হরিপুর ৪১২ মে.ও., রামপাল ১৩২০ মে.ও., বরিশাল ৩০৭ মে.ও., বাঁশখালী ১৩২০ মে.ও.
হরিপুর ৪১২ মে.ও., রামপাল ১৩২০ মে.ও., বরিশাল ৩০৭ মে.ও., বাঁশখালী ১৩২০ মে.ও.
হঠাৎ প্রায় একই সময়ে দেশের ৪টি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পরপরই বন্ধ হয় বাগেরহাটের রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট, বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে শুধু হরিপুর গ্যাসভিত্তিক; অন্য তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
একসঙ্গে এতগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রিড বিপর্যয় হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রোববার বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় জটিলতা হয়নি। ওই সময় পায়রা থেকে তুলানামূলক বেশী বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে। তবে ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পিডিবির একটি সূত্রে জানা যায়, যে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রোববার একই সময়ে বন্ধ ছিল, সেগুলো আগের দিন গত শনিবার এবং এর আগের দিন শুক্রবার ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছিল। সূত্র বলছে, এই সময় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয় না।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারিগরি ত্রুটির কারণে রোববার বিকেল ৩টার কিছু পর হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট (মে.ও.) গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ ছিল। হরিপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেমে গেলে কেন্দ্রটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সাবস্টেশন মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায়।
হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাইকার সহায়তায় স্থাপিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (ইজিসিবি) প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল কেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত শুক্র ও শনিবার একই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট (কমবেশি) বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে।
রোববার একই সময় (বিকেল ৩টার কিছু পর) চট্টগ্রামের বাঁশখালীর (এসএস পাওয়ার) ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘন্টা কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রেটিতে এস আলম গ্রুপের অংশীদারিত্বে পরিমাণ ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজি।
গত শুক্র ও শনিবার একই সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে ২৮০ মেগাওয়াট (কমবেশি) বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে।
রোববার একই সময় (বিকেল ৩টার কিছু পর) বন্ধ হয়ে যায় বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কেন্দ্রটিতে কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এটি পরিচালনা করছে।
গত শুক্র ও শনিবার একই সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে ৩৫০ মেগাওয়াট (কমবেশি) বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে।
ওইদিন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এটি বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিইপিসিএল) মালিকানাধীন একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
গত শুক্র ও শনিবার একই সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে ১৫০ মেগাওয়াট (কমবেশি) বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে।
চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রোববার যে সময় বন্ধ হয়ে যায়, তখন পটুয়াখালির পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে অন্য দিনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি। সংস্থাটির তথ্যে দেখা যায়, রোববার বিকেল ৪টায় পায়রা থেকে ৯৬০ মেগাওয়াট, বিকেল ৫টায় ৯৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।
গত শুক্র ও শনিবার একই সময় পায়রা থেকে বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৮০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত। কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।
হঠাৎ একসঙ্গে এতগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি চালু হয়েছে। কোন সমস্যা হয়নি।’
একসঙ্গে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু হরিপুরেরটাই জানি। অন্যগুলো আমার জানা নাই।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ খাতের আরও কয়েকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)কথা হয় সংবাদের।
সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী সংবাদকে বলেন, ‘হরিপুরে আইসোলেটরে প্রবলেম হয়েছিল। এরপর বাসবার ফল্ট হয়। হরিপুরের সঙ্গে কানেক্টেড সব সাবস্টেশন বন্ধ হয়ে যায়।’
'আইসোলেটর' এক ধরনের সুইচ। বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিশেষ করে ট্রান্সফরমারকে নোলোড অবস্থায় বা সামান্য লোড অবস্থায় লাইন হতে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আইসোলেটর ব্যবহার করা হয়। 'বাসবার' একাধিক ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট থেকে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি সংগ্রহ করে এবং বিতরণ করে।
একই সময়ে অন্য তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘আসলে কী কারণে একই সময়ে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হলো, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’