ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে মস্কোর স্বার্থের দিকে ঝুঁকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায় বদল এনেছে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তি মানবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
ক্রেমলিন চাইছে ট্রাম্পের ২৮ দফা চুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে। কারণ, এতে পুতিনের জন্য দুটি লাভ। একটি হলো, এটি এমন একটি শান্তি পরিকল্পনা, যা ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে দুর্বল ও অধীন করে রাখবে। অন্যটি হলো, প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হলে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন সরিয়ে নেবেন এবং এতে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা আরও বাড়বে।
সর্বশেষ ২৮ দফা প্রস্তাবে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে পুতিন তা গ্রহণ করবেন কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। গত শুক্রবার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফার এই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত আলোচনা সাপেক্ষে শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে। নতুবা রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনে নিজেদের অবস্থান চাপিয়ে যেতে থাকবে।
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আরও ইউক্রেনীয় শহর রুশ বাহিনীর দখলে যাবে। তা হয়তো আমাদের প্রত্যাশামতো দ্রুত নয়, কিন্তু অনিবার্য। পুতিন আরও বলেন, ‘এমন পথও আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য। কারণ, মস্কো তার স্বার্থ সশস্ত্র উপায়ে অনুসরণ করতে প্রস্তুত।’
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে পুতিন: কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেক্সান্দার গাবুয়েভ বলেন, পশ্চিম এখন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একধরনের কষ্টকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে দেখা হচ্ছে কার সহ্যশক্তি বেশি?। এই প্রতিযোগিতায় পুতিন ‘লোহার মতো কঠিন’, তার ব্যবস্থাও ঠিক ততটাই কঠিন।গাবুয়েভ আরও বলেন, ইউক্রেনীয়রাও সমানভাবে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। কিন্তু তাদের সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে মানবশক্তি, অস্ত্র এবং অর্থের অভাব রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে পশ্চিমা সমর্থনের অনৈক্য।
তবে পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা সীমাহীন নয়। তাঁর অর্থনীতি সমস্যায় পড়ছে, বিশেষ করে তেলের আয়ে বড় পতন। ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সেটা আরও খারাপ হয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনার খরচ মেটাতে মস্কো কর বাড়াচ্ছে। রুশ বাহিনী সামনে এগোচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চাপ বাড়ছে। তবুও পুতিন মনে করেন, ইউক্রেনের তুলনায় সময় তাঁর পক্ষেই।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিক দিক থেকে প্রচ- চাপের মুখে আছেন। ট্রাম্প তাঁকে সমঝোতা পরিকল্পনা মেনে নিতে চাপ দিচ্ছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতিও ইউক্রেনের বিপক্ষে যাচ্ছে। দেশে বাড়তে থাকা দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জেলেনস্কির অবস্থান দুর্বল হয়েছে। ইউরোপীয় মিত্ররাও কিয়েভের জন্য রুশ সম্পদ থেকে জব্দ করা বিলিয়ন ডলার ব্যবহারে দোদুল্যমান।
ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সহায়ক ইউরি উশাকভ গত সোমবার বলেন, পরিকল্পনার বহু (তবে সব নয়) প্রস্তাব রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য, তবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর পাল্টা প্রস্তাব গঠনমূলক নয়।
২৮ দফা প্রস্তাবের বেশির ভাগ ধারাই পুতিনের দীর্ঘদিনের দাবিকে প্রতিফলিত করছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদকে আইনগতভাবে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার শর্তও আছে। তবু পুতিন এই পরিকল্পনা তাঁর মূল রূপেও মানবেন কি না, পরিষ্কার নয়। কিছু ছোটখাটো বিষয়ের ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের আগের প্রস্তাবের তুলনায় কিছুটা নমনীয়তা দেখা গেছে।
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের রাশিয়াবিশেষজ্ঞ স্টেফান মাইস্টার বলেন, পুতিন সম্ভবত এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন, যাতে ট্রাম্প ইউক্রেন ও ইউরোপীয়দের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এতে রাশিয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনকে বশে আনার পথ আরও সহজ হয়ে যায়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে মস্কোর স্বার্থের দিকে ঝুঁকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায় বদল এনেছে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তি মানবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
ক্রেমলিন চাইছে ট্রাম্পের ২৮ দফা চুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে। কারণ, এতে পুতিনের জন্য দুটি লাভ। একটি হলো, এটি এমন একটি শান্তি পরিকল্পনা, যা ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে দুর্বল ও অধীন করে রাখবে। অন্যটি হলো, প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হলে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন সরিয়ে নেবেন এবং এতে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা আরও বাড়বে।
সর্বশেষ ২৮ দফা প্রস্তাবে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে পুতিন তা গ্রহণ করবেন কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। গত শুক্রবার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফার এই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত আলোচনা সাপেক্ষে শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে। নতুবা রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনে নিজেদের অবস্থান চাপিয়ে যেতে থাকবে।
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আরও ইউক্রেনীয় শহর রুশ বাহিনীর দখলে যাবে। তা হয়তো আমাদের প্রত্যাশামতো দ্রুত নয়, কিন্তু অনিবার্য। পুতিন আরও বলেন, ‘এমন পথও আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য। কারণ, মস্কো তার স্বার্থ সশস্ত্র উপায়ে অনুসরণ করতে প্রস্তুত।’
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে পুতিন: কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেক্সান্দার গাবুয়েভ বলেন, পশ্চিম এখন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একধরনের কষ্টকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে দেখা হচ্ছে কার সহ্যশক্তি বেশি?। এই প্রতিযোগিতায় পুতিন ‘লোহার মতো কঠিন’, তার ব্যবস্থাও ঠিক ততটাই কঠিন।গাবুয়েভ আরও বলেন, ইউক্রেনীয়রাও সমানভাবে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। কিন্তু তাদের সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে মানবশক্তি, অস্ত্র এবং অর্থের অভাব রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে পশ্চিমা সমর্থনের অনৈক্য।
তবে পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা সীমাহীন নয়। তাঁর অর্থনীতি সমস্যায় পড়ছে, বিশেষ করে তেলের আয়ে বড় পতন। ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সেটা আরও খারাপ হয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনার খরচ মেটাতে মস্কো কর বাড়াচ্ছে। রুশ বাহিনী সামনে এগোচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চাপ বাড়ছে। তবুও পুতিন মনে করেন, ইউক্রেনের তুলনায় সময় তাঁর পক্ষেই।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিক দিক থেকে প্রচ- চাপের মুখে আছেন। ট্রাম্প তাঁকে সমঝোতা পরিকল্পনা মেনে নিতে চাপ দিচ্ছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতিও ইউক্রেনের বিপক্ষে যাচ্ছে। দেশে বাড়তে থাকা দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জেলেনস্কির অবস্থান দুর্বল হয়েছে। ইউরোপীয় মিত্ররাও কিয়েভের জন্য রুশ সম্পদ থেকে জব্দ করা বিলিয়ন ডলার ব্যবহারে দোদুল্যমান।
ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সহায়ক ইউরি উশাকভ গত সোমবার বলেন, পরিকল্পনার বহু (তবে সব নয়) প্রস্তাব রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য, তবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর পাল্টা প্রস্তাব গঠনমূলক নয়।
২৮ দফা প্রস্তাবের বেশির ভাগ ধারাই পুতিনের দীর্ঘদিনের দাবিকে প্রতিফলিত করছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদকে আইনগতভাবে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার শর্তও আছে। তবু পুতিন এই পরিকল্পনা তাঁর মূল রূপেও মানবেন কি না, পরিষ্কার নয়। কিছু ছোটখাটো বিষয়ের ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের আগের প্রস্তাবের তুলনায় কিছুটা নমনীয়তা দেখা গেছে।
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের রাশিয়াবিশেষজ্ঞ স্টেফান মাইস্টার বলেন, পুতিন সম্ভবত এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন, যাতে ট্রাম্প ইউক্রেন ও ইউরোপীয়দের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এতে রাশিয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনকে বশে আনার পথ আরও সহজ হয়ে যায়।