alt

আইএমএফের ঋণের শর্ত, টানাপড়েন, আলোচনায় কী

রেজাউল করিম : রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএফের ঋণের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শর্ত ‘পর্যাপ্ত’ রিজার্ভ না রাখতে পারলেও প্রথম দুই কিস্তির ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি রাজস্ব বাড়ানোর শর্তও পূরণ হয়নি। এখন বাজেট ‘ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ বা ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। ১০ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার সুপারিশও করেছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার জানতে চেয়েছে ঋণ দেয়ার আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে এখন বাংলাদেশে আছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশকে দেয়া শর্তগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছে এবং বাস্তবায়নের ‘বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা’ করছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

সম্প্রতি অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এর সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি।

শর্তগুলো মধ্যে আরও রয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের মতো সামাজিক ব্যয়ের জন্য সময়সীমার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ভ্যাট আইন পাস করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করা, কর ছাড় কমানো এবং ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা।

আগামীতে শর্ত পুরণ না হলে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পেতে ঝামেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের অর্থ দেবে। এর জন্য ধারাবাহিকভাবে সবগুলো শর্ত পুরণ করতে হবে। প্রথমদিকের কিছু শর্ত পুরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। তারপরও দুটি কিস্তি এসেছে। এতে আমাদের আশ্বস্থ হওয়া ঠিক নয় যে বাকি শর্তগুলো পুরণ না হলেও পুরো কিস্তি পাবো।’

জাহিদ হোসেন বলছেন, ‘আইএমএফ মূলত রাজস্ব বাড়াতে বলেছে। সরকার কিভাবে রাজস্ব বাড়াবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকি না কমিয়েও রাজস্ব বাড়াতে পারে। সেগুলো ভেবে দেখা উচিত। বিদ্যুৎ খাতে যেসব বাড়তি খরচ আছে সেগুলো কমালেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। এখন সরকার কি করবে সেটা তার বিষয়।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ খেলাপি কারা সেটা সরকার জানে। এখন সরকার চাইলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু সরকার হয়তো কোনো কারণে সেটা করছে না।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদলের কাছে অর্থবিভাগ খেলাপি ঋণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। অর্থবিভাগ জানিয়েছে, গত ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ‘প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে’। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।

আইএমএফের শর্তের আওতায়, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নীচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নীচে নামানোর লক্ষ্য।

অর্থ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে সফররত মিশন। বাড়তি মূল্যস্ফীতি উল্লেখ করে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত তাদের আওতায় নিয়ে এর সম্প্রাসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানান অনিয়মের কারণে বিদ্যামান উপকারভোগীরাও সঠিভাবে ভাতা পান না- এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংকখাতে সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের দল। বৈঠকে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে এতে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে আইএমএফ।

‘ক্রলিং পেগ’ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। আশির দশকে এই পদ্ধতি চালু হয় কয়েকটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে।

বছরের পর বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার কথা বলেছে আইএমএফ। তবে সংস্থাটির পরামর্শ দেয়ার অনেক আগে থেকেই এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে এনবিআর বলছে যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। ‘জটিল’ এমন সিদ্ধান্ত ‘হুটহাট’ করে নেয়া ‘সম্ভব হবে না’ বলে বলছে এনবিআর।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসবে। ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেট্রনিক্স, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানির কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ-এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না।’

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ বলছে কর অবকাশ কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আর এনবিআর বলছে, আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে সেটা কমানো যাবে না। আমরা যদি বলি, কর অবকাশ করলে রাজস্ব আয় বাড়বে সেটাও তো দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে। এই মুহূর্তে সেটাই করা দরকার।’

একই সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের পরামর্শ বাজেটের আকার ও ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর।

ছবি

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, কোনো শক্তিই ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব

ছবি

ট্রাইব্যুনাল ফেইস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’: প্রসিকিউটর

কিউকম সিইও রিপন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বুধবার

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান হান্নানের সহযোগীর দুই ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

ছবি

১ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে বইমেলার দাবি, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি

ছবি

পাচারের শিকার শান্তনা দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ফিরলো

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো: আরও ৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৯১২ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩ জনের

ইসির সংলাপ শুরু কাল থেকে, ধাপে ধাপে ডাকা হবে দলগুলোকে

ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে ‘৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে’ সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

ছবি

তৌহিদ হোসেন বললেন, দিল্লির বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ ভিত্তিহীন

ছবি

বিমানবন্দরগুলোকে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে কয়েকটি নির্দেশ : বেবিচক

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার প্রস্তুত, আদালত বদল

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদিরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, রায়ের অপেক্ষা, হাসিনার বিরুদ্ধে ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলা

এটা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নয়, এটা নতুন বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি প্রেস সচিবের

লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

শক্তিশালী বোমা মেশিন বসিয়ে বালু অপসারণ, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন: নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ‘জিহাদ’ ঘোষণা

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদের বিধান কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

ছবি

সনদ ও গণভোটের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

ছবি

ইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ: বাগেরহাটে ৪ ও গাজীপুরে ৫ আসনই বহাল

ছবি

দুদকের অভিযোগ: বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা আয়বহির্ভূত সম্পদ

ছবি

প্লট বরাদ্দ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন, ১৭ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন

প্রাথমিক শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত বদল, ফের কর্মবিরতি ঘোষণা

ছবি

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, অবস্থান কর্মসূচি চলবে

ছবি

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি

ছবি

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করল ঢাকা

ছবি

গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের, বিবেচনার আশ্বাস ইসির

ছবি

অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘিরে অনিরাপদ বোধ ‘করছে না’ প্রসিকিউশন

ছবি

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় ২২ সাক্ষী হাজির

ছবি

সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ঢাকা থেকে ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করবো, পদত্যাগ ‘উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর’: আসিফ মাহমুদ

ছবি

১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় নির্ধারণ—প্রসিকিউশন বলছে, তারা অনিরাপদ নয়

tab

আইএমএফের ঋণের শর্ত, টানাপড়েন, আলোচনায় কী

রেজাউল করিম

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএফের ঋণের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শর্ত ‘পর্যাপ্ত’ রিজার্ভ না রাখতে পারলেও প্রথম দুই কিস্তির ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি রাজস্ব বাড়ানোর শর্তও পূরণ হয়নি। এখন বাজেট ‘ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ বা ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। ১০ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার সুপারিশও করেছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার জানতে চেয়েছে ঋণ দেয়ার আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে এখন বাংলাদেশে আছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশকে দেয়া শর্তগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছে এবং বাস্তবায়নের ‘বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা’ করছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

সম্প্রতি অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এর সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি।

শর্তগুলো মধ্যে আরও রয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের মতো সামাজিক ব্যয়ের জন্য সময়সীমার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ভ্যাট আইন পাস করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করা, কর ছাড় কমানো এবং ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা।

আগামীতে শর্ত পুরণ না হলে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পেতে ঝামেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের অর্থ দেবে। এর জন্য ধারাবাহিকভাবে সবগুলো শর্ত পুরণ করতে হবে। প্রথমদিকের কিছু শর্ত পুরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। তারপরও দুটি কিস্তি এসেছে। এতে আমাদের আশ্বস্থ হওয়া ঠিক নয় যে বাকি শর্তগুলো পুরণ না হলেও পুরো কিস্তি পাবো।’

জাহিদ হোসেন বলছেন, ‘আইএমএফ মূলত রাজস্ব বাড়াতে বলেছে। সরকার কিভাবে রাজস্ব বাড়াবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকি না কমিয়েও রাজস্ব বাড়াতে পারে। সেগুলো ভেবে দেখা উচিত। বিদ্যুৎ খাতে যেসব বাড়তি খরচ আছে সেগুলো কমালেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। এখন সরকার কি করবে সেটা তার বিষয়।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ খেলাপি কারা সেটা সরকার জানে। এখন সরকার চাইলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু সরকার হয়তো কোনো কারণে সেটা করছে না।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদলের কাছে অর্থবিভাগ খেলাপি ঋণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। অর্থবিভাগ জানিয়েছে, গত ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ‘প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে’। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।

আইএমএফের শর্তের আওতায়, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নীচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নীচে নামানোর লক্ষ্য।

অর্থ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে সফররত মিশন। বাড়তি মূল্যস্ফীতি উল্লেখ করে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত তাদের আওতায় নিয়ে এর সম্প্রাসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানান অনিয়মের কারণে বিদ্যামান উপকারভোগীরাও সঠিভাবে ভাতা পান না- এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংকখাতে সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের দল। বৈঠকে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে এতে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে আইএমএফ।

‘ক্রলিং পেগ’ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। আশির দশকে এই পদ্ধতি চালু হয় কয়েকটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে।

বছরের পর বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার কথা বলেছে আইএমএফ। তবে সংস্থাটির পরামর্শ দেয়ার অনেক আগে থেকেই এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে এনবিআর বলছে যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। ‘জটিল’ এমন সিদ্ধান্ত ‘হুটহাট’ করে নেয়া ‘সম্ভব হবে না’ বলে বলছে এনবিআর।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসবে। ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেট্রনিক্স, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানির কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ-এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না।’

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ বলছে কর অবকাশ কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আর এনবিআর বলছে, আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে সেটা কমানো যাবে না। আমরা যদি বলি, কর অবকাশ করলে রাজস্ব আয় বাড়বে সেটাও তো দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে। এই মুহূর্তে সেটাই করা দরকার।’

একই সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের পরামর্শ বাজেটের আকার ও ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর।

back to top