বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যেসব দেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে তাদের আসল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এটাই কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ওই দেশগুলো তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বঙ্গবন্ধু ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নবম থেকে একাদশ সংসদ; টানা তিন মেয়াদে ১৪ বছর ৭ মাসের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। একই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।
দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে এবং জনগণের ভোটের অধিকার নেই বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিদেশি কূটনীতিকদের কাছেও এই তথ্য জানাচ্ছেন তারা।
আর সাড়ে চার মাস পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র ইউরোপের কয়েকটি দেশ নানা প্রশ্ন তুলছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে এর জবাব দিতে হচ্ছে। দেশগুলো বলছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা কাজ করে। তারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ পাক।
তবে একে বাংলাদেশের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে চীন, রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে এই ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এই জায়গাটাকে ব্যবহার করা আর এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এই দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। ’
পার্বত্য চট্টগ্রামেও অশান্তির সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকাটা নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে যেখানে সংঘাত ছিল, আমি সরকারে আসার পর সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা। ’
‘উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা তাদের পছন্দের গোলামদের ক্ষমতায় বসাতে চায়’- এমন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু এটা আমি জানি, আমি বুঝি, যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে আর তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। এটাই হচ্ছে তাদের প্রচেষ্টা, সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। ’
চক্রান্তের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ, আমি তো বলবো, ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো, যারা দেশপ্রেমিক তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে, জানি না এসব তারা চিন্তা করে কি না; সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়। ’
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর, এই ভারত মহাসাগরেই কিন্তু আমাদের বে অব বেঙ্গল, এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকে এই জায়গা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারো সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব নাই, সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘেœ পণ্য পরিবহন হয়।’
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিদেশিদের পছন্দ নয়, উন্নয়ন তারা নিতে পারছে না বলেই আজ মানবাধিকার-নির্বাচন নিয়ে আমাদের সবক দিতে আসছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তৎপর দেশগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না, এরা একটা জিনিসই করতে চায়; আজকে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিটা আমরা মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে, আজকে দারিদ্র্যের হার আমরা ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেটা ২৫ ভাগ ছিল, সেটাকে আমরা ৫ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেসবের কোন বিচার হয়নি। তখন তাদের সেই মানবাধিকারের চেতনা কই ছিল। তারাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। আজ তারা মানবাধিকার-নির্বাচনের সবক নিয়ে আসছে; আমাদের কথা শোনাচ্ছে। এরশাদ ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফলাফল স্থগিত করেছিল তখন তো তাদের উদ্বেগ দেখিনি। ’৯৬ সালে খালেদা জিয়ার ভুয়া ভোটার নিয়েও তো তাদের কোন উদ্বেগ দেখিনি। আর এখন নির্বাচন নিয়ে তারা খুব উতলা হয়ে উঠল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ হলো, এই বিএনপি তাদের চোখের মণি। এই বিএনপি মানুষ খুন করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ দেশে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, তাদের সঙ্গে বসতে হবে কেন? আমার মনে হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তাদের পছন্দ নয়। এদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়, এরা উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়।’
এ সময় শেখ হাসিনা অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। আমি তাদের ওখানে (যুক্তরাষ্ট্র) দেখেছি, গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। তাদের বলেছি, আমি এমন দেশ (বাংলাদেশ) থেকে এসেছি, যেখানে গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য আর্মি। আপনারা কীভাবে ওই দলকে সাপোর্ট দেন, যে দল সামরিক সরকারের হাতে তৈরি? আপনাদের চেতনা কি ওই আটলান্টিকের পাড় পর্যন্তই?’
বিএনপিকে সন্ত্রাসী-বোমা হামলাকারীদের দল হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, দলটি (বিএনপি) আগামীর নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হতে না পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী, বোমা হামলাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি, তারা জানে যে তারা নির্বাচন করে কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না, জনগণের ভোটও পাবে না। তাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং ভোট যেন না হয় সেজন্য যতরকমের চক্রান্ত করা যায় সেই চক্রান্তে তারা লিপ্ত।’
তার সরকারের আমলে দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের যে কাজ করছে সেটাই ‘অনেকের অন্তজ্বালা’।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘লুটে খেতে পারছে না, ক্ষমতা নাই, জনগণকে শোষণ করতে পারছে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না, তাই নির্বাচনে কারচুপির ধূয়া তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির মুখে নির্বাচনে কারচুপির কথা আসে কোত্থেকে। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া দুই-দুইবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। তারপরেও তাদের মুখে আবার গণতন্ত্রের কথা।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আসল কথা ওরাতো (বিএনপি) নির্বাচন চায় না। কারণ, তারা কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে তাদের দুইনেতার একজন এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক এবং আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলাম সভায় বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবীর। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম সভা সঞ্চালনা করেন ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, জেল হত্যাকা-ের শিকার জাতীয় চারনেতা, ভাষা আন্দোলন এবং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শহীদসহ সব গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১৬ আগস্ট ২০২৩
বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যেসব দেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে তাদের আসল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এটাই কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ওই দেশগুলো তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বঙ্গবন্ধু ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নবম থেকে একাদশ সংসদ; টানা তিন মেয়াদে ১৪ বছর ৭ মাসের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। একই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।
দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে এবং জনগণের ভোটের অধিকার নেই বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিদেশি কূটনীতিকদের কাছেও এই তথ্য জানাচ্ছেন তারা।
আর সাড়ে চার মাস পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র ইউরোপের কয়েকটি দেশ নানা প্রশ্ন তুলছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে এর জবাব দিতে হচ্ছে। দেশগুলো বলছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা কাজ করে। তারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ পাক।
তবে একে বাংলাদেশের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে চীন, রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে এই ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এই জায়গাটাকে ব্যবহার করা আর এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এই দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। ’
পার্বত্য চট্টগ্রামেও অশান্তির সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকাটা নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে যেখানে সংঘাত ছিল, আমি সরকারে আসার পর সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা। ’
‘উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা তাদের পছন্দের গোলামদের ক্ষমতায় বসাতে চায়’- এমন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু এটা আমি জানি, আমি বুঝি, যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে আর তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। এটাই হচ্ছে তাদের প্রচেষ্টা, সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। ’
চক্রান্তের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ, আমি তো বলবো, ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো, যারা দেশপ্রেমিক তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে, জানি না এসব তারা চিন্তা করে কি না; সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়। ’
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর, এই ভারত মহাসাগরেই কিন্তু আমাদের বে অব বেঙ্গল, এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকে এই জায়গা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারো সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব নাই, সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘেœ পণ্য পরিবহন হয়।’
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিদেশিদের পছন্দ নয়, উন্নয়ন তারা নিতে পারছে না বলেই আজ মানবাধিকার-নির্বাচন নিয়ে আমাদের সবক দিতে আসছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তৎপর দেশগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না, এরা একটা জিনিসই করতে চায়; আজকে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিটা আমরা মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে, আজকে দারিদ্র্যের হার আমরা ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেটা ২৫ ভাগ ছিল, সেটাকে আমরা ৫ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেসবের কোন বিচার হয়নি। তখন তাদের সেই মানবাধিকারের চেতনা কই ছিল। তারাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। আজ তারা মানবাধিকার-নির্বাচনের সবক নিয়ে আসছে; আমাদের কথা শোনাচ্ছে। এরশাদ ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফলাফল স্থগিত করেছিল তখন তো তাদের উদ্বেগ দেখিনি। ’৯৬ সালে খালেদা জিয়ার ভুয়া ভোটার নিয়েও তো তাদের কোন উদ্বেগ দেখিনি। আর এখন নির্বাচন নিয়ে তারা খুব উতলা হয়ে উঠল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ হলো, এই বিএনপি তাদের চোখের মণি। এই বিএনপি মানুষ খুন করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ দেশে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, তাদের সঙ্গে বসতে হবে কেন? আমার মনে হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তাদের পছন্দ নয়। এদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়, এরা উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়।’
এ সময় শেখ হাসিনা অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। আমি তাদের ওখানে (যুক্তরাষ্ট্র) দেখেছি, গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। তাদের বলেছি, আমি এমন দেশ (বাংলাদেশ) থেকে এসেছি, যেখানে গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য আর্মি। আপনারা কীভাবে ওই দলকে সাপোর্ট দেন, যে দল সামরিক সরকারের হাতে তৈরি? আপনাদের চেতনা কি ওই আটলান্টিকের পাড় পর্যন্তই?’
বিএনপিকে সন্ত্রাসী-বোমা হামলাকারীদের দল হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, দলটি (বিএনপি) আগামীর নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হতে না পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী, বোমা হামলাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি, তারা জানে যে তারা নির্বাচন করে কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না, জনগণের ভোটও পাবে না। তাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং ভোট যেন না হয় সেজন্য যতরকমের চক্রান্ত করা যায় সেই চক্রান্তে তারা লিপ্ত।’
তার সরকারের আমলে দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের যে কাজ করছে সেটাই ‘অনেকের অন্তজ্বালা’।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘লুটে খেতে পারছে না, ক্ষমতা নাই, জনগণকে শোষণ করতে পারছে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না, তাই নির্বাচনে কারচুপির ধূয়া তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির মুখে নির্বাচনে কারচুপির কথা আসে কোত্থেকে। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া দুই-দুইবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। তারপরেও তাদের মুখে আবার গণতন্ত্রের কথা।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আসল কথা ওরাতো (বিএনপি) নির্বাচন চায় না। কারণ, তারা কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে তাদের দুইনেতার একজন এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক এবং আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলাম সভায় বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবীর। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম সভা সঞ্চালনা করেন ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, জেল হত্যাকা-ের শিকার জাতীয় চারনেতা, ভাষা আন্দোলন এবং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শহীদসহ সব গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।