ের কাছে একটি রাস্তায় পুলিশের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা -এএফপি

লাদাখ হিমালয়ের উচ্চভূমির শীতল মরু অঞ্চল, যা ভারত-চীনের সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। গত বুধবার অঞ্চলটি জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বাধীন সহিংস বিক্ষোভে কেঁপে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেন।

বিক্ষোভের সমন্বয়কারীরা আলজাজিরাকে বলেন, লাদাখের আঞ্চলিক রাজধানী লেহতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। সশস্ত্র বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছেন।

ছয় বছর ধরে স্থানীয় নাগরিক সংস্থার নেতৃত্বে লাদাখে হাজারো মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অনশন চালিয়ে আসছেন। তাঁরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিস্তৃত সংবিধানিক নিরাপত্তা এবং রাজ্যের মর্যাদা দাবি করছেন। ২০১৯ সাল থেকে লাদাখ কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত হচ্ছে। তাঁরা চান স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা তাঁদের হস্তান্তর করা হোক। কিন্তু বুধবার হতাশ ও ক্ষুব্ধ কিছু তরুণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে বের হয়ে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে জানান সমাজসেবী শিক্ষাবিদ ও পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। সোনম একাধিক অনশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও তিনি অনশনে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তাঁকে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারের আগে এক ভিডিও বার্তায় সোনম ওয়াংচুক বলেন, ‘এটা ছিল তরুণদের উন্মাদনা। একধরনের জেন-জি বিপ্লব, যা তাঁদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছিল।’ তিনি সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেন। যেমন চলতি মাসের শুরুতে নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সরকারের পতন হয়। এই পরিস্থিতিতে সবার প্রশ্ন, লাদাখে আসলে কী ঘটেছে? তাদের দাবি কী? হিমালয়ের এই অঞ্চলটি কীভাবে এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছাল? লাদাখের এই সংকট কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ?

লাদাখে সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে: বুধবার সকালে লাদাখের স্থানীয় অধিকারকর্মীদের (অ্যাকটিভিস্ট) অনশন ১৫তম দিনে প্রবেশ করে। লাদাখ অ্যাপেক্স বডি অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। এটি সামাজিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের মিশ্রণে গঠিত একটি মোর্চা। অনশনে দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের একজনের বয়স ৬২, অন্যজনের ৭১ বছর। এ ঘটনায় আয়োজকেরা স্থানীয়ভাবে ‘শাটডাউনের’ ডাক দেন। মোদি সরকারের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এসব বিষয় তরুণদের মধ্যে এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল যে, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কাজ হবে না’। বুধবার সন্ধ্যায় অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে সোনম ওয়াংচুক এই কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের সময় তাঁকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। এরপর তরুণদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপগুলো লেহের মার্টার্স মেমোরিয়াল পার্ক থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় সরকারি ভবন ও বিজেপি কার্যালয়ের দিকে যায়। সেখানে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে চারজন নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

অ্যাপেক্স বডির সমন্বয়ক জিগমত পালজর বলেন, ‘লাদাখের ইতিহাসে এটি একটি ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী দিন। তারা আমাদের তরুণ ও সাধারণ মানুষকে শহীদ করেছে, যাঁরা অনশনের দাবিতে রাস্তায় ছিলেন।’ পালজর আল–জাজিরাকে বলেন, ‘মানুষ পাঁচ বছর ধরে সরকারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে ক্লান্ত এবং তাঁরা বিক্ষুব্ধ ছিলেন।’ সহিংসতার কারণে তাঁর সংগঠন অনশন প্রত্যাহার করে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এক দল ‘বিশৃঙ্খল জনতার’ সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ জনের বেশি নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন।...পুলিশকে আত্মরক্ষার জন্য গুলি ছুড়তে হয়েছে। যার ফলে কিছু ‘হতাহতের ঘটনা’ ঘটে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট যে (ওয়াংচুক) বিশৃঙ্খল জনতাকে উসকানি দিয়েছিলেন।’ এতে আরও বলা হয়, এই শিক্ষাবিদ ‘আরব বসন্তের মতো বিক্ষোভ ও নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’

তবে ওয়াংচুক সতর্ক করে বলেছিলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দাবি না মানলে তরুণদের ক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। এই সমন্বয়ক জোর দিয়ে বলেন, তিনি নিজে কখনো সহিংসতার ডাক দেননি।

বিক্ষোভকারীরা কী চাইছেন: ২০১৯ সালে মোদি সরকার একতরফাভাবে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে দেয়। এর আগপর্যন্ত ভারতের সংবিধানের আলোকে অঞ্চলটি আধা স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা ভোগ করত। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে তিনটি অঞ্চল ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকা, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু। অন্যদিকে লাদাখে মুসলিম ও বৌদ্ধ জনসংখ্যা প্রায় সমান। উভয় সম্প্রদায় প্রায় ৪০ শতাংশ করে। মোদি সরকার সাবেক রাজ্যটিকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে।

জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে করা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেখানে আইনসভা রয়েছে। আর লাদাখ নিয়ে আরেকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু সেখানে আইনসভা নেই।

কেন্দ্রশাসিত হলেও এই দুই অঞ্চলের ক্ষমতা ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মতো নিজেদের কাছে নেই। তবে আইনসভা থাকায় জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ অন্তত স্থানীয় নেতা নির্বাচনের সুযোগ পান, যাঁরা তাঁদের সমস্যা নয়াদিল্লির কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।

ছবি

টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে গাজায় ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসন’ গঠন নিয়ে আলোচনা

ছবি

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ, প্রতিবাদে প্রতিনিধিদের ওয়াকআউট

ছবি

ভারত আমাদের জবাব সবসময় মনে রাখবে : শেহবাজ শরীফ

ছবি

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে টিকটক বিক্রির পরিকল্পনা

ছবি

যারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নিন্দা করে, তারা গোপনে ধন্যবাদ দেয়: দাবি

ছবি

ইরানের ওপর জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রোববার থেকে

ছবি

এপস্টিন কেলেঙ্কারি: নতুন নথিতে ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম

ছবি

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রোর ভিসা বাতিল করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাজাজুড়ে নতুন করে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ

ছবি

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জন, প্রতিবাদে ওয়াকআউট কয়েক ডজন দেশ

ছবি

দিনের আলোয় রুশ হামলা, থমকে যাচ্ছে ইউক্রেনীয়দের জীবন

ছবি

বিক্ষুব্ধ লাদাখে কারফিউ জারি করল নয়াদিল্লি

ছবি

উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে চীন

ছবি

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

ছবি

ইসরায়েলের আগ্রাসন ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ পথ বন্ধ করে দেবে: মাহমুদ আব্বাস

ছবি

এবার জেন-জিদের বিক্ষোভে উত্তাল মাদাগাস্কার, রাজধানীতে কারফিউ জারি

ছবি

জেগে উঠেছে ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

ছবি

ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না: ট্রাম্প

ছবি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইয়েমেনে নিহত ৮

ছবি

নেতানিয়াহুকে পশ্চিম তীর অধিভুক্ত করতে দেবেন না: ট্রাম্প

জাতিসংঘে ‘তিন নাশকতার’ তদন্ত চান ট্রাম্প

ছবি

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জাপানের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ট্রাম্পের অভিযোগ: জাতিসংঘ অধিবেশনে ‘তিনটি নাশকতা’ তদন্তের দাবি

ছবি

রাশিয়া কোনো কাগুজে বাঘ নয়: ক্রেমলিন

ছবি

ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না: মাসুদ পেজেশকিয়ান

ছবি

উত্তর কোরিয়ার কাছে ২ হাজার কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে

ছবি

ইরানের হাতে ইসরায়েলের ‘কয়েক লাখ পৃষ্ঠার’ গোপন নথি পারমাণবিক স্থাপনার ছবি প্রকাশ

ছবি

মুসলিম নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের মধ্যেই গাজায় তীব্র হামলা

ছবি

ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে জেন-জি বিক্ষোভ কীভাবে রক্তাক্ত হয়ে উঠল

ছবি

ডালাসে আইসিই দপ্তরে বন্দুকধারীর হামলা, নিহত ১

ছবি

আসল অপরাধী ইসরায়েল, শাস্তি ভোগ করছে ইরান: পেজেশকিয়ান

ছবি

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জাপানের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

জাতিসংঘ চলছে বিবৃতি দিয়ে, কাজের কাজ কিছু করছে না: জেলেনস্কি

ছবি

তাইওয়ান, হংকংয়ের পর চীনের মূল ভূখণ্ডে বছরের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়

ছবি

উদাসীনতার ভারে ভেঙে পড়ছে জাতিসংঘ : আন্তোনিও গুতেরেস

ছবি

ইউরোপে গরমে এক বছরে ৬২ হাজার মানুষের মৃত্যু

tab

লাদাখে জেন-জি আন্দোলনে কতটা চ্যালেঞ্জে পড়ল কেন্দ্রীয় শাসন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

লাদাখের রাজধানী লেহেতে বিজেপির কার্যালয়ের কাছে একটি রাস্তায় পুলিশের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা -এএফপি

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

লাদাখ হিমালয়ের উচ্চভূমির শীতল মরু অঞ্চল, যা ভারত-চীনের সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। গত বুধবার অঞ্চলটি জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বাধীন সহিংস বিক্ষোভে কেঁপে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেন।

বিক্ষোভের সমন্বয়কারীরা আলজাজিরাকে বলেন, লাদাখের আঞ্চলিক রাজধানী লেহতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। সশস্ত্র বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছেন।

ছয় বছর ধরে স্থানীয় নাগরিক সংস্থার নেতৃত্বে লাদাখে হাজারো মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অনশন চালিয়ে আসছেন। তাঁরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিস্তৃত সংবিধানিক নিরাপত্তা এবং রাজ্যের মর্যাদা দাবি করছেন। ২০১৯ সাল থেকে লাদাখ কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত হচ্ছে। তাঁরা চান স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা তাঁদের হস্তান্তর করা হোক। কিন্তু বুধবার হতাশ ও ক্ষুব্ধ কিছু তরুণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে বের হয়ে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে জানান সমাজসেবী শিক্ষাবিদ ও পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। সোনম একাধিক অনশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও তিনি অনশনে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তাঁকে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারের আগে এক ভিডিও বার্তায় সোনম ওয়াংচুক বলেন, ‘এটা ছিল তরুণদের উন্মাদনা। একধরনের জেন-জি বিপ্লব, যা তাঁদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছিল।’ তিনি সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেন। যেমন চলতি মাসের শুরুতে নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সরকারের পতন হয়। এই পরিস্থিতিতে সবার প্রশ্ন, লাদাখে আসলে কী ঘটেছে? তাদের দাবি কী? হিমালয়ের এই অঞ্চলটি কীভাবে এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছাল? লাদাখের এই সংকট কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ?

লাদাখে সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে: বুধবার সকালে লাদাখের স্থানীয় অধিকারকর্মীদের (অ্যাকটিভিস্ট) অনশন ১৫তম দিনে প্রবেশ করে। লাদাখ অ্যাপেক্স বডি অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। এটি সামাজিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের মিশ্রণে গঠিত একটি মোর্চা। অনশনে দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের একজনের বয়স ৬২, অন্যজনের ৭১ বছর। এ ঘটনায় আয়োজকেরা স্থানীয়ভাবে ‘শাটডাউনের’ ডাক দেন। মোদি সরকারের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এসব বিষয় তরুণদের মধ্যে এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল যে, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কাজ হবে না’। বুধবার সন্ধ্যায় অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে সোনম ওয়াংচুক এই কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের সময় তাঁকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। এরপর তরুণদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপগুলো লেহের মার্টার্স মেমোরিয়াল পার্ক থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় সরকারি ভবন ও বিজেপি কার্যালয়ের দিকে যায়। সেখানে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে চারজন নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

অ্যাপেক্স বডির সমন্বয়ক জিগমত পালজর বলেন, ‘লাদাখের ইতিহাসে এটি একটি ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী দিন। তারা আমাদের তরুণ ও সাধারণ মানুষকে শহীদ করেছে, যাঁরা অনশনের দাবিতে রাস্তায় ছিলেন।’ পালজর আল–জাজিরাকে বলেন, ‘মানুষ পাঁচ বছর ধরে সরকারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে ক্লান্ত এবং তাঁরা বিক্ষুব্ধ ছিলেন।’ সহিংসতার কারণে তাঁর সংগঠন অনশন প্রত্যাহার করে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এক দল ‘বিশৃঙ্খল জনতার’ সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ জনের বেশি নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন।...পুলিশকে আত্মরক্ষার জন্য গুলি ছুড়তে হয়েছে। যার ফলে কিছু ‘হতাহতের ঘটনা’ ঘটে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট যে (ওয়াংচুক) বিশৃঙ্খল জনতাকে উসকানি দিয়েছিলেন।’ এতে আরও বলা হয়, এই শিক্ষাবিদ ‘আরব বসন্তের মতো বিক্ষোভ ও নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’

তবে ওয়াংচুক সতর্ক করে বলেছিলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দাবি না মানলে তরুণদের ক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। এই সমন্বয়ক জোর দিয়ে বলেন, তিনি নিজে কখনো সহিংসতার ডাক দেননি।

বিক্ষোভকারীরা কী চাইছেন: ২০১৯ সালে মোদি সরকার একতরফাভাবে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে দেয়। এর আগপর্যন্ত ভারতের সংবিধানের আলোকে অঞ্চলটি আধা স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা ভোগ করত। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে তিনটি অঞ্চল ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকা, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু। অন্যদিকে লাদাখে মুসলিম ও বৌদ্ধ জনসংখ্যা প্রায় সমান। উভয় সম্প্রদায় প্রায় ৪০ শতাংশ করে। মোদি সরকার সাবেক রাজ্যটিকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে।

জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে করা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেখানে আইনসভা রয়েছে। আর লাদাখ নিয়ে আরেকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু সেখানে আইনসভা নেই।

কেন্দ্রশাসিত হলেও এই দুই অঞ্চলের ক্ষমতা ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মতো নিজেদের কাছে নেই। তবে আইনসভা থাকায় জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ অন্তত স্থানীয় নেতা নির্বাচনের সুযোগ পান, যাঁরা তাঁদের সমস্যা নয়াদিল্লির কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।

back to top