alt

চ্যালেঞ্জের’ মুখে ভারত, সীমান্তে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ‘শেল্টার’ বানিয়েছে চীন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

স্যাটেলাইট চিত্রের দেখা যায় অরুণাচল সীমান্তে চীন তাদের বিমানঘাঁটি উন্নত করছে -এএফপি

তিব্বতের লুঞ্জে বিমানঘাঁটির সম্প্রসারণ সম্পন্ন করেছে চীন। অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত ভারত-চীন সীমারেখা ম্যাকমোহন লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এই ঘাঁটিতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র, নতুন প্রশাসনিক ভবন ও নতুন অ্যাপ্রোন (বিমান চলাচলের মাঠ) নির্মাণ শেষ হয়েছে। ভারতীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়েছে দেশটির কৌশলগত অবস্থান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, অরুণাচল প্রদেশের কৌশলগত শহর তাওয়াং থেকে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দূরের এই লুঞ্জে ঘাঁটিতে নতুন শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ফলে চীন এখন তাদের যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন ধরনের ড্রোন সামনে এগিয়ে মোতায়েন করতে পারবে। এতে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কমে আসবে। কারণ, ভারতের ঘাঁটিগুলো অরুণাচল প্রদেশ ও আসামে অবস্থিত।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘লুঞ্জেতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ হলো—পরবর্তী কোনো সংঘাত হলে তাদের ট্যাকটিক্যাল ফাইটার ও আক্রমণ হেলিকপ্টারগুলো সেখান থেকেই সেনাবাহিনীকে সহায়তা করবে। সেখানে গোলাবারুদ ও জ্বালানি ইতিমধ্যে ভূগর্ভস্থ টানেলে সংরক্ষিত থাকবে।’

বি এস ধনোয়া আরও বলেন, ‘ডোকলাম ঘটনার সময় (২০১৭ সালে) আমি আমার স্টাফদের বলেছিলাম, তিব্বতে পিএলএএফের (চীনা বিমানবাহিনী) সমস্যা বিমান নয়, বরং মোতায়েনের। তখনই আমি বলেছিলাম—যেদিন তারা তিব্বতের ঘাঁটিগুলোতে শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করবে, সেদিন বুঝতে হবে তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিব্বতে তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তখনই দূর হবে।’

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা বলেন, এই নির্মাণ ও উন্নয়ন চীনের ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিকল্পনাকে সহায়তা করবে এবং এটি ভারতের জন্য ‘গুরুতর কৌশলগত হুমকি’। বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে দেখা চীনের সামরিক সক্ষমতা ও অবকাঠামোগত কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য আরও বেড়েছে।

অনিল খোসলা বলেন, ‘লুঞ্জের উন্নয়ন আঞ্চলিক নিরাপত্তায় গভীর প্রভাব ফেলবে। ৩৬টি শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র সম্পদ ছড়িয়ে থাকা নিশ্চিত করে, নির্দিষ্ট আক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চভূমিতে টানা অপারেশনের সক্ষমতা বাড়ায়।’

খোসলার ভাষায়, এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম গোলাবারুদ, বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকেও সুরক্ষা দেবে। ফলে সংঘাতের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাঁটিটিকে ধ্বংস করা ‘অত্যন্ত কঠিন’ হয়ে পড়বে।

অনিল খোসলা আরও বলেন, ‘টিংরি, লুঞ্জে ও বুরাংয়ের মতো বিমানঘাঁটিগুলো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) খুব কাছে, মাত্র ৫০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই নৈকট্য চীনা বিমানবাহিনীকে দ্রুত সামনের দিকে মোতায়েন এবং সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দিচ্ছে। এসব ঘাঁটি থেকে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, উত্তরাখন্ড ও লাদাখ পর্যন্ত আকাশপথে নজরদারি সম্ভব।’

স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী ভ্যান্টরের (আগের নাম ম্যাক্সার) সর্বশেষ ছবিতে লুঞ্জের রানওয়েতে কয়েকটি চীনা সিএইচ-৪ ড্রোন দেখা গেছে। সিএইচ-৪ নামের এই মানববিহীন আকাশযান উচ্চভূমিতে অভিযানের জন্য তৈরি, যা ১৬ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতা থেকে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।

ভারত এই ড্রোন হুমকির মোকাবিলায় ২০২৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল অ্যাটোমিকস নির্মিত স্কাই গার্ডিয়ান ড্রোন হাতে পাবে। বিমানবাহিনী ও স্থলবাহিনী উভয়েই আটটি করে ড্রোন পাবে। স্কাই গার্ডিয়ান হলো সি গার্ডিয়ানের একটি ভ্যারিয়েন্ট, যার ১৫টি ইউনিট ভারতীয় নৌবাহিনী কিনছে। পুরো প্রকল্পের মূল্য ৩৫০ কোটি ডলার।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর আরেক সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল এস পি ধরকার বলেন, এই নতুন ঘাঁটি নির্মাণ ভারতের জন্য ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে উত্তর সীমান্তের ঘটনাবলি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভূপ্রকৃতি, দুর্গম ভূখ- ও উচ্চতার কারণে এত দিন আমরা কিছুটা কৌশলগত সুবিধায় ছিলাম। কিন্তু এখন চীন আধুনিক বিমান ও বড় অবকাঠামোসহ দীর্ঘ রানওয়ে যুক্ত ঘাঁটি তৈরি করছে, যা আমাদের সেই সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছে।’

এস পি ধরকারের মতে, ‘তারা (চীন) এখন যেভাবে শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র ও কঠোর অবকাঠামো তৈরি করছে, তাতে এই অঞ্চলে আমাদের বিমান অভিযানের কৌশল আরও কঠিন হয়ে পড়বে।’ ভূ-গোয়েন্দা বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন বলেন, ভারতের তাওয়াং সীমান্তের বিপরীতে এই দ্রুত নির্মাণকাজ চীনের ঐতিহাসিকভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে বিমানশক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে ইঙ্গিত করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত যদিও এই সীমান্তে শক্তিশালী বিমান অবকাঠামো বজায় রেখেছে, কিন্তু লুঞ্জেতে চীনের ব্যাপক সামরিকীকরণ দেখায়—বেইজিং সেই ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছে।’

লুঞ্জে ঘাঁটির এই উন্নয়ন এমন সময়ে ঘটছে, যখন চীন ভারতের হিমালয় সীমান্ত বরাবর আরও ছয়টি নতুন বিমানঘাঁটির উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে এনডিটিভির প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, টিংরি, লুঞ্জে, বুরাং, ইউতিয়ান ও ইয়ারকান্টে নতুন ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে। এসব ঘাঁটিতে হ্যাঙ্গার, রানওয়ে সম্প্রসারণ, ইঞ্জিন পরীক্ষার প্যাড ও সহায়ক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

চীনের এসব পদক্ষেপ স্পষ্টভাবে ভারতের হিমালয় অঞ্চলে প্রচলিত বিমান শ্রেষ্ঠত্বকে মোকাবিলা করার কৌশল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে লেহ থেকে চাবুয়া পর্যন্ত ১৫টি বড় বিমানঘাঁটি চালু রেখেছে। উভয় দেশের বিমানঘাঁটি উন্নয়ন এখন এক নতুন কৌশলগত বাস্তবতা তৈরি করছে। গালওয়ান সংঘর্ষের (১৫-১৬ জুন ২০২০) পরও দুই দেশ সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ছবি

গাজায় সেনা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান!

ছবি

অ্যামাজনে চাকরি হারাচ্ছে আরও ৩০ হাজার কর্মী

ছবি

ইউরোপীয় আদালতের জলবায়ু রায়ের মুখোমুখি নরওয়ে

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ

ছবি

ট্রাম্প-জিনপিংয়ের বৈঠকে ঘিরে বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতির আশা

ছবি

হামাস ফেরত দিল আরও এক জিম্মির দেহ, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২ ফিলিস্তিনি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত ৫০ ভারতীয় তরুণ: উন্নত জীবনের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে চলছে শাটডাউন, বন্ধ হচ্ছে খাদ্য সহায়তা

ছবি

দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

ছবি

জ্বালানি সংকটে মালিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

ছবি

চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্ক বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র!

ছবি

শীতে আরও ভয়াবহ হতে পারে গাজার পরিস্থিতি

ছবি

কারা যোগ দিয়েছেন, কী হতে পারে

ছবি

পাকিস্তানে আবার বাড়ছে দারিদ্র্যের হার

ছবি

কানাডার ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ছবি

জাতিসংঘ এখন কাজ করছে না, নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর: লুলা

ছবি

জোটের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান আনোয়ার ইব্রাহিমের

ছবি

আরেকটি শান্তি চুক্তির সাক্ষী হলেন ট্রাম্প

ছবি

পালাতে পালাতে ক্লান্ত গাজার মানুষ

ছবি

শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ: আফগানিস্তানকে হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ছবি

শুল্কবিরোধী বিজ্ঞাপনে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, কানাডার পণ্যে বাড়ালেন আরও শুল্ক

ছবি

কম্বোডিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করবেন থাই প্রধানমন্ত্রী

ছবি

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে ফিলিস্তিনি তরুণ নিহত

ছবি

বিরোধীদের ‘মুসলিম’ পরিচয় এনে কটাক্ষের জবাব যেভাবে দিচ্ছেন জোহরান

ছবি

আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানে টমেটোর কেজি ৬০০ রুপি

ছবি

ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রণতরী, ‘যুদ্ধাবস্থা তৈরির’ অভিযোগ ভেনেজুয়েলার

ছবি

ট্রাম্প-জিনপিং শীর্ষ সম্মেলনের আশা ম্লান

ছবি

কোনো নতুন আক্রমণ হবে ‘আরেকটি ব্যর্থতা’: ইরান

ছবি

সহিংস বিক্ষোভে প্রাণহানি, টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো পাকিস্তান

ছবি

ঝুঁকি মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমাতে হবে

ছবি

যুদ্ধবিরতির পরও গাজার মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা দূর হচ্ছে না

ছবি

একের পর এক অঞ্চল দখল করছে মায়ানমার জান্তা, কেন পিছু হটছে বিদ্রোহীরা

ছবি

ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক কেন ভেস্তে গেল, ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী

ছবি

রাশিয়ার দুটি প্রধান তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

আসিয়ান সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন মোদি, যাবেন না মালয়েশিয়া

ছবি

চীনের সহায়তায় হারানো এলাকা পুনর্দখলে নিচ্ছে মায়ানমার সেনাবাহিনী

tab

চ্যালেঞ্জের’ মুখে ভারত, সীমান্তে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ‘শেল্টার’ বানিয়েছে চীন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

স্যাটেলাইট চিত্রের দেখা যায় অরুণাচল সীমান্তে চীন তাদের বিমানঘাঁটি উন্নত করছে -এএফপি

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

তিব্বতের লুঞ্জে বিমানঘাঁটির সম্প্রসারণ সম্পন্ন করেছে চীন। অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত ভারত-চীন সীমারেখা ম্যাকমোহন লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এই ঘাঁটিতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র, নতুন প্রশাসনিক ভবন ও নতুন অ্যাপ্রোন (বিমান চলাচলের মাঠ) নির্মাণ শেষ হয়েছে। ভারতীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়েছে দেশটির কৌশলগত অবস্থান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, অরুণাচল প্রদেশের কৌশলগত শহর তাওয়াং থেকে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দূরের এই লুঞ্জে ঘাঁটিতে নতুন শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ফলে চীন এখন তাদের যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন ধরনের ড্রোন সামনে এগিয়ে মোতায়েন করতে পারবে। এতে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কমে আসবে। কারণ, ভারতের ঘাঁটিগুলো অরুণাচল প্রদেশ ও আসামে অবস্থিত।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘লুঞ্জেতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ হলো—পরবর্তী কোনো সংঘাত হলে তাদের ট্যাকটিক্যাল ফাইটার ও আক্রমণ হেলিকপ্টারগুলো সেখান থেকেই সেনাবাহিনীকে সহায়তা করবে। সেখানে গোলাবারুদ ও জ্বালানি ইতিমধ্যে ভূগর্ভস্থ টানেলে সংরক্ষিত থাকবে।’

বি এস ধনোয়া আরও বলেন, ‘ডোকলাম ঘটনার সময় (২০১৭ সালে) আমি আমার স্টাফদের বলেছিলাম, তিব্বতে পিএলএএফের (চীনা বিমানবাহিনী) সমস্যা বিমান নয়, বরং মোতায়েনের। তখনই আমি বলেছিলাম—যেদিন তারা তিব্বতের ঘাঁটিগুলোতে শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করবে, সেদিন বুঝতে হবে তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিব্বতে তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তখনই দূর হবে।’

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা বলেন, এই নির্মাণ ও উন্নয়ন চীনের ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিকল্পনাকে সহায়তা করবে এবং এটি ভারতের জন্য ‘গুরুতর কৌশলগত হুমকি’। বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে দেখা চীনের সামরিক সক্ষমতা ও অবকাঠামোগত কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য আরও বেড়েছে।

অনিল খোসলা বলেন, ‘লুঞ্জের উন্নয়ন আঞ্চলিক নিরাপত্তায় গভীর প্রভাব ফেলবে। ৩৬টি শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র সম্পদ ছড়িয়ে থাকা নিশ্চিত করে, নির্দিষ্ট আক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চভূমিতে টানা অপারেশনের সক্ষমতা বাড়ায়।’

খোসলার ভাষায়, এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম গোলাবারুদ, বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকেও সুরক্ষা দেবে। ফলে সংঘাতের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাঁটিটিকে ধ্বংস করা ‘অত্যন্ত কঠিন’ হয়ে পড়বে।

অনিল খোসলা আরও বলেন, ‘টিংরি, লুঞ্জে ও বুরাংয়ের মতো বিমানঘাঁটিগুলো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) খুব কাছে, মাত্র ৫০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই নৈকট্য চীনা বিমানবাহিনীকে দ্রুত সামনের দিকে মোতায়েন এবং সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দিচ্ছে। এসব ঘাঁটি থেকে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, উত্তরাখন্ড ও লাদাখ পর্যন্ত আকাশপথে নজরদারি সম্ভব।’

স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী ভ্যান্টরের (আগের নাম ম্যাক্সার) সর্বশেষ ছবিতে লুঞ্জের রানওয়েতে কয়েকটি চীনা সিএইচ-৪ ড্রোন দেখা গেছে। সিএইচ-৪ নামের এই মানববিহীন আকাশযান উচ্চভূমিতে অভিযানের জন্য তৈরি, যা ১৬ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতা থেকে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।

ভারত এই ড্রোন হুমকির মোকাবিলায় ২০২৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল অ্যাটোমিকস নির্মিত স্কাই গার্ডিয়ান ড্রোন হাতে পাবে। বিমানবাহিনী ও স্থলবাহিনী উভয়েই আটটি করে ড্রোন পাবে। স্কাই গার্ডিয়ান হলো সি গার্ডিয়ানের একটি ভ্যারিয়েন্ট, যার ১৫টি ইউনিট ভারতীয় নৌবাহিনী কিনছে। পুরো প্রকল্পের মূল্য ৩৫০ কোটি ডলার।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর আরেক সাবেক উপপ্রধান এয়ার মার্শাল এস পি ধরকার বলেন, এই নতুন ঘাঁটি নির্মাণ ভারতের জন্য ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে উত্তর সীমান্তের ঘটনাবলি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভূপ্রকৃতি, দুর্গম ভূখ- ও উচ্চতার কারণে এত দিন আমরা কিছুটা কৌশলগত সুবিধায় ছিলাম। কিন্তু এখন চীন আধুনিক বিমান ও বড় অবকাঠামোসহ দীর্ঘ রানওয়ে যুক্ত ঘাঁটি তৈরি করছে, যা আমাদের সেই সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছে।’

এস পি ধরকারের মতে, ‘তারা (চীন) এখন যেভাবে শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র ও কঠোর অবকাঠামো তৈরি করছে, তাতে এই অঞ্চলে আমাদের বিমান অভিযানের কৌশল আরও কঠিন হয়ে পড়বে।’ ভূ-গোয়েন্দা বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন বলেন, ভারতের তাওয়াং সীমান্তের বিপরীতে এই দ্রুত নির্মাণকাজ চীনের ঐতিহাসিকভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে বিমানশক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে ইঙ্গিত করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত যদিও এই সীমান্তে শক্তিশালী বিমান অবকাঠামো বজায় রেখেছে, কিন্তু লুঞ্জেতে চীনের ব্যাপক সামরিকীকরণ দেখায়—বেইজিং সেই ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছে।’

লুঞ্জে ঘাঁটির এই উন্নয়ন এমন সময়ে ঘটছে, যখন চীন ভারতের হিমালয় সীমান্ত বরাবর আরও ছয়টি নতুন বিমানঘাঁটির উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে এনডিটিভির প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, টিংরি, লুঞ্জে, বুরাং, ইউতিয়ান ও ইয়ারকান্টে নতুন ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে। এসব ঘাঁটিতে হ্যাঙ্গার, রানওয়ে সম্প্রসারণ, ইঞ্জিন পরীক্ষার প্যাড ও সহায়ক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

চীনের এসব পদক্ষেপ স্পষ্টভাবে ভারতের হিমালয় অঞ্চলে প্রচলিত বিমান শ্রেষ্ঠত্বকে মোকাবিলা করার কৌশল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে লেহ থেকে চাবুয়া পর্যন্ত ১৫টি বড় বিমানঘাঁটি চালু রেখেছে। উভয় দেশের বিমানঘাঁটি উন্নয়ন এখন এক নতুন কৌশলগত বাস্তবতা তৈরি করছে। গালওয়ান সংঘর্ষের (১৫-১৬ জুন ২০২০) পরও দুই দেশ সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

back to top