ছবি: এএফপি
গাজায় প্রায় এক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল-শেইখে অনুষ্ঠিত আলোচনার তৃতীয় দিনে দুই পক্ষই বন্দিবিনিময় ও নির্দিষ্ট এলাকায় সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে।
এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্ক। আলোচনার ভিত্তি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’।
বুধবার রাতে ট্রাম্প নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম *ট্রুথ সোশ্যালে* লিখে জানান, “আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষই সই করেছে। এর অর্থ হলো, খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী ও টেকসই শান্তির পথে প্রথম ধাপ।”
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশা বেডরোসিয়ান জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। একই সঙ্গে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি বিনিময় প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, তিন ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এতে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের হাতে—যেখানে বর্তমানে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা।
হামাস বলেছে, এই চুক্তি গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাবে, ত্রাণ প্রবেশের পথ খুলে দেবে এবং বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া সহজ করবে। সংগঠনের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চিত করেছে যে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।”
যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজা সিটিসহ উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ। রাস্তায় নামেন নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা। খান ইউনিস এলাকার বাসিন্দা আবুল মাজেদ আবদ রাব্বো বলেন, “রক্তপাত বন্ধে এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।” তবে অনেকেই এখনো আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল আগের মতো যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে নতুন করে হামলা শুরু করতে পারে।
চুক্তিতে কী আছে
শারম আল-শেইখে আলোচিত ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, জিম্মি বিনিময়, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং সংঘাত-পরবর্তী গাজা পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।
চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও, হোয়াইট হাউস বলছে, প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং জিম্মি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইসরায়েলে আটক ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা আছে—যাঁদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ অনেক দেশ। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে জাতিসংঘ গাজায় ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করবে। সব পক্ষকেই চুক্তির শর্ত মেনে চলতে হবে।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ চুক্তির বাস্তবায়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এটিকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
শান্তির পথে না সাময়িক বিরতি?
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা নয়, বরং এটি একটি প্রাথমিক সমঝোতা মাত্র। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমাধান না হলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠন *ডন*-এর কর্মকর্তা মাইকেল শেফার ওমের-মান বলেন, “ইসরায়েল যেন যুদ্ধবিরতির পর গাজায় নতুন করে হামলা বা অবরোধ আরোপ না করে—এটা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এ সময় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ।
ছবি: এএফপি
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় প্রায় এক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল-শেইখে অনুষ্ঠিত আলোচনার তৃতীয় দিনে দুই পক্ষই বন্দিবিনিময় ও নির্দিষ্ট এলাকায় সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে।
এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্ক। আলোচনার ভিত্তি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’।
বুধবার রাতে ট্রাম্প নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম *ট্রুথ সোশ্যালে* লিখে জানান, “আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষই সই করেছে। এর অর্থ হলো, খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী ও টেকসই শান্তির পথে প্রথম ধাপ।”
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশা বেডরোসিয়ান জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। একই সঙ্গে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি বিনিময় প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, তিন ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এতে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের হাতে—যেখানে বর্তমানে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা।
হামাস বলেছে, এই চুক্তি গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাবে, ত্রাণ প্রবেশের পথ খুলে দেবে এবং বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া সহজ করবে। সংগঠনের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চিত করেছে যে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।”
যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজা সিটিসহ উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ। রাস্তায় নামেন নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা। খান ইউনিস এলাকার বাসিন্দা আবুল মাজেদ আবদ রাব্বো বলেন, “রক্তপাত বন্ধে এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।” তবে অনেকেই এখনো আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল আগের মতো যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে নতুন করে হামলা শুরু করতে পারে।
চুক্তিতে কী আছে
শারম আল-শেইখে আলোচিত ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, জিম্মি বিনিময়, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং সংঘাত-পরবর্তী গাজা পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।
চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও, হোয়াইট হাউস বলছে, প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং জিম্মি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইসরায়েলে আটক ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা আছে—যাঁদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ অনেক দেশ। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে জাতিসংঘ গাজায় ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করবে। সব পক্ষকেই চুক্তির শর্ত মেনে চলতে হবে।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ চুক্তির বাস্তবায়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এটিকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
শান্তির পথে না সাময়িক বিরতি?
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা নয়, বরং এটি একটি প্রাথমিক সমঝোতা মাত্র। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমাধান না হলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠন *ডন*-এর কর্মকর্তা মাইকেল শেফার ওমের-মান বলেন, “ইসরায়েল যেন যুদ্ধবিরতির পর গাজায় নতুন করে হামলা বা অবরোধ আরোপ না করে—এটা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এ সময় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ।