আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকসসহ অন্যরা বলছে, এটি একটি ‘সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’। তালেবানের হঠাৎ এই পদক্ষেপে শিক্ষা, ব্যবসা ও যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
তালেবানের এই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশটির নারীরা। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকারে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই সরিয়ে ফেলা এবং স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কোর্সও বাতিল করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত হাজারো নারী শেষ আশ্রয় হিসেবে অনলাইনে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধের নতুন এই সিদ্ধান্তে সেই সুযোগও হারালেন তারা।
দেশটির তাখার প্রদেশের শিক্ষার্থী শাকিবা বলেন, ‘আমরা পড়তে চাই, মানুষের উপকারে আসতে চাই। অনলাইনে পড়াশোনা করতাম। কিন্তু এখন ঘরে বসে আর কিছুই করার নেই।’ কাবুলের আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে বাবাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা। ইন্টারনেট ছাড়া এখন সব অন্ধকার।’
ধসে পড়েছে ব্যবসা ও চাকরির সুযোগ: শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নন, বড় ধাক্কা খেয়েছেন দেশটির শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরাও। অনলাইন ইংরেজি প্রশিক্ষক জাবি জানান, তাঁর ৭০-৮০ শিক্ষার্থী আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালেই ইন্টারনেট সংযোগ কেটে যায়, ফলে তারা সুযোগ হারান। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী আনাস বলেন, ‘আমাদের কাজ ৯০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ই-মেইল পাঠানো পর্যন্ত সম্ভব নয়।’ বিচ্ছিন্ন হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে মোবাইল ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট টিভি, এমনকি কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অন্তত আটটি ফ্লাইট বাতিলের তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কাবুল কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে।
আতঙ্কে আছেন বিদেশে থাকা আফগান প্রবাসীরাও। ভারতে থাকা মোহাম্মদ হাদি বলেন, ‘কোনোভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তারা নিরাপদে আছে কিনা, তাও জানার উপায় নেই।’ কাবুলের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, তাদের সম্প্রচারেও বিঘ্ন ঘটছে।
মানবাধিকার সংকটের শঙ্কা: জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তালেবানের শাসনে নারীরা ব্যাপকভাবে বৈষম্য ও ভয়ভীতির মুখে আছেন। এখন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সংকট আরও গভীর হলো। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি শুধু শিক্ষা বা চাকরির পথ নয়, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে আফগানদের শেষ যোগাযোগও কেটে দিয়েছে। দেশটির প্রবীণ সাংবাদিক হামিদ হায়দারি মন্তব্য করেছেন, ‘বিচ্ছিন্নতায় আফগানিস্তান এখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়বে। এতে আফগানিস্তান আরও গভীর সংকটে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫
আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকসসহ অন্যরা বলছে, এটি একটি ‘সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’। তালেবানের হঠাৎ এই পদক্ষেপে শিক্ষা, ব্যবসা ও যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
তালেবানের এই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশটির নারীরা। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকারে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লেখকদের বই সরিয়ে ফেলা এবং স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কোর্সও বাতিল করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত হাজারো নারী শেষ আশ্রয় হিসেবে অনলাইনে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধের নতুন এই সিদ্ধান্তে সেই সুযোগও হারালেন তারা।
দেশটির তাখার প্রদেশের শিক্ষার্থী শাকিবা বলেন, ‘আমরা পড়তে চাই, মানুষের উপকারে আসতে চাই। অনলাইনে পড়াশোনা করতাম। কিন্তু এখন ঘরে বসে আর কিছুই করার নেই।’ কাবুলের আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে বাবাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা। ইন্টারনেট ছাড়া এখন সব অন্ধকার।’
ধসে পড়েছে ব্যবসা ও চাকরির সুযোগ: শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নন, বড় ধাক্কা খেয়েছেন দেশটির শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরাও। অনলাইন ইংরেজি প্রশিক্ষক জাবি জানান, তাঁর ৭০-৮০ শিক্ষার্থী আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালেই ইন্টারনেট সংযোগ কেটে যায়, ফলে তারা সুযোগ হারান। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী আনাস বলেন, ‘আমাদের কাজ ৯০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ই-মেইল পাঠানো পর্যন্ত সম্ভব নয়।’ বিচ্ছিন্ন হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে মোবাইল ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট টিভি, এমনকি কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অন্তত আটটি ফ্লাইট বাতিলের তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কাবুল কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে।
আতঙ্কে আছেন বিদেশে থাকা আফগান প্রবাসীরাও। ভারতে থাকা মোহাম্মদ হাদি বলেন, ‘কোনোভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তারা নিরাপদে আছে কিনা, তাও জানার উপায় নেই।’ কাবুলের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, তাদের সম্প্রচারেও বিঘ্ন ঘটছে।
মানবাধিকার সংকটের শঙ্কা: জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তালেবানের শাসনে নারীরা ব্যাপকভাবে বৈষম্য ও ভয়ভীতির মুখে আছেন। এখন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সংকট আরও গভীর হলো। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি শুধু শিক্ষা বা চাকরির পথ নয়, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে আফগানদের শেষ যোগাযোগও কেটে দিয়েছে। দেশটির প্রবীণ সাংবাদিক হামিদ হায়দারি মন্তব্য করেছেন, ‘বিচ্ছিন্নতায় আফগানিস্তান এখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়বে। এতে আফগানিস্তান আরও গভীর সংকটে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।