দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দিনে রাতে বেশিরভাগ সময় এখান থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতির ক্ষতির আশঙ্কা যেমন রয়েছে আবার কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোতে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ (রিজার্ভ) রাখা জরুরি সেই মজুদ তৈরি হচ্ছে না।
এক সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫-৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা রিজার্ভ থাকলেও এখন কোলডোমগুলো প্রায় ফাঁকাই বলা চলে।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানির বিশাল বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পায়রায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়ার কোলমাইনিং কোম্পানি। এর আগে তারা চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের তাগাদা এবং সময় দিলেও যথাসময়ে ডলার সংস্থান করতে পারেনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
এরপর কয়লা আসা বন্ধ হয়ে যায়। কোলইয়ার্ডের রিজার্ভ কয়লা দিয়ে চলতে থাকে পায়রা। আর কর্তৃপক্ষ ডলার জোগাড়ের চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তখন।
পরে ডলারের ব্যবস্থা করে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ করা শুরু হলে আবার কয়লা সরবরাহ শুরু করে মাইনিং কোম্পানি।
তবে কয়লার রিজার্ভ আগের যায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিজস্ব চাহিদা পূরণের পর সর্বোচ্চ প্রতিদিন ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
পিডিবি দিনের বেশিরভাগ সময় এখান থেকে পুরো সক্ষমতার বিদ্যুৎ নিচ্ছে। কখনও কখনও রাতে চাহিদা কমে গেলে কিছুটা বিদ্যুৎ কম নিচ্ছে। ফলে, যে পরিমাণ কয়লা আমদানি হচ্ছে তার প্রায় পুরোটাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে।
এখন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থা অনেকটা ‘দিন আনে দিন খায়’ এর মতো।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো সক্ষমতায় চললে প্রতিদিন ১৩-১৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩ দিন পরপর একটি করে জাহাজ আসে। প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন সক্ষমতার এসব জাহাজ নাব্যতা সংকটের কারণে ৩৫-৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রার জেটিতে আসে। এই পরিমাণ কয়লা খালাশ করে কোলডোমে নিতেও সময় প্রয়োজন হয়।
নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫০-৬০ দিনের কয়লা (জ্বালানি) মজুদ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার আবার কোনদিন ১৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে। দৈনিক জ্বালানি চাহিদা ১২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও এই কেন্দ্রে ৫০ দিনে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা রিজার্ভ থাকা জরুরি।
এই লক্ষ্যে পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৪টি কোলডোম স্থাপন করা হয়। প্রতিটির মজুদ সক্ষমতা প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি কোলডোমে গড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টনের মতো কয়লা আছে।
এক সময় এই কোলডোমগুলোতে পূর্ণ মজুদ ছিল। তবে কয়লা আমদানির বকেয়া দীর্ঘদিন পরিশোধ করতে না পারায় গত ১৩ এপ্রিল কয়লার এলসি প্রদান বন্ধ করে চিঠি দিয়ে বিষয়টি পায়রা কর্তৃপক্ষকে জানায় সিএমসি।
পায়রা কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করে। তবে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার যোগান যথাসময়ে নিশ্চিত করতে পারেনি।
এদিকে বকেয়া না পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ই-মেইলের মাধ্যমে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দেয়। ওই দিনই বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
তবে ডলারের সংস্থান না হওয়ায় কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পায়রা চলতে থাকে রির্জাভ কোলের (মজুদ কয়লা) ওপর। এরপর গত ২৫ মে জ্বালানি সংকটে পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অবশিষ্ট কয়লা দিয়ে একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি কিছুদিন চলার পর উৎপাদন বন্ধ হয় ৫ জুন দুপুরে।
সরকার জুন মাসের শুরুতে ডলারের ব্যবস্থা করে দিলেও এলসি খোলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা পায়রার কোলডোমে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। ২৫ জুন তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট পুনারায় উৎপাদনে ফেরে। কয়লার চালান আসা বাড়তে থাকলে কিছুদিন পর চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট।
উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গরমের দিন এবং সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছালেও অন্যান্য সময় দৈনিক গড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এটি কখনও সাড়ে ১১ হাজারে নেমে যায় আবার কখনও সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটেও উঠা-নামা করে।
ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দৈনিক ১২ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, যা গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।
এনএলডিসির তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে পায়রা থেকে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট এবং অব-পিক আওয়ারে ১২০০ মেগাওয়াট বা কখনও এর চেয়ে কিছু কম বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি। ২৭ আগস্ট রোববার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ নিয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮শ’ ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা)।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই দিন ১৪ ঘণ্টা পূর্ণ সক্ষমতায় (১২৪৪ মেগাওয়াট) পায়রা থেকে বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি। বাকিটা সময় পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী কখনও ৯১০ মেগাওয়াট আবার কখনও এক হাজার, এক হাজার একশ’ আবার কখনও ১২শ’ মেগাওয়াট বা তার চেয়ে কিছু বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে পায়রা।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ে। তখন সরকার জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়ায় দেশে লোডশেডিং শুরু হয়। ওই সময় লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল পিডিবি। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বিঘœ ঘটতে পারে; যার নজির একবার দেখা গেছে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হতো না।
পায়রায় কয়লা মজুদে যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
তারা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন কারণে যদি আবার কয়লা আসা বন্ধ হয়, সেই বিবেচনায় অন্তত দেড় থেকে দুই মাস যাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে উৎপাদনে রাখা যায়, সে ব্যবস্থা এখনই করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সক্ষমতার ৬০-৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ নিয়ে পায়রাকে রিজার্ভ বিল্ড-আসের সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে, যেকোন সময় আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে, বিদ্যুৎ সরবরাহে এর প্রভাব পড়বে। তখন লোডশেডিং দিয়েও গ্রাহক চাহিদা পূরণে পিডিবিকে হিমশিম খেতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা যায়, পায়রা থেকে পুরো উদ্যোমে বিদ্যুৎ নিলেও নিয়মিত বিল পরিশোধ করছে না পিডিবি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পিডিবির কাছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা (৬ মাসের বিল) পাওনা হয়েছে পায়রা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি বেইজ-লোড প্লান্ট। দেশে ছোট ছোট অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়েও এর সমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না। তাই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি যাতে কোন ঝুঁকিতে না পরে এজন্য দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত।
তিনি বলেন, বেসরকারি ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে পায়রার প্রায় ছয় মাসের বিল আটকা পড়ে গেছে। এ বিষয়ে পিডিবি কর্তৃপক্ষ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
কয়লা রিজার্ভের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিটা কোল-বেইজ পাওয়ার প্লান্টের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড স্ট্যান্ডার্ড হলো ২ মাসের কয়লা (জ্বালানি) কোলইয়ার্ডে রিজার্ভ রাখতে হয়। কোন কারণে যদি কোল সাপ্লাইয়ে প্রবলেম হয়, তখন ওই খান থেকে... রিজার্ভ থেকে... স্টোর থেকে তখন চালানো হয়। অনেক সময় ডেলিভারি আসতে দশ দিন, পনেরো দিন দেরি হয়ে যেতে পারে, তখন এটা করা হয়।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘এখন কথা হলো যে, কোল রিজার্ভ বিল্ড করতে হলে একটা টাকা লাগে। আমাকে তো দুই মাসের কোল কিনে এনে তারপর এটা রাখতে হবে। এই টাকাটা ওই খানে আটকানো থাকছে। প্রতিবারই যখন একটু খরচ হবে আবার এটাকে ভরে ফেলতে হবে। তারপর কোন কারণে ডিসটার্বেন্স হলে তাহলে ওই খান থেকে চালাতে পারবো।’
ম. তামিম বলেন, ‘এখন এই যে টাকাটা আটকে থাকবে, এই টাকা তো বাংলাদেশে অভাব। টাকাটা বাংলাদেশের এখন নাই। তো একটা রিস্ক নিচ্ছে এরা এখন। ধরে নিচ্ছি যে, রেগ্যুলার... সময়মতো কয়লা আসতে থাকবে। কোন কারণে যদি ডিলেই হয়, সেখানে দেখা যাবে যে সাত দিন, আট দিন বন্ধ থাকবে কয়লা। সেই রিস্কটা এখানে নিচ্ছে।’
পিডিবির কাছে বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৬ কোট টাকার বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ তামিম বলেন, ‘অবশ্যই! বিলটা দিয়ে দেয়া উচিত। কারণ এই টাকাটা যদি তারা (পায়রা কর্তৃপক্ষ) না পায়, তাহলে তো তারা কয়লাও কিনতে পারবে না।’
বিদ্যুৎ খাতের সরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ, অবগ্রিড-নবায়নযোগ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানি এবং আমদানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারে না বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র। পুরাতন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস ও কয়লা সংকটে প্রতিদিন অন্তত আড়াই হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে না বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও বন্ধ থাকার কারণে। গত ১৯ এপ্রিল দেশে চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
রোববার দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৫ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৯৫ মেগাওয়াট।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দিনে রাতে বেশিরভাগ সময় এখান থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতির ক্ষতির আশঙ্কা যেমন রয়েছে আবার কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোতে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ (রিজার্ভ) রাখা জরুরি সেই মজুদ তৈরি হচ্ছে না।
এক সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫-৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা রিজার্ভ থাকলেও এখন কোলডোমগুলো প্রায় ফাঁকাই বলা চলে।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানির বিশাল বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পায়রায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়ার কোলমাইনিং কোম্পানি। এর আগে তারা চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের তাগাদা এবং সময় দিলেও যথাসময়ে ডলার সংস্থান করতে পারেনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
এরপর কয়লা আসা বন্ধ হয়ে যায়। কোলইয়ার্ডের রিজার্ভ কয়লা দিয়ে চলতে থাকে পায়রা। আর কর্তৃপক্ষ ডলার জোগাড়ের চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তখন।
পরে ডলারের ব্যবস্থা করে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ করা শুরু হলে আবার কয়লা সরবরাহ শুরু করে মাইনিং কোম্পানি।
তবে কয়লার রিজার্ভ আগের যায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিজস্ব চাহিদা পূরণের পর সর্বোচ্চ প্রতিদিন ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
পিডিবি দিনের বেশিরভাগ সময় এখান থেকে পুরো সক্ষমতার বিদ্যুৎ নিচ্ছে। কখনও কখনও রাতে চাহিদা কমে গেলে কিছুটা বিদ্যুৎ কম নিচ্ছে। ফলে, যে পরিমাণ কয়লা আমদানি হচ্ছে তার প্রায় পুরোটাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে।
এখন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থা অনেকটা ‘দিন আনে দিন খায়’ এর মতো।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো সক্ষমতায় চললে প্রতিদিন ১৩-১৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩ দিন পরপর একটি করে জাহাজ আসে। প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন সক্ষমতার এসব জাহাজ নাব্যতা সংকটের কারণে ৩৫-৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রার জেটিতে আসে। এই পরিমাণ কয়লা খালাশ করে কোলডোমে নিতেও সময় প্রয়োজন হয়।
নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫০-৬০ দিনের কয়লা (জ্বালানি) মজুদ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার আবার কোনদিন ১৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে। দৈনিক জ্বালানি চাহিদা ১২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও এই কেন্দ্রে ৫০ দিনে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা রিজার্ভ থাকা জরুরি।
এই লক্ষ্যে পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৪টি কোলডোম স্থাপন করা হয়। প্রতিটির মজুদ সক্ষমতা প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি কোলডোমে গড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টনের মতো কয়লা আছে।
এক সময় এই কোলডোমগুলোতে পূর্ণ মজুদ ছিল। তবে কয়লা আমদানির বকেয়া দীর্ঘদিন পরিশোধ করতে না পারায় গত ১৩ এপ্রিল কয়লার এলসি প্রদান বন্ধ করে চিঠি দিয়ে বিষয়টি পায়রা কর্তৃপক্ষকে জানায় সিএমসি।
পায়রা কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করে। তবে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার যোগান যথাসময়ে নিশ্চিত করতে পারেনি।
এদিকে বকেয়া না পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ই-মেইলের মাধ্যমে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দেয়। ওই দিনই বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
তবে ডলারের সংস্থান না হওয়ায় কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পায়রা চলতে থাকে রির্জাভ কোলের (মজুদ কয়লা) ওপর। এরপর গত ২৫ মে জ্বালানি সংকটে পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অবশিষ্ট কয়লা দিয়ে একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি কিছুদিন চলার পর উৎপাদন বন্ধ হয় ৫ জুন দুপুরে।
সরকার জুন মাসের শুরুতে ডলারের ব্যবস্থা করে দিলেও এলসি খোলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা পায়রার কোলডোমে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। ২৫ জুন তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট পুনারায় উৎপাদনে ফেরে। কয়লার চালান আসা বাড়তে থাকলে কিছুদিন পর চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট।
উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গরমের দিন এবং সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছালেও অন্যান্য সময় দৈনিক গড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এটি কখনও সাড়ে ১১ হাজারে নেমে যায় আবার কখনও সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটেও উঠা-নামা করে।
ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দৈনিক ১২ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, যা গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।
এনএলডিসির তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে পায়রা থেকে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট এবং অব-পিক আওয়ারে ১২০০ মেগাওয়াট বা কখনও এর চেয়ে কিছু কম বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি। ২৭ আগস্ট রোববার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ নিয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮শ’ ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা)।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই দিন ১৪ ঘণ্টা পূর্ণ সক্ষমতায় (১২৪৪ মেগাওয়াট) পায়রা থেকে বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি। বাকিটা সময় পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী কখনও ৯১০ মেগাওয়াট আবার কখনও এক হাজার, এক হাজার একশ’ আবার কখনও ১২শ’ মেগাওয়াট বা তার চেয়ে কিছু বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে পায়রা।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ে। তখন সরকার জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়ায় দেশে লোডশেডিং শুরু হয়। ওই সময় লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল পিডিবি। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বিঘœ ঘটতে পারে; যার নজির একবার দেখা গেছে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হতো না।
পায়রায় কয়লা মজুদে যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
তারা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন কারণে যদি আবার কয়লা আসা বন্ধ হয়, সেই বিবেচনায় অন্তত দেড় থেকে দুই মাস যাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে উৎপাদনে রাখা যায়, সে ব্যবস্থা এখনই করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সক্ষমতার ৬০-৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ নিয়ে পায়রাকে রিজার্ভ বিল্ড-আসের সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে, যেকোন সময় আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে, বিদ্যুৎ সরবরাহে এর প্রভাব পড়বে। তখন লোডশেডিং দিয়েও গ্রাহক চাহিদা পূরণে পিডিবিকে হিমশিম খেতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা যায়, পায়রা থেকে পুরো উদ্যোমে বিদ্যুৎ নিলেও নিয়মিত বিল পরিশোধ করছে না পিডিবি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পিডিবির কাছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা (৬ মাসের বিল) পাওনা হয়েছে পায়রা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি বেইজ-লোড প্লান্ট। দেশে ছোট ছোট অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়েও এর সমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না। তাই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি যাতে কোন ঝুঁকিতে না পরে এজন্য দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত।
তিনি বলেন, বেসরকারি ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে পায়রার প্রায় ছয় মাসের বিল আটকা পড়ে গেছে। এ বিষয়ে পিডিবি কর্তৃপক্ষ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
কয়লা রিজার্ভের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিটা কোল-বেইজ পাওয়ার প্লান্টের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড স্ট্যান্ডার্ড হলো ২ মাসের কয়লা (জ্বালানি) কোলইয়ার্ডে রিজার্ভ রাখতে হয়। কোন কারণে যদি কোল সাপ্লাইয়ে প্রবলেম হয়, তখন ওই খান থেকে... রিজার্ভ থেকে... স্টোর থেকে তখন চালানো হয়। অনেক সময় ডেলিভারি আসতে দশ দিন, পনেরো দিন দেরি হয়ে যেতে পারে, তখন এটা করা হয়।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘এখন কথা হলো যে, কোল রিজার্ভ বিল্ড করতে হলে একটা টাকা লাগে। আমাকে তো দুই মাসের কোল কিনে এনে তারপর এটা রাখতে হবে। এই টাকাটা ওই খানে আটকানো থাকছে। প্রতিবারই যখন একটু খরচ হবে আবার এটাকে ভরে ফেলতে হবে। তারপর কোন কারণে ডিসটার্বেন্স হলে তাহলে ওই খান থেকে চালাতে পারবো।’
ম. তামিম বলেন, ‘এখন এই যে টাকাটা আটকে থাকবে, এই টাকা তো বাংলাদেশে অভাব। টাকাটা বাংলাদেশের এখন নাই। তো একটা রিস্ক নিচ্ছে এরা এখন। ধরে নিচ্ছি যে, রেগ্যুলার... সময়মতো কয়লা আসতে থাকবে। কোন কারণে যদি ডিলেই হয়, সেখানে দেখা যাবে যে সাত দিন, আট দিন বন্ধ থাকবে কয়লা। সেই রিস্কটা এখানে নিচ্ছে।’
পিডিবির কাছে বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৬ কোট টাকার বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ তামিম বলেন, ‘অবশ্যই! বিলটা দিয়ে দেয়া উচিত। কারণ এই টাকাটা যদি তারা (পায়রা কর্তৃপক্ষ) না পায়, তাহলে তো তারা কয়লাও কিনতে পারবে না।’
বিদ্যুৎ খাতের সরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ, অবগ্রিড-নবায়নযোগ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানি এবং আমদানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারে না বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র। পুরাতন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস ও কয়লা সংকটে প্রতিদিন অন্তত আড়াই হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে না বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও বন্ধ থাকার কারণে। গত ১৯ এপ্রিল দেশে চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
রোববার দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৫ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৯৫ মেগাওয়াট।