alt

নীরবে যুদ্ধোত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধোত্তর ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা ধীরে এগোলেও এর মধ্যেই বিভিন্ন খাতে নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করছে হামাস। স্থানীয়রা বলছেন, মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সিগারেট ও জ্বালানির ওপর ফি আরোপের মাধ্যমে হামাস কার্যত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’ নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল প্রত্যাহার করা এলাকাগুলোতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হামাস। এ সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে বা চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ডজনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে তারা। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে সরকার ছাড়ার দাবি জানালেও কাকে দিয়ে এই শূন্যতা পূরণ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এক ডজন গাজাবাসী জানান, প্রতিদিনের জীবনযাপনে হামাসের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। গাজায় প্রবেশ করা প্রায় সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। জ্বালানি ও সিগারেটের মতো ব্যক্তি খাতে আমদানি হওয়া কিছু পণ্যে ফি আদায়ের কথাও বলেছেন তাদের মধ্যে ১০ জন। এদের তিন জন সরাসরি বাণিজ্যে যুক্ত।

তবে হামাস সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল আল-থাওবাতা বলেন, সিগারেট বা জ্বালানির ওপর কর আরোপের খবর ‘সত্য নয়’। তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ কেবল জরুরি মানবিক ও প্রশাসনিক কাজ করছে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে ‘জোর প্রচেষ্টা’ চালাচ্ছে। থাওবাতা আবারও জানান, নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য হামাস প্রস্তুত আছে। তার ভাষায়, গাজায় বিশৃঙ্খলা ঠেকানোই লক্ষ্য।

গাজার একটি দোকানের মালিক হাতেম আবু দালাল বলেন, গাজায় পর্যাপ্ত পণ্য না আসায় দাম বেশি। সরকারি প্রতিনিধিরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দাম যাচাই ও নির্ধারণ করছেন। কেন্দ্রীয় নুসেইরাত এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মোহাম্মদ খলিফা বলেন, দাম ওঠানামা করছে, যেন ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি। আয় নেই। পরিস্থিতি কঠিন। জীবন কঠিন, আর সামনে শীত।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলায় আটক জীবিত শেষ জিম্মিদের মুক্তি পাওয়া নিশ্চিত হয়। পরিকল্পনাটিতে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন, বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন শুরু করার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু একাধিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় কার্যত বিভাজন বাস্তব হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি বাহিনী এখনও অঞ্চলটির অর্ধেকের বেশি অংশে অবস্থান করছে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এগোচ্ছে না। গাজার প্রায় সব দুই মিলিয়ন মানুষ এখনও হামাসের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করছে। ২০০৭ সালে ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় হামাস। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো গাইথ আল-ওমারি বলেন, হামাস স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চাইছে যে তাদের এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, গাজাবাসীর বর্ণনা করা হামাসের এসব কার্যক্রমই দেখিয়ে দিচ্ছে ‘কেন হামাস গাজা শাসন করতে পারে না ও করবে না’। তিনি জানান, জাতিসংঘ ট্রাম্প পরিকল্পনা অনুমোদন করলে নতুন গাজা সরকার গঠন সম্ভব হবে। বহুজাতিক বাহিনী গঠনে অগ্রগতিও হয়েছে।

পিএ গাজা শাসনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি তুললেও ইসরায়েল এর বিরোধিতা করছে। কীভাবে নতুন প্রশাসন গঠিত হবে, তা নিয়ে ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বও রয়ে গেছে। গাজায় ফাতাহ মুখপাত্র মুন্থের আল-হায়েক বলেন, হামাসের পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে তারা শাসন চালিয়ে যেতে চায়। ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে হামাসবিরোধী ছোট ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোও সক্রিয় রয়েছে। এটি হামাসের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণ কিছুটা বাড়লেও গাজাবাসীর দুর্দশা অব্যাহত।

এক জ্যেষ্ঠ খাদ্য আমদানিকারক বলেন, হামাস এখনও আগের মতো পূর্ণমাত্রায় কর আরোপে ফিরেনি, তবে ‘সবকিছুই নথিভুক্ত করছে’। তাদের চেকপয়েন্ট রয়েছে, ট্রাক থামিয়ে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দাম বেশি নেওয়াদের জরিমানা করা হয়। এতে কিছুটা দাম কমলেও যুদ্ধের আগের সময়ের চেয়ে এখনও অনেক বেশি। মানুষ বলছে, তাদের হাতে কোনও অর্থ নেই। যুদ্ধের আগে হামাস সরকার পুলিশসহ প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োগ দিতো। থাওবাতা বলেন, তাদের মধ্যে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন, আর জীবিতরা নতুন প্রশাসনের অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত।

হামাস-কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা জানান, হামাস যুদ্ধ চলাকালেও এই কর্মীদের বেতন দিয়েছে, তবে উচ্চ বেতন কেটে দিয়ে সবার বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ শেকেল (৪৭০ ডলার)। একজন কূটনীতিক বলেন, মজুরি দিতে মজুত নগদ অর্থ ব্যবহার করেছে হামাস।

হামাস-ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, যুদ্ধে নিহত চার আঞ্চলিক গভর্নরের পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন হামাস কর্মকর্তা জানান, নিহত ১১ রাজনৈতিক ব্যুরো সদস্যের জায়গাতেও নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গাজা সিটির কর্মী ও ভাষ্যকার মুস্তাফা ইব্রাহিম বলেন, ট্রাম্প পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্বকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে শাসনব্যবস্থা আরও শক্ত করছে হামাস। তার মতে, ‘এর অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, তা অজানা। তবে বিকল্প প্রশাসন না আসা পর্যন্ত তারা এমনটা চালিয়ে যাবে।’

ছবি

এপস্টেইন–ক্লিনটন সম্পর্কসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্তে নির্দেশ ট্রাম্পের, নজরদারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ

ছবি

জম্মু-কাশ্মীরে থানায় বিস্ফোরণে নিহত ৯

ছবি

ক্ষমা চেয়েও রক্ষা হচ্ছে না বিবিসির, মামলা করছেন ট্রাম্প

ছবি

মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় খাদ্যদ্রব্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প

ছবি

চীন সীমান্তে নতুন বিমানঘাঁটি চালু করল ভারত

ছবি

দিল্লি বিস্ফোরণে কাশ্মীর-সংযোগ খতিয়ে দেখছে ভারতীয় পুলিশ

ছবি

ল্যাটিন আমেরিকায় নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা

ছবি

পশ্চিম তীরে মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশ্বসম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা

ছবি

গাজায় বাহিনী গঠনের মার্কিন প্রস্তাবে আপত্তি চীন-রাশিয়ার

ছবি

আমাজনের উল্টো আচরণ

ছবি

ট্রাম্প কেন পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারছেন না?

ছবি

২৩০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হচ্ছে এক সেন্টের মুদ্রা উৎপাদন

ছবি

জলবায়ু সংকট আসলে স্বাস্থ্য সংকট: ডব্লিউএইচও

ছবি

মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করছে রাশিয়া: ম্যাখোঁ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হলো ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন

ছবি

আফগানিস্তানের প্রতি ১০ পরিবারের ৯টিই অনাহার বা ঋণে জর্জরিত

ছবি

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ, কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র

ছবি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা: মামদানির নির্বাচনী প্রচারে নেপথ্য কুশলী

ছবি

ভেনেজুয়েলা যেকোনও মার্কিন সামরিক আগ্রাসন মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত: প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ছবি

চীনের কার্বন নিঃসরণ কখনও কম, কখনও স্থিতিশীল

ছবি

মার্কিন হামলার শঙ্কায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করছে ভেনেজুয়েলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিভাবান মানুষ নেই, তাই বিদেশি টানতে আগ্রহী ট্রাম্প

ছবি

সম্মেলনস্থলে ঢুকে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অস্থিরতা, অপসারণের আশঙ্কায় স্টারমার

ছবি

শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনিশ্চিত, বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে গাজা

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

ছবি

দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৯ জন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি’ চায় ইরান

ছবি

জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন

শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেয়া হবে: ট্রাম্প

ছবি

বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ট্রাম্পের, ক্ষমা চাইলেন সমির শাহ

ছবি

বিবিসি এখন বিশৃঙ্খল, নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান: সাবেক কর্মকর্তা অলিভার

ছবি

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাদশাহ আব্দুল আজিজ মেডেল পেলেন পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল

ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দেবে না

ছবি

সারকোজিকে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফরাসি আদালত

ছবি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নৌকাডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ১১

tab

নীরবে যুদ্ধোত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধোত্তর ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা ধীরে এগোলেও এর মধ্যেই বিভিন্ন খাতে নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করছে হামাস। স্থানীয়রা বলছেন, মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সিগারেট ও জ্বালানির ওপর ফি আরোপের মাধ্যমে হামাস কার্যত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’ নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল প্রত্যাহার করা এলাকাগুলোতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হামাস। এ সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে বা চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ডজনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে তারা। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে সরকার ছাড়ার দাবি জানালেও কাকে দিয়ে এই শূন্যতা পূরণ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এক ডজন গাজাবাসী জানান, প্রতিদিনের জীবনযাপনে হামাসের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। গাজায় প্রবেশ করা প্রায় সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। জ্বালানি ও সিগারেটের মতো ব্যক্তি খাতে আমদানি হওয়া কিছু পণ্যে ফি আদায়ের কথাও বলেছেন তাদের মধ্যে ১০ জন। এদের তিন জন সরাসরি বাণিজ্যে যুক্ত।

তবে হামাস সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল আল-থাওবাতা বলেন, সিগারেট বা জ্বালানির ওপর কর আরোপের খবর ‘সত্য নয়’। তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ কেবল জরুরি মানবিক ও প্রশাসনিক কাজ করছে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে ‘জোর প্রচেষ্টা’ চালাচ্ছে। থাওবাতা আবারও জানান, নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য হামাস প্রস্তুত আছে। তার ভাষায়, গাজায় বিশৃঙ্খলা ঠেকানোই লক্ষ্য।

গাজার একটি দোকানের মালিক হাতেম আবু দালাল বলেন, গাজায় পর্যাপ্ত পণ্য না আসায় দাম বেশি। সরকারি প্রতিনিধিরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দাম যাচাই ও নির্ধারণ করছেন। কেন্দ্রীয় নুসেইরাত এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মোহাম্মদ খলিফা বলেন, দাম ওঠানামা করছে, যেন ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি। আয় নেই। পরিস্থিতি কঠিন। জীবন কঠিন, আর সামনে শীত।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলায় আটক জীবিত শেষ জিম্মিদের মুক্তি পাওয়া নিশ্চিত হয়। পরিকল্পনাটিতে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন, বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন শুরু করার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু একাধিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় কার্যত বিভাজন বাস্তব হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি বাহিনী এখনও অঞ্চলটির অর্ধেকের বেশি অংশে অবস্থান করছে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এগোচ্ছে না। গাজার প্রায় সব দুই মিলিয়ন মানুষ এখনও হামাসের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করছে। ২০০৭ সালে ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় হামাস। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো গাইথ আল-ওমারি বলেন, হামাস স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চাইছে যে তাদের এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, গাজাবাসীর বর্ণনা করা হামাসের এসব কার্যক্রমই দেখিয়ে দিচ্ছে ‘কেন হামাস গাজা শাসন করতে পারে না ও করবে না’। তিনি জানান, জাতিসংঘ ট্রাম্প পরিকল্পনা অনুমোদন করলে নতুন গাজা সরকার গঠন সম্ভব হবে। বহুজাতিক বাহিনী গঠনে অগ্রগতিও হয়েছে।

পিএ গাজা শাসনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি তুললেও ইসরায়েল এর বিরোধিতা করছে। কীভাবে নতুন প্রশাসন গঠিত হবে, তা নিয়ে ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বও রয়ে গেছে। গাজায় ফাতাহ মুখপাত্র মুন্থের আল-হায়েক বলেন, হামাসের পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে তারা শাসন চালিয়ে যেতে চায়। ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে হামাসবিরোধী ছোট ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোও সক্রিয় রয়েছে। এটি হামাসের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণ কিছুটা বাড়লেও গাজাবাসীর দুর্দশা অব্যাহত।

এক জ্যেষ্ঠ খাদ্য আমদানিকারক বলেন, হামাস এখনও আগের মতো পূর্ণমাত্রায় কর আরোপে ফিরেনি, তবে ‘সবকিছুই নথিভুক্ত করছে’। তাদের চেকপয়েন্ট রয়েছে, ট্রাক থামিয়ে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দাম বেশি নেওয়াদের জরিমানা করা হয়। এতে কিছুটা দাম কমলেও যুদ্ধের আগের সময়ের চেয়ে এখনও অনেক বেশি। মানুষ বলছে, তাদের হাতে কোনও অর্থ নেই। যুদ্ধের আগে হামাস সরকার পুলিশসহ প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োগ দিতো। থাওবাতা বলেন, তাদের মধ্যে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন, আর জীবিতরা নতুন প্রশাসনের অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত।

হামাস-কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা জানান, হামাস যুদ্ধ চলাকালেও এই কর্মীদের বেতন দিয়েছে, তবে উচ্চ বেতন কেটে দিয়ে সবার বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ শেকেল (৪৭০ ডলার)। একজন কূটনীতিক বলেন, মজুরি দিতে মজুত নগদ অর্থ ব্যবহার করেছে হামাস।

হামাস-ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, যুদ্ধে নিহত চার আঞ্চলিক গভর্নরের পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন হামাস কর্মকর্তা জানান, নিহত ১১ রাজনৈতিক ব্যুরো সদস্যের জায়গাতেও নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গাজা সিটির কর্মী ও ভাষ্যকার মুস্তাফা ইব্রাহিম বলেন, ট্রাম্প পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্বকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে শাসনব্যবস্থা আরও শক্ত করছে হামাস। তার মতে, ‘এর অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, তা অজানা। তবে বিকল্প প্রশাসন না আসা পর্যন্ত তারা এমনটা চালিয়ে যাবে।’

back to top