সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে মধ্যে এখন পর্যন্ত ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার অন্তত ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি।
মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, তারা সীমান্ত অতিক্রম করার পর প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিরস্ত্র করে হেফাজতে নিয়েছে বিজিবি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঘুমধুমে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে মর্টার শেল
মায়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের অভ্যন্তরে বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ঘুমধুম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বসত-বাড়ির জানালা ও গাছ বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে পড়ে মর্টার শেলটি। বিষয়টি ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মনিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থলের মর্টার শেলের অংশ নমুনা হিসেবে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকার সাসিন্দাদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের উপজেলা উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।’
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটেছে। তুমব্রু সীমান্তে ঘেঁষা মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়ে পতাকা উড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে এখনও থেমে থেমে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যার কারণে সীমান্তের বসবাসরত স্থানীয়রা ‘আতঙ্কিত’ হয়ে ঘর ছাড়ছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র
ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে জনগণের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাইশ পারি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনারপাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্বপাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দুপাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার উখিয়া, মরিচ্যা, কোট বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গতকাল সোমবার থেকেই আশ্রয় নিয়েছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এখনও কেউ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে নাই।
অন্যদিকে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বান্দরবানের তুমব্রু, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন অনুপ্রবেশ চেষ্টার তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমারে অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। এ সময় মায়ানমারের ছোড়া গুলিতে আরও এক বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তুমব্রু সীমান্তে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তি পেশায় কৃষক বলে জানা গেছে।
লাগাতার গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু বিস্তীর্ণ এলাকা। গুলির অংশ ও রকেট লঞ্চারের ভগ্নাংশ উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম- তুমব্রু এলাকায় বসতঘরের উপর।
এ ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। অনেকেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় ঘরে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছেন না অভিভাবকরা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ফাতেমা বেগম গণমাধ্যমে বলেন, ‘সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। স্থানীয়রা ভয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পরিবার সারারাত না ঘুমিয়ে বসে ছিল।’
এর আগে সোমবার বান্দরবানের ঘুমধুমে সীমান্তের মায়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টার শেল জলপাইতলী এলাকায় ঘরের ভিতর ঢুকে বিস্ফোরিত হয়ে দুইজন নিহত হয়। আহত হয় এক শিশু। গত রোববার দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে।
ঘটনার পর সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষদের সতর্কভাবে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ উপ-অধিনায়ক আবু সালাম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকার উত্তেজনা শুরু হয়েছে সেটি এখনও চলমান রয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাব ও পুলিশ যে যার ক্ষেত্র থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আর সীমান্তে ঘেঁষে যেসব পরিবার আছে তারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্র স্থানে আশ্রয় নিয়েছে এবং সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে না থেকে নিরাপদে থাকার অনুরোধ জানান। তিনি আরও জানান, পাশপাশি সীমান্তের জোরদার করার জন্য, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো আরও জোরদার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে কোনো রোহিঙ্গা বা বিছিন্নতাবাদী দল যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বর্ডার গার্ড বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের এক লাখের বেশি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মায়ানমারে যুদ্ধের জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনা এবং আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, ইতোমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন ও টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে মঙ্গলবারও গোলাগুলি চলছে।
দুই জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত সংলগ্ন ওইসব এলাকায় এক লাখের বেশি বাসিন্দা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আপাতত নিরাপদ দূরত্বে স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে তাদের রাখা হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ইতোমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করেছেন।
মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে মধ্যে এখন পর্যন্ত ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার অন্তত ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি।
মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, তারা সীমান্ত অতিক্রম করার পর প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিরস্ত্র করে হেফাজতে নিয়েছে বিজিবি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঘুমধুমে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে মর্টার শেল
মায়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের অভ্যন্তরে বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ঘুমধুম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বসত-বাড়ির জানালা ও গাছ বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে পড়ে মর্টার শেলটি। বিষয়টি ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মনিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থলের মর্টার শেলের অংশ নমুনা হিসেবে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকার সাসিন্দাদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের উপজেলা উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।’
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটেছে। তুমব্রু সীমান্তে ঘেঁষা মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়ে পতাকা উড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে এখনও থেমে থেমে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যার কারণে সীমান্তের বসবাসরত স্থানীয়রা ‘আতঙ্কিত’ হয়ে ঘর ছাড়ছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র
ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে জনগণের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাইশ পারি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনারপাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্বপাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দুপাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার উখিয়া, মরিচ্যা, কোট বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গতকাল সোমবার থেকেই আশ্রয় নিয়েছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এখনও কেউ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে নাই।
অন্যদিকে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বান্দরবানের তুমব্রু, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন অনুপ্রবেশ চেষ্টার তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমারে অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। এ সময় মায়ানমারের ছোড়া গুলিতে আরও এক বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তুমব্রু সীমান্তে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তি পেশায় কৃষক বলে জানা গেছে।
লাগাতার গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু বিস্তীর্ণ এলাকা। গুলির অংশ ও রকেট লঞ্চারের ভগ্নাংশ উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম- তুমব্রু এলাকায় বসতঘরের উপর।
এ ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। অনেকেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় ঘরে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছেন না অভিভাবকরা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ফাতেমা বেগম গণমাধ্যমে বলেন, ‘সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। স্থানীয়রা ভয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পরিবার সারারাত না ঘুমিয়ে বসে ছিল।’
এর আগে সোমবার বান্দরবানের ঘুমধুমে সীমান্তের মায়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টার শেল জলপাইতলী এলাকায় ঘরের ভিতর ঢুকে বিস্ফোরিত হয়ে দুইজন নিহত হয়। আহত হয় এক শিশু। গত রোববার দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে।
ঘটনার পর সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষদের সতর্কভাবে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ উপ-অধিনায়ক আবু সালাম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকার উত্তেজনা শুরু হয়েছে সেটি এখনও চলমান রয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাব ও পুলিশ যে যার ক্ষেত্র থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আর সীমান্তে ঘেঁষে যেসব পরিবার আছে তারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্র স্থানে আশ্রয় নিয়েছে এবং সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে না থেকে নিরাপদে থাকার অনুরোধ জানান। তিনি আরও জানান, পাশপাশি সীমান্তের জোরদার করার জন্য, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো আরও জোরদার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে কোনো রোহিঙ্গা বা বিছিন্নতাবাদী দল যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বর্ডার গার্ড বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের এক লাখের বেশি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মায়ানমারে যুদ্ধের জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনা এবং আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, ইতোমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন ও টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে মঙ্গলবারও গোলাগুলি চলছে।
দুই জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত সংলগ্ন ওইসব এলাকায় এক লাখের বেশি বাসিন্দা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আপাতত নিরাপদ দূরত্বে স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে তাদের রাখা হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ইতোমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করেছেন।