alt

ট্রাম্পের বয়কটেও যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত, চীনের নজরকাড়া উপস্থিতি

জি-২০ সম্মেলন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। দুইদিন ব্যাপী (২২-২৩ নভেম্বর) এই সম্মেলন বর্জন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরও নেতারা ‘জোহানেসবার্গ ঘোষণাপত্র’ দিয়েছেন। সম্মেলনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ না করার বড় কারণ দক্ষিণ অফ্রিকা। আয়োজক দেশটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে শেতাঙ্গদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে আসছেন। তিনি যৌথ ঘোষণায় দেশগুলোকে স্বাক্ষর না করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যৌথ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হন নেতারা। ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জোরালো আহ্বান জানান তারা।

ট্রাম্পের বয়কটে ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো জানায়, সেটা করলে জোটের ওপর বড় প্রভাব পড়বে। যেভাবেই হোক আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই বয়কটের কারণে হতাশা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তার আশঙ্কা জোটটি ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক জটিল ভূরাজনীতির মুহূর্তে বসবাস করছি। যেখানে একসঙ্গে মিলে বড় বড় সংকট সমাধানের কথা, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে আমরা পাশে পাচ্ছি না। এটা হতাশার।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মাখোঁর আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সামনের পথ কঠিন। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং যোগ দেন। তিনি বলেন, একতরফাবাদ ও সুরক্ষাবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে দেশে সংহতির সংকট নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববাসী।

সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জি-২০ জোটের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তর নিয়ে সংকটে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। শীর্ষ সম্মেলনের শেষে সাধারণ জোটের নেতৃত্বের উত্তরসূরী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরবর্তী নেতৃত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু দেশটির সম্মেলন ত্যাগ করায় সভাপত্বি হস্তান্তর নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়।

মার্কিন দূতাবাসের একজন প্রতিনিধির নেতৃত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার একজন জুনিয়র কূটনৈতিক কর্মকর্তার কাছে জোটের প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তরকে অপমানজনক বলে অভিহিত করে। পরে হস্তান্তর অনুষ্ঠান আর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া বলেন, এমনটি আগে কখনও ঘটেনি এবং এখানেও ঘটবে না।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, জোটের প্রথম সভাপতিত্ব করছি আমরা। কোনোভাবেই এর অমর্যাদা আমরা হতে দেব না। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন রামাফোসা। ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। রামাফোসা এই দাবিকে সাহসের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখনই ট্রাম্প জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন না বলে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন, ‘ট্রাম্পের অনুপস্থিতির ভিত্তিতে বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মকে পঙ্গু করা যাবে না। এই জোট কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে।’ ২০২৬ সালের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ফ্লোরিডার ডোরালে অবস্থিত ট্রাম্পের গলফ ক্লাবে তাদের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে। তবে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করলেও চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং কানাডাসহ অন্যান্য অন্যান্য দেশ ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এবারের সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অক্সফ্যামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইতিহাসে এটিই প্রথম সম্মেলন, যেখানে বৈষম্যের শিকার দরিদ্র দেশগুলোর অধিকারকে এজেন্ডার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।’

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ১২২ দফা ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। এতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। ব্রাজিলে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার দিনই নেতারা ঘোষণা করেন, জলবায়ু অর্থায়ন বিশ্বব্যাপী সব উৎস থেকে বাড়ানো প্রয়োজন। বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা প্রয়োজন।

জি-২০ ঘোষণাপত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে তাদের ঋণ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে। নেতারা জাতিসংঘের সনদের ভিত্তিতে ইউক্রেন, সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং ফিলিস্তিনে ন্যায়সঙ্গত, ব্যাপক এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও ৩০ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনের সংকট মাত্র একবারই উল্লেখ রয়েছে।

রয়টার্স জানায়, ঘোষণাপত্রে নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলোর প্রশংসা করা হয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর ভোগান্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ছবি

সৌদি আরবে খোলা হচ্ছে নতুন দুই মদের দোকান

ছবি

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালালো পাকিস্তান, নিহত ১০

ছবি

কূটনৈতিক অচলাবস্থার মুখে রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক

ছবি

বিপজ্জনক অচলাবস্থায় রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, সংঘর্ষের আশঙ্কা

ছবি

ইসরায়েলকে উপেক্ষা করে কেন সৌদির মন পেতে চেষ্টা করছেন ট্রাম্প

ছবি

জাপানে সামরিকবাদ মতাদর্শ পুনরায় ফিরতে দেবে না চীন

ছবি

পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চল একদিন ভারতের অংশ হতে পারে: রাজনাথ সিং

ছবি

ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়তে চায় জার্মানি

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় শ্রবণশক্তি হারিয়েছে গাজার ৩৫ হাজার শিশু

ছবি

আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের

ছবি

ট্রাম্পকে খুশি করতে গাজায় সেনা পাঠিয়ে কী বিপদ পড়বে পাকিস্তান

ছবি

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে জেনিভায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেইন, ইউরোপ

ছবি

গৃহবন্দী ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারে যে কারণে আটক হলেন

ছবি

ফ্রান্সে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ফিনা: অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরিতে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন

ছবি

ভিয়েতনামে বন্যা-ভূমিধস: মৃত্যু বেড়ে ৯০, নিখোঁজ ১২ জন

ছবি

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে ‘কাজে লাগিয়ে’ নিজেদের অস্ত্রের পরীক্ষা করেছিল চীন

ছবি

নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক স্কুল থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অপহরণ

ছবি

কী আছে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায়

ছবি

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-মামদানি বৈঠকে প্রশংসা আর সৌহার্দ্যের বার্তা

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা: আফগানিস্তান খুঁজছে নতুন বাণিজ্য রুট

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে ৬৭ শিশু নিহত: ইউনিসেফ

ছবি

নাইজেরিয়ায় স্কুলে হামলা, ২১৫ শিক্ষার্থী, ১২ শিক্ষককে অপহরণ

ছবি

লন্ডনে বিশাল আয়তনের দূতাবাস নির্মাণের অনুমোদন পাচ্ছে চীন

নারী সাংবাদিককে হেনস্তা, ট্রাম্পের সাফাই গাইলো হোয়াইট হাউজ

ছবি

যে প্রশ্নের উত্তরেই মিস ইউনিভার্স মেক্সিকোর ফাতিমা বশ

ছবি

তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য: বন্ধ শত শত স্কুল, ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়

ছবি

ডিসেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় কম বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ

ছবি

তেল অন্বেষণে সমুদ্রে কৃত্রিম দ্বীপ বানাবে পাকিস্তান

ছবি

ইউক্রেনকে পুতিনের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই কি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব

ছবি

ব্রাজিলে জলবায়ু সম্মেলনস্থলে আগুন, আলোচনা স্থগিত

ছবি

গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তীব্র শীতের আতঙ্ক

ছবি

রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের এক শহরে এক রাতে নিহত ২৫

ছবি

আগামী বছর জলবায়ু সম্মেলন কপ৩১ আয়োজনের দায়িত্ব পেল তুরস্ক

ছবি

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে নতুন মার্কিন কাঠামো, স্বস্তিতে নেই জেলেনস্কি

ছবি

ভারতকে ৯৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র

tab

ট্রাম্পের বয়কটেও যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত, চীনের নজরকাড়া উপস্থিতি

জি-২০ সম্মেলন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। দুইদিন ব্যাপী (২২-২৩ নভেম্বর) এই সম্মেলন বর্জন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরও নেতারা ‘জোহানেসবার্গ ঘোষণাপত্র’ দিয়েছেন। সম্মেলনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ না করার বড় কারণ দক্ষিণ অফ্রিকা। আয়োজক দেশটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে শেতাঙ্গদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে আসছেন। তিনি যৌথ ঘোষণায় দেশগুলোকে স্বাক্ষর না করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যৌথ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হন নেতারা। ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জোরালো আহ্বান জানান তারা।

ট্রাম্পের বয়কটে ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো জানায়, সেটা করলে জোটের ওপর বড় প্রভাব পড়বে। যেভাবেই হোক আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই বয়কটের কারণে হতাশা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তার আশঙ্কা জোটটি ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক জটিল ভূরাজনীতির মুহূর্তে বসবাস করছি। যেখানে একসঙ্গে মিলে বড় বড় সংকট সমাধানের কথা, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে আমরা পাশে পাচ্ছি না। এটা হতাশার।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মাখোঁর আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সামনের পথ কঠিন। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং যোগ দেন। তিনি বলেন, একতরফাবাদ ও সুরক্ষাবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে দেশে সংহতির সংকট নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববাসী।

সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জি-২০ জোটের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তর নিয়ে সংকটে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। শীর্ষ সম্মেলনের শেষে সাধারণ জোটের নেতৃত্বের উত্তরসূরী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারের সম্মেলনে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরবর্তী নেতৃত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু দেশটির সম্মেলন ত্যাগ করায় সভাপত্বি হস্তান্তর নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়।

মার্কিন দূতাবাসের একজন প্রতিনিধির নেতৃত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার একজন জুনিয়র কূটনৈতিক কর্মকর্তার কাছে জোটের প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তরকে অপমানজনক বলে অভিহিত করে। পরে হস্তান্তর অনুষ্ঠান আর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া বলেন, এমনটি আগে কখনও ঘটেনি এবং এখানেও ঘটবে না।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, জোটের প্রথম সভাপতিত্ব করছি আমরা। কোনোভাবেই এর অমর্যাদা আমরা হতে দেব না। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন রামাফোসা। ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। রামাফোসা এই দাবিকে সাহসের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখনই ট্রাম্প জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন না বলে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন, ‘ট্রাম্পের অনুপস্থিতির ভিত্তিতে বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মকে পঙ্গু করা যাবে না। এই জোট কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে।’ ২০২৬ সালের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তারা ফ্লোরিডার ডোরালে অবস্থিত ট্রাম্পের গলফ ক্লাবে তাদের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে। তবে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করলেও চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং কানাডাসহ অন্যান্য অন্যান্য দেশ ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এবারের সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অক্সফ্যামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইতিহাসে এটিই প্রথম সম্মেলন, যেখানে বৈষম্যের শিকার দরিদ্র দেশগুলোর অধিকারকে এজেন্ডার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।’

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ১২২ দফা ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। এতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। ব্রাজিলে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার দিনই নেতারা ঘোষণা করেন, জলবায়ু অর্থায়ন বিশ্বব্যাপী সব উৎস থেকে বাড়ানো প্রয়োজন। বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা প্রয়োজন।

জি-২০ ঘোষণাপত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে তাদের ঋণ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে। নেতারা জাতিসংঘের সনদের ভিত্তিতে ইউক্রেন, সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং ফিলিস্তিনে ন্যায়সঙ্গত, ব্যাপক এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও ৩০ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনের সংকট মাত্র একবারই উল্লেখ রয়েছে।

রয়টার্স জানায়, ঘোষণাপত্রে নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলোর প্রশংসা করা হয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর ভোগান্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

back to top