ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ঘোষণা আসার পর গাজার খান ইউনিসে ফিলিস্তিনিদের উল্লাস -রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের প্রতি একমত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি হওয়ার কথা যা দুই বছর ধরে চলা প্রাণঘাতী যুদ্ধ শেষ করার পথ খুলে দিতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল
রয়টার্স জানায়, গাজার সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের শুরু করা ধ্বংসাত্মক হামলার দুই বছর পূর্তির মাত্র একদিন পর মিশরে দুই পক্ষের পরোক্ষ আলোচনায় এই অগ্রগতি হয়েছে। গাজায় শান্তি আনার জন্য ট্রাম্পের উপস্থাপিত ২০ দফা প্রস্তাবের প্রথম পর্যারের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
যদি এই চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় তাহলে গাজা যুদ্ধ থামানোর আগের যে কোনো প্রচেষ্টার তুলনায় এবার দুই পক্ষ বেশি কাছাকাছি আসবে। এই যুদ্ধ গাজা থেকে ছড়িয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে, এতে ইরান, ইয়েমেন ও লেবানন জড়িয়ে পড়েছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা আরও গভীর হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সমঝোতা চুক্তি হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এই চুক্তিতে বিস্তারিত বিবরণের ঘাটতি আছে এবং অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন বাদ রয়ে গেছে যা এখনো এই সমঝোতাকে ভেস্তে দিতে পারে, যেমনটি ঘটেছিল আগের শান্তি প্রচেষ্টাগুলোর ক্ষেত্রে।
এই চুক্তি সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের জন্য তা বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হবে, যিনি বিশ্বের বড় বড় সংঘাতগুলো থামিয়ে শান্তি আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন; কিন্তু ট্রাম্প গাজা ও ইউক্রেইন যুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করার বিষয়ে হিমশিম খেয়েছেন। “আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্ব নিয়ে ইসরায়েল ও হামাস, উভয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এটি ঘোষণা করতে পেরে আমি খুব গর্বিত,” নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, “এর অর্থ হল দ্রুতই সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনাদের সমঝোতা অনুযায়ী একটি লাইন বরাবর প্রত্যাহার করবে। এটি হবে একটি দৃঢ়, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির প্রতি প্রথম পদক্ষেপ।”
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, একটি চুক্তি প্রায় হয়ে গেছে এবং আসছে সপ্তাহান্তে তিনি মিশরে যেতে পারেন, সম্ভবত শনিবারই দেশ ছাড়তে পারেন। তিনি মিশরের পাশাপাশি ইসরায়েলেও যেতে পারেন বলে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লিখিত এক বিবৃতিতে হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, “খোদার সহায়তায় আমরা তাদের সবাইকে বাড়িতে নিয়ে আসবো।” তিনি জানিয়েছেন, চুক্তি অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকবেন তিনি। হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তিতে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের বিষয়গুলো আছে।
এক বিবৃতিতে হামাস ইসরায়েল যেন যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্প ও নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এই চুক্তি গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে অতি প্রয়োজনীয় মানবিক ত্রাণ পাঠানোর পথ করে দিতে পারে। ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে অগাস্টে জানিয়েছে এক বৈশ্বিক অনাহার পর্যবেক্ষক সংস্থা।
এদিকে, ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজা নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন আল-জাজিরার স্থানীয় সাংবাদিকেরা। বিমান থেকে ফেলা গোলা আল-শাতি শরণার্থীশিবিরের অন্তত একটি বাড়িতে আঘাত হানে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীর দক্ষিণে সাবরা এলাকার কিছু বাড়িঘরের কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটান। তবে ইসরায়েলি হামলা ও বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম নৃশংস হামলায় ভূখ-টিতে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অব্যাহত বোমাবর্ষণে ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। এতে খানিকটা ইতিবাচক সাড়া দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আর ইসরায়েল তা আগেই মেনে নেয়। হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেয়। এরপর ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর এ আহ্বানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ঘোষণা আসার পর গাজার খান ইউনিসে ফিলিস্তিনিদের উল্লাস -রয়টার্স
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের প্রতি একমত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি হওয়ার কথা যা দুই বছর ধরে চলা প্রাণঘাতী যুদ্ধ শেষ করার পথ খুলে দিতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল
রয়টার্স জানায়, গাজার সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের শুরু করা ধ্বংসাত্মক হামলার দুই বছর পূর্তির মাত্র একদিন পর মিশরে দুই পক্ষের পরোক্ষ আলোচনায় এই অগ্রগতি হয়েছে। গাজায় শান্তি আনার জন্য ট্রাম্পের উপস্থাপিত ২০ দফা প্রস্তাবের প্রথম পর্যারের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
যদি এই চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় তাহলে গাজা যুদ্ধ থামানোর আগের যে কোনো প্রচেষ্টার তুলনায় এবার দুই পক্ষ বেশি কাছাকাছি আসবে। এই যুদ্ধ গাজা থেকে ছড়িয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে, এতে ইরান, ইয়েমেন ও লেবানন জড়িয়ে পড়েছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা আরও গভীর হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সমঝোতা চুক্তি হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এই চুক্তিতে বিস্তারিত বিবরণের ঘাটতি আছে এবং অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন বাদ রয়ে গেছে যা এখনো এই সমঝোতাকে ভেস্তে দিতে পারে, যেমনটি ঘটেছিল আগের শান্তি প্রচেষ্টাগুলোর ক্ষেত্রে।
এই চুক্তি সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের জন্য তা বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হবে, যিনি বিশ্বের বড় বড় সংঘাতগুলো থামিয়ে শান্তি আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন; কিন্তু ট্রাম্প গাজা ও ইউক্রেইন যুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করার বিষয়ে হিমশিম খেয়েছেন। “আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্ব নিয়ে ইসরায়েল ও হামাস, উভয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এটি ঘোষণা করতে পেরে আমি খুব গর্বিত,” নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, “এর অর্থ হল দ্রুতই সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনাদের সমঝোতা অনুযায়ী একটি লাইন বরাবর প্রত্যাহার করবে। এটি হবে একটি দৃঢ়, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির প্রতি প্রথম পদক্ষেপ।”
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, একটি চুক্তি প্রায় হয়ে গেছে এবং আসছে সপ্তাহান্তে তিনি মিশরে যেতে পারেন, সম্ভবত শনিবারই দেশ ছাড়তে পারেন। তিনি মিশরের পাশাপাশি ইসরায়েলেও যেতে পারেন বলে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লিখিত এক বিবৃতিতে হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, “খোদার সহায়তায় আমরা তাদের সবাইকে বাড়িতে নিয়ে আসবো।” তিনি জানিয়েছেন, চুক্তি অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকবেন তিনি। হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তিতে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের বিষয়গুলো আছে।
এক বিবৃতিতে হামাস ইসরায়েল যেন যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্প ও নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এই চুক্তি গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে অতি প্রয়োজনীয় মানবিক ত্রাণ পাঠানোর পথ করে দিতে পারে। ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে অগাস্টে জানিয়েছে এক বৈশ্বিক অনাহার পর্যবেক্ষক সংস্থা।
এদিকে, ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজা নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন আল-জাজিরার স্থানীয় সাংবাদিকেরা। বিমান থেকে ফেলা গোলা আল-শাতি শরণার্থীশিবিরের অন্তত একটি বাড়িতে আঘাত হানে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীর দক্ষিণে সাবরা এলাকার কিছু বাড়িঘরের কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটান। তবে ইসরায়েলি হামলা ও বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম নৃশংস হামলায় ভূখ-টিতে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অব্যাহত বোমাবর্ষণে ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। এতে খানিকটা ইতিবাচক সাড়া দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আর ইসরায়েল তা আগেই মেনে নেয়। হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেয়। এরপর ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর এ আহ্বানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।