হোয়াইট হাউসে আয়োজিত নৈশভোজে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে করমর্দন করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প -এএফপি
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে সাড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রশাসনে কোনো বিদেশি নেতাকে এটাই সবচেয়ে জমকালো অভ্যর্থনা। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। যুবরাজের এ সফরকে একটি সাধারণ সফর হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আদতে তা এমনটি ছিল না; বরং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত যে কয়জন বিদেশি অতিথিকে আতিথ্য জানিয়েছে, তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি আতিশয্যময়।
ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বড় মঞ্চ দক্ষিণ লনে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অভ্যর্থনার সময়ে সেখানে ঘোড়ায় বসা ইউনিফর্মধারী সেনাদের পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। একই সময়ে হোয়াইট হাউসের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে একঝাঁক যুদ্ধবিমান। নতুনভাবে সোনালি রঙে সাজানো ওভাল অফিসে প্রবেশের পর ট্রাম্পকে একজন মুগ্ধ ও মোহগ্রস্ত মানুষ মনে হয়েছে। তিনি যুবরাজের হাত ধরেন এবং একাধিকবার বলেন, রাজকীয় বন্ধুত্ব তাঁর জন্য বিরাট সম্মানের।
কিন্তু সোনালি বুদ্?বুদের আভা ছেদ করে যখন এক সাংবাদিক ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা এবং তাঁর মরদেহ টুকরা টুকরা করার প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন, তখন ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ওই সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠান এবিসির সমালোচনা করেন। মূলত এ হত্যাকাণ্ডের কারণেই গত সাত বছর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাননি মোহাম্মদ বিন সালমান।
এফ-৩৫ বিক্রির প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘোষণাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তা হলো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে উন্নত এআই চিপ বিক্রি-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ট্রাম্প বলেন, খাসোগি ‘চরম বিতর্কিত’ ছিলেন এবং তাঁকে সবাই পছন্দ করতেন না (ভাবটা এমন যে এ কারণে তাঁকে হত্যা করা যায়)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ইস্তাম্বুলে সৌদি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংঘটিত ওই হত্যাকা- সম্পর্কে যুবরাজ কিছুই জানতেন না। কিন্তু তাঁর এ দাবি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সম্পূর্ণ বিপরীত।
মানবাধিকারের প্রতি উদাসীনতা, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি অবহেলা ও স্বৈরশাসকদের প্রতি প্রকাশ্যে আনুগত্য ট্রাম্পের জন্য নতুন কিছু নয়। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সেই দিক এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে বদলে গেছে। তবে ১৮ নভেম্বর মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরের সময় প্রকৃত কোনো পরিবর্তন হয়ে থাকলে, তা ছিল ওয়াশিংটনের আকাশে।
ট্রাম্প বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া এফ-৩৫ সিরিজের জঙ্গিবিমানগুলো সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করা হবে। এসব যুদ্ধবিমান বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত থাকবে না। সৌদির কাছে বিক্রির জন্য এফ-৩৫-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য (স্পেসিফিকেশন) ইসরায়েলের কাছে এই সিরিজের যেসব বিমান রয়েছে, সেগুলোর অনুরূপ হবে।‘(সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের) মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, তাদের উভয়ের এমন একটি পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে উভয়ে সেরা সুবিধা পাবে।’
এই চুক্তি যদি এগিয়ে যায়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতিকে লঙ্ঘন করবে। নীতিটি হলো ওয়াশিংটনের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের মধ্যে ইসরায়েল সবার আগে সেরা মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম সবার আগে পায়, যা অঞ্চলটিতে ইসরায়েলকে ‘মানগত সুবিধা’ দেয়। এবার এই নীতির প্রতি উদাসীনতা দেখিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, উভয় দেশ সেরা সামরিক সরঞ্জাম পাবে। কারণ, তারা দুজন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমানভাবে ঘনিষ্ঠ। ট্রাম্প বলেছেন, ‘(সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের) মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, তাদের উভয়ের এমন একটি পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে উভয়ে সেরা সুবিধা পাবে।’
ওয়াশিংটন থেকে এমন ভাষা শোনা ইসরায়েলের পছন্দের নয়। গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যেসব ধাক্কা এসেছে, সেগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এল এটি। এফ-৩৫ বিক্রির প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘোষণাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তা হলো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে উন্নত এআই চিপ বিক্রি-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। সৌদি আরবের বৈশ্বিক প্রযুক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন, এ ঘোষণা সেটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব ব্যাপক বিদ্যুৎ–নির্ভর ডেটা সেন্টার তৈরি করতে চাইছে, যা হবে বৈশ্বিক এআই অর্থনীতির ভিত্তি। এ খাতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের অতিথি গবেষক গ্রেগরি গাউস এআই অর্থনীতিতে মার্কিন-সৌদি অংশীদারত্বের লক্ষ্যকে ১৯৩০-এর দশকে সৌদি তেলক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশনের নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
হোয়াইট হাউসে আয়োজিত নৈশভোজে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে করমর্দন করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প -এএফপি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে সাড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রশাসনে কোনো বিদেশি নেতাকে এটাই সবচেয়ে জমকালো অভ্যর্থনা। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। যুবরাজের এ সফরকে একটি সাধারণ সফর হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আদতে তা এমনটি ছিল না; বরং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত যে কয়জন বিদেশি অতিথিকে আতিথ্য জানিয়েছে, তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি আতিশয্যময়।
ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বড় মঞ্চ দক্ষিণ লনে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অভ্যর্থনার সময়ে সেখানে ঘোড়ায় বসা ইউনিফর্মধারী সেনাদের পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। একই সময়ে হোয়াইট হাউসের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে একঝাঁক যুদ্ধবিমান। নতুনভাবে সোনালি রঙে সাজানো ওভাল অফিসে প্রবেশের পর ট্রাম্পকে একজন মুগ্ধ ও মোহগ্রস্ত মানুষ মনে হয়েছে। তিনি যুবরাজের হাত ধরেন এবং একাধিকবার বলেন, রাজকীয় বন্ধুত্ব তাঁর জন্য বিরাট সম্মানের।
কিন্তু সোনালি বুদ্?বুদের আভা ছেদ করে যখন এক সাংবাদিক ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা এবং তাঁর মরদেহ টুকরা টুকরা করার প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন, তখন ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ওই সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠান এবিসির সমালোচনা করেন। মূলত এ হত্যাকাণ্ডের কারণেই গত সাত বছর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাননি মোহাম্মদ বিন সালমান।
এফ-৩৫ বিক্রির প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘোষণাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তা হলো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে উন্নত এআই চিপ বিক্রি-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ট্রাম্প বলেন, খাসোগি ‘চরম বিতর্কিত’ ছিলেন এবং তাঁকে সবাই পছন্দ করতেন না (ভাবটা এমন যে এ কারণে তাঁকে হত্যা করা যায়)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ইস্তাম্বুলে সৌদি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংঘটিত ওই হত্যাকা- সম্পর্কে যুবরাজ কিছুই জানতেন না। কিন্তু তাঁর এ দাবি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সম্পূর্ণ বিপরীত।
মানবাধিকারের প্রতি উদাসীনতা, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি অবহেলা ও স্বৈরশাসকদের প্রতি প্রকাশ্যে আনুগত্য ট্রাম্পের জন্য নতুন কিছু নয়। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সেই দিক এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে বদলে গেছে। তবে ১৮ নভেম্বর মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরের সময় প্রকৃত কোনো পরিবর্তন হয়ে থাকলে, তা ছিল ওয়াশিংটনের আকাশে।
ট্রাম্প বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া এফ-৩৫ সিরিজের জঙ্গিবিমানগুলো সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করা হবে। এসব যুদ্ধবিমান বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত থাকবে না। সৌদির কাছে বিক্রির জন্য এফ-৩৫-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য (স্পেসিফিকেশন) ইসরায়েলের কাছে এই সিরিজের যেসব বিমান রয়েছে, সেগুলোর অনুরূপ হবে।‘(সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের) মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, তাদের উভয়ের এমন একটি পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে উভয়ে সেরা সুবিধা পাবে।’
এই চুক্তি যদি এগিয়ে যায়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতিকে লঙ্ঘন করবে। নীতিটি হলো ওয়াশিংটনের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের মধ্যে ইসরায়েল সবার আগে সেরা মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম সবার আগে পায়, যা অঞ্চলটিতে ইসরায়েলকে ‘মানগত সুবিধা’ দেয়। এবার এই নীতির প্রতি উদাসীনতা দেখিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, উভয় দেশ সেরা সামরিক সরঞ্জাম পাবে। কারণ, তারা দুজন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমানভাবে ঘনিষ্ঠ। ট্রাম্প বলেছেন, ‘(সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের) মহান মিত্র এবং ইসরায়েলও মহান মিত্র। আমার মতে, তাদের উভয়ের এমন একটি পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে উভয়ে সেরা সুবিধা পাবে।’
ওয়াশিংটন থেকে এমন ভাষা শোনা ইসরায়েলের পছন্দের নয়। গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যেসব ধাক্কা এসেছে, সেগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এল এটি। এফ-৩৫ বিক্রির প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘোষণাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তা হলো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে উন্নত এআই চিপ বিক্রি-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। সৌদি আরবের বৈশ্বিক প্রযুক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন, এ ঘোষণা সেটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব ব্যাপক বিদ্যুৎ–নির্ভর ডেটা সেন্টার তৈরি করতে চাইছে, যা হবে বৈশ্বিক এআই অর্থনীতির ভিত্তি। এ খাতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের অতিথি গবেষক গ্রেগরি গাউস এআই অর্থনীতিতে মার্কিন-সৌদি অংশীদারত্বের লক্ষ্যকে ১৯৩০-এর দশকে সৌদি তেলক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশনের নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সঙ্গে তুলনা করেছেন।