তুরস্কের কার্গো এয়ারলাইন এয়ার এসিটি’র বিধ্বস্ত বিমান
হংকং বিমানবন্দরে একটি কার্গো বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে সরাসরি সমুদ্রে পড়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের দুইজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।
দেশটির দমকল বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিমানটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে এবং এর একটি খণ্ড সমুদ্রের পানিতে ভাসছিলো।
এমিরেটস ফ্লাইট ইকে ৯৭৮৮ বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের এ বিমানটি দুবাই থেকে হংকংয়ে এসেছিল। এটি তুরস্কের কার্গো এয়ারলাইন এয়ার এসিটি’র মালিকানাধীন।
বিমানটিতে থাকা চারজন ক্রুর সবাই বেঁচে আছেন। উদ্ধারের আগে তারা দরজা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন। এরপর উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় সেখানকার আবহাওয়া ভালো ছিল এবং এ ঘটনার কারণে অন্য কোনো ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
প্রায় তিন দশক আগে ১৯৯৮ সালে হংকং বিমানবন্দর চালু হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় মারাত্মক দুর্ঘটনা।
এমিরেটস বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে অবতরণের সময় বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় হংকং বিমানবন্দরে ২১৩ জন দমকলকর্মী ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিমানটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের এই বিমানটি মূলত যাত্রীবাহী বিমান ছিল। পরে এটিকে মালবাহী বিমানে রূপান্তর করা হয়।
এয়ারক্রাফট ট্র্যাকিং সাইট এয়ারফ্লিটসের মতে, ত্রিশ বছরের বেশি পুরনো এই বিমানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।
এয়ারফ্লিটসের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স এই বিমানটি ব্যবহার করেছে।
এর মধ্যে আছে জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া)।
সোমবার এটি পরিচালনা করা হচ্ছিলো এমিরেটস স্কাইকার্গো ইকে ৯৭৮৮ ফ্লাইট হিসেবে।
গতকাল রোববার দুবাই থেকে রওনা দিয়ে হংকংয়ের স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০ মিনিটে এটি হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে।
আরেকটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম ফ্লাইটরাডার ২৪ জানিয়েছে, এ ধরনের আরেকটি বোয়িং এয়ার এসিটি’র কাছে আছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে রানওয়ে
নিরাপদ ছিল
হংকং বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন ইয়ু বলেছেন, অবতরণের পর বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে পাশের বেষ্টনীতে গিয়ে আঘাত করে।
‘দুঃখজনকভাবে এ সময় সেখানে একটি এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি পেট্রোলকার ছিল। বিমানটির সঙ্গে সেই পেট্রোলকারের সংঘর্ষ হয়। বিমানের ধাক্কায় পেট্রোলকারটিও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে,’ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনায় যে দুইজন গ্রাউন্ড স্টাফ মারা গেছেন তাদের একজন ৭ বছরের এবং অন্যজন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
মি. ইয়ু আরও জানিয়েছেন যে, অবতরণের সময় বিমানটি কোনো বিপদ সংকেত পাঠায়নি।
‘বিমান পরিচালনার জন্য যেমন থাকা দরকার তার সব শর্তই সেখানে বিদ্যমান ছিল। এই বিমানবন্দরের নর্থ রানওয়েতে দুর্ঘটনাটি হয়েছে।
তবে সাউথ ও সেন্ট্রাল রানওয়ের কার্যক্রম যথারীতি চালু আছে, বলছিলেন স্টিভেন ইয়ু। হংকং এয়ার এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সমুদ্র থেকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এগুলোই ব্ল্যাক বক্স হিসেবে পরিচিত।
‘কখন ব্ল্যাক বক্স পাওয়া যাবে তার ওপরই তদন্তের গতি নির্ভর করবে’ বলেছেন তিনি।
ওদিকে স্টিভেন ইয়ু জানিয়েছেন, সমুদ্র থেকে বিমানটির ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হচ্ছে।
‘এয়ারলাইন এবং বিমানটির মালিক পক্ষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা দ্রুত হংকং আসছেন। তারা আসামাত্রই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো,’ বলেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, বিমানটি অবতরণের পর ভুল ডিরেকশনে যাচ্ছিল কী না।
জবাবে মি. ইয়ু বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে বিমানটি সাগরের দিকে ঘুরে যাওয়ার কথা নয়। কোন ডিরেকশনে যেতে হবে সেটা গাইড করা হয়েছিল। কিন্তু এটা নরমাল রুট (যেদিকে বিমানটি গেছে) ছিল না’।
ওদিকে হংকং সরকার জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০ মিনিটে। ভোর শুরুর এ সময়টায় কার্গো ফ্লাইট চলাচলের কারণে বিমানবন্দর খুব ব্যস্ত থাকে।
হংকং থেকে বিবিসি নিউজ চাইনিজের মার্টিন ইপ জানিয়েছেন, হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো হাব আছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই কার্গো হাব ব্যবহার করা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার টন মালামাল পরিবহনের কাজে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
তুরস্কের কার্গো এয়ারলাইন এয়ার এসিটি’র বিধ্বস্ত বিমান
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
হংকং বিমানবন্দরে একটি কার্গো বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে সরাসরি সমুদ্রে পড়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের দুইজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।
দেশটির দমকল বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিমানটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে এবং এর একটি খণ্ড সমুদ্রের পানিতে ভাসছিলো।
এমিরেটস ফ্লাইট ইকে ৯৭৮৮ বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের এ বিমানটি দুবাই থেকে হংকংয়ে এসেছিল। এটি তুরস্কের কার্গো এয়ারলাইন এয়ার এসিটি’র মালিকানাধীন।
বিমানটিতে থাকা চারজন ক্রুর সবাই বেঁচে আছেন। উদ্ধারের আগে তারা দরজা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন। এরপর উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় সেখানকার আবহাওয়া ভালো ছিল এবং এ ঘটনার কারণে অন্য কোনো ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
প্রায় তিন দশক আগে ১৯৯৮ সালে হংকং বিমানবন্দর চালু হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় মারাত্মক দুর্ঘটনা।
এমিরেটস বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে অবতরণের সময় বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় হংকং বিমানবন্দরে ২১৩ জন দমকলকর্মী ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিমানটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ মডেলের এই বিমানটি মূলত যাত্রীবাহী বিমান ছিল। পরে এটিকে মালবাহী বিমানে রূপান্তর করা হয়।
এয়ারক্রাফট ট্র্যাকিং সাইট এয়ারফ্লিটসের মতে, ত্রিশ বছরের বেশি পুরনো এই বিমানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।
এয়ারফ্লিটসের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স এই বিমানটি ব্যবহার করেছে।
এর মধ্যে আছে জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া)।
সোমবার এটি পরিচালনা করা হচ্ছিলো এমিরেটস স্কাইকার্গো ইকে ৯৭৮৮ ফ্লাইট হিসেবে।
গতকাল রোববার দুবাই থেকে রওনা দিয়ে হংকংয়ের স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০ মিনিটে এটি হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে।
আরেকটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম ফ্লাইটরাডার ২৪ জানিয়েছে, এ ধরনের আরেকটি বোয়িং এয়ার এসিটি’র কাছে আছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে রানওয়ে
নিরাপদ ছিল
হংকং বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন ইয়ু বলেছেন, অবতরণের পর বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে পাশের বেষ্টনীতে গিয়ে আঘাত করে।
‘দুঃখজনকভাবে এ সময় সেখানে একটি এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি পেট্রোলকার ছিল। বিমানটির সঙ্গে সেই পেট্রোলকারের সংঘর্ষ হয়। বিমানের ধাক্কায় পেট্রোলকারটিও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে,’ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনায় যে দুইজন গ্রাউন্ড স্টাফ মারা গেছেন তাদের একজন ৭ বছরের এবং অন্যজন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
মি. ইয়ু আরও জানিয়েছেন যে, অবতরণের সময় বিমানটি কোনো বিপদ সংকেত পাঠায়নি।
‘বিমান পরিচালনার জন্য যেমন থাকা দরকার তার সব শর্তই সেখানে বিদ্যমান ছিল। এই বিমানবন্দরের নর্থ রানওয়েতে দুর্ঘটনাটি হয়েছে।
তবে সাউথ ও সেন্ট্রাল রানওয়ের কার্যক্রম যথারীতি চালু আছে, বলছিলেন স্টিভেন ইয়ু। হংকং এয়ার এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সমুদ্র থেকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এগুলোই ব্ল্যাক বক্স হিসেবে পরিচিত।
‘কখন ব্ল্যাক বক্স পাওয়া যাবে তার ওপরই তদন্তের গতি নির্ভর করবে’ বলেছেন তিনি।
ওদিকে স্টিভেন ইয়ু জানিয়েছেন, সমুদ্র থেকে বিমানটির ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হচ্ছে।
‘এয়ারলাইন এবং বিমানটির মালিক পক্ষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা দ্রুত হংকং আসছেন। তারা আসামাত্রই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো,’ বলেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, বিমানটি অবতরণের পর ভুল ডিরেকশনে যাচ্ছিল কী না।
জবাবে মি. ইয়ু বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে বিমানটি সাগরের দিকে ঘুরে যাওয়ার কথা নয়। কোন ডিরেকশনে যেতে হবে সেটা গাইড করা হয়েছিল। কিন্তু এটা নরমাল রুট (যেদিকে বিমানটি গেছে) ছিল না’।
ওদিকে হংকং সরকার জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০ মিনিটে। ভোর শুরুর এ সময়টায় কার্গো ফ্লাইট চলাচলের কারণে বিমানবন্দর খুব ব্যস্ত থাকে।
হংকং থেকে বিবিসি নিউজ চাইনিজের মার্টিন ইপ জানিয়েছেন, হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো হাব আছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই কার্গো হাব ব্যবহার করা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার টন মালামাল পরিবহনের কাজে।