দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোটিপতি প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৬৪ প্রার্থীরই বার্ষিক আয় কোটি টাকার ওপরে। আর ১০০ কোটির টাকার বেশি সম্পদের মালিক ১৮ জন। সংস্থাটি হলফনামার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ৫ বছরে এমপিদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার ২ হাজার ২৩৮ শতাংশ এবং ১৫ বছরে এই হার ৭ হাজার ১১৬ শতাংশ। আবার ১৫ বছরে কারো সম্পদ বৃদ্ধির হার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ শতাংশে ঘিয়ে ঠেকেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য কতোটা সঠিক এবং কতোটা বৈধ, তা যাচাই করা হয় না। সম্পদের অর্জনকালীন যে মূল্য তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনীতি আর ব্যবসা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ব্যাংকিং, আরএমজি, বিদ্যুৎ খাতগুলো ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রভাবে রাজনীতিকরা কোনঠাসা বা প্রায় বিলুপ্ত।
টিআইবি একজন মন্ত্রীর বিদেশে ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছে। যিনি ২,৩১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন যার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ নেই।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। এ সময় নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। তথ্যচিত্র তুলে ধরেন তিন সদস্যের গবেষণা দলের প্রধান তৌহিদুল ইসলাম। অন্য দুই সদস্য ছিলেন রিফাত রহমান ও রফিকুল ইসলাম। তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনে এক হাজার ৮৯৬ জন অংশগ্রহণ করছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৮ শতাংশ। আর দলীয় প্রার্থী ৮২ শতাংশ।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামায় দেখানো সম্পদের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি যে প্রতিবেদন তৈরি করে তাতে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭১। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে ২৩৫ জন কোটিপতি প্রার্থী, জাতীয় পার্টির ৪৭ জন, স্বতন্ত্র ১৬৩ জন, জাসদের ৭ জন কোটিপতি, তৃণমূল বিএনপির ৬ জন কোটিপতি প্রার্থী।
টিআইবি আরও জানায়, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ২৭ শতাংশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ১৮ জন প্রার্থী শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। সম্পদের হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন একজন প্রার্থী।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হলফনামা অনুযায়ী বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। তবে নির্বাচন কমিশনে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত সম্পদ কোন উপায়ে অর্জিত, তা যাচাই করা হয় না।’
হলফনামায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রী ও এমপিদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা, আইনত দ-নীয় অপরাধ। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের এসব বিষয় খতিয়ে দেখার কথা, তারাও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।’
বর্তমান সংসদে ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছেন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আগের তিনটি এবং এবারের নির্বাচন মিলিয়ে সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। আর গত ১৫ বছরে নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ২১ শতাংশ।’
মানবাধিকারকর্মী ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের যেভাবে সম্পদ বেড়েছে, বৈধ উপায়ে এভাবে সম্পদ বাড়ে কিনা সেটা আসলে আমিও জানি না। জানলে আমরাও কিছু সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করতাম।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য দেখে বিষ্মিত হচ্ছি।’
শীর্ষ ১০ ঋণ ও দায়সম্পন্ন প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রায় ২৭ শতাংশেই ঋণ বা দায় আছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। নির্বাচনে শীর্ষ ঋণ ও দায়সম্পন্ন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস. এ. কে. একরামুজ্জামান, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ২,৫৩৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ২০০৬ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ১,৯৫৮ কোটি টাকা। গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ১,২০৯ কোটি টাকা। যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৯১৩ কোটি টাকা। জয়পুরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৪১৯ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজা, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৫৯৫ কোটি টাকা। ফেনী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল বাশার, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৫৬৭ কোটি টাকা।
শীর্ষ শত কোটিপতি প্রার্থীরা
শীর্ষ শত কোটিপতি প্রার্থীদের মধ্যে প্রথমেই আছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার সম্পদের পরিমাণ ১,৩৪৫ কোটি টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস. এ. কে. একরামুজ্জামান, তার সম্পদের পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা। ঢাকা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), তার সম্পদের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, তার সম্পদের পরিমাণ ৩০৬ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৭ কোটি টাকা। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৬ কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডল, তার সম্পদের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। নারায়নগঞ্জ ১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজা, তার সম্পদের পরিমাণ ২৩৩ কোটি টাকা। নরসিংদী ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, তার সম্পদের পরিমাণ ১৭৪ কোটি টাকা। ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদ খোকন, তার সম্পদের পরিমাণ ১৬৩ কোটি টাকা।
৫ বছরের ব্যবধানে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
মন্ত্রীদের মধ্যে ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর, তার আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২,১৩১ দশমিক ১২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের, তার সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ১,০৬৩ শতাংশ। সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মো. এনামুল হকের, তার নিজের সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে ৫,৪৭০ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও তার স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৮,৪২৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
১৫ বছরের ব্যবধানে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার সম্পদ বৃদ্ধিতে এগিয়ে। তার ১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৬,৩৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ। শীর্ষ এমপি পিরোজপুর ২ আসনের আনোয়ার হোসেন, তার আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৭,১১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে এগিয়ে রাজশাহী ৪ আসনের এমপি মো. এনামুল হক, তার সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ২,৪৩,৫১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়া, শীর্ষ কৃষি জমির মালিক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি গোলাম কবীর ভূঞা তার কৃষি জমির পরিমাণ ৬৪৬ একর। অকৃষি জমিধারী প্রার্থীদের শীর্ষে জামালপুর ৫ আসনের এমপি জাকির হোসেন তার জমির পরিমাণ ৮১৩ একর।
সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি জনগণের জানার জন্য টিআইবি ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ শীর্ষক একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি করেছে। এই ড্যাশবোর্ডে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় হাজার হলফনামার আটটি তথ্যের বহুমাত্রিক-তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড থেকে ঘরে বসেই ভোটাররা নিজ এলাকার প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোটিপতি প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৬৪ প্রার্থীরই বার্ষিক আয় কোটি টাকার ওপরে। আর ১০০ কোটির টাকার বেশি সম্পদের মালিক ১৮ জন। সংস্থাটি হলফনামার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ৫ বছরে এমপিদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার ২ হাজার ২৩৮ শতাংশ এবং ১৫ বছরে এই হার ৭ হাজার ১১৬ শতাংশ। আবার ১৫ বছরে কারো সম্পদ বৃদ্ধির হার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ শতাংশে ঘিয়ে ঠেকেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য কতোটা সঠিক এবং কতোটা বৈধ, তা যাচাই করা হয় না। সম্পদের অর্জনকালীন যে মূল্য তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনীতি আর ব্যবসা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ব্যাংকিং, আরএমজি, বিদ্যুৎ খাতগুলো ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রভাবে রাজনীতিকরা কোনঠাসা বা প্রায় বিলুপ্ত।
টিআইবি একজন মন্ত্রীর বিদেশে ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছে। যিনি ২,৩১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন যার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ নেই।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। এ সময় নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। তথ্যচিত্র তুলে ধরেন তিন সদস্যের গবেষণা দলের প্রধান তৌহিদুল ইসলাম। অন্য দুই সদস্য ছিলেন রিফাত রহমান ও রফিকুল ইসলাম। তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনে এক হাজার ৮৯৬ জন অংশগ্রহণ করছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৮ শতাংশ। আর দলীয় প্রার্থী ৮২ শতাংশ।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামায় দেখানো সম্পদের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি যে প্রতিবেদন তৈরি করে তাতে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭১। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে ২৩৫ জন কোটিপতি প্রার্থী, জাতীয় পার্টির ৪৭ জন, স্বতন্ত্র ১৬৩ জন, জাসদের ৭ জন কোটিপতি, তৃণমূল বিএনপির ৬ জন কোটিপতি প্রার্থী।
টিআইবি আরও জানায়, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ২৭ শতাংশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ১৮ জন প্রার্থী শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। সম্পদের হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন একজন প্রার্থী।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হলফনামা অনুযায়ী বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। তবে নির্বাচন কমিশনে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত সম্পদ কোন উপায়ে অর্জিত, তা যাচাই করা হয় না।’
হলফনামায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রী ও এমপিদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা, আইনত দ-নীয় অপরাধ। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের এসব বিষয় খতিয়ে দেখার কথা, তারাও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।’
বর্তমান সংসদে ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছেন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আগের তিনটি এবং এবারের নির্বাচন মিলিয়ে সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। আর গত ১৫ বছরে নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ২১ শতাংশ।’
মানবাধিকারকর্মী ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের যেভাবে সম্পদ বেড়েছে, বৈধ উপায়ে এভাবে সম্পদ বাড়ে কিনা সেটা আসলে আমিও জানি না। জানলে আমরাও কিছু সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করতাম।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য দেখে বিষ্মিত হচ্ছি।’
শীর্ষ ১০ ঋণ ও দায়সম্পন্ন প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রায় ২৭ শতাংশেই ঋণ বা দায় আছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। নির্বাচনে শীর্ষ ঋণ ও দায়সম্পন্ন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস. এ. কে. একরামুজ্জামান, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ২,৫৩৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ২০০৬ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ১,৯৫৮ কোটি টাকা। গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ১,২০৯ কোটি টাকা। যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৯১৩ কোটি টাকা। জয়পুরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৪১৯ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজা, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৫৯৫ কোটি টাকা। ফেনী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল বাশার, তার ঋণ ও দায়ের পরিমাণ ৫৬৭ কোটি টাকা।
শীর্ষ শত কোটিপতি প্রার্থীরা
শীর্ষ শত কোটিপতি প্রার্থীদের মধ্যে প্রথমেই আছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার সম্পদের পরিমাণ ১,৩৪৫ কোটি টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস. এ. কে. একরামুজ্জামান, তার সম্পদের পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা। ঢাকা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), তার সম্পদের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, তার সম্পদের পরিমাণ ৩০৬ কোটি টাকা। কুমিল্লা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৭ কোটি টাকা। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৬ কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডল, তার সম্পদের পরিমাণ ৩১৫ কোটি টাকা। নারায়নগঞ্জ ১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মুর্তজা, তার সম্পদের পরিমাণ ২৩৩ কোটি টাকা। নরসিংদী ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, তার সম্পদের পরিমাণ ১৭৪ কোটি টাকা। ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদ খোকন, তার সম্পদের পরিমাণ ১৬৩ কোটি টাকা।
৫ বছরের ব্যবধানে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
মন্ত্রীদের মধ্যে ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর, তার আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২,১৩১ দশমিক ১২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের, তার সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ১,০৬৩ শতাংশ। সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মো. এনামুল হকের, তার নিজের সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে ৫,৪৭০ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও তার স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৮,৪২৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
১৫ বছরের ব্যবধানে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে যারা
খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার সম্পদ বৃদ্ধিতে এগিয়ে। তার ১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৬,৩৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ। শীর্ষ এমপি পিরোজপুর ২ আসনের আনোয়ার হোসেন, তার আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৭,১১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে এগিয়ে রাজশাহী ৪ আসনের এমপি মো. এনামুল হক, তার সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ২,৪৩,৫১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়া, শীর্ষ কৃষি জমির মালিক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি গোলাম কবীর ভূঞা তার কৃষি জমির পরিমাণ ৬৪৬ একর। অকৃষি জমিধারী প্রার্থীদের শীর্ষে জামালপুর ৫ আসনের এমপি জাকির হোসেন তার জমির পরিমাণ ৮১৩ একর।
সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি জনগণের জানার জন্য টিআইবি ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ শীর্ষক একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি করেছে। এই ড্যাশবোর্ডে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় হাজার হলফনামার আটটি তথ্যের বহুমাত্রিক-তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড থেকে ঘরে বসেই ভোটাররা নিজ এলাকার প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।