২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে ‘ইট ভাটা, পরিবেশ দূষণ এবং বায়ু দূষণ’ সম্পর্কিত খবরেই ‘বেশি মনোযোগ’ বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের।
ওই খবরগুলোই পুনরাবৃত্তি বিষয় হিসেবে আসে সংবাদপত্রের পাতায়। এর বাইরে কালেভাদ্রে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ুর মান বিষয়ক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করা হয় সংবাদমাধ্যমে।
গবেষণাটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ ইদ্রিস আলী। ছোটবেলায় ৬ ভাইয়ের সংসারে খুব আয়েশে মানুষ। কিন্তু কয়েকটি বড় বন্যায় তার জীবন একেবারে উল্টে গেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর তার গ্রামের পাশে নদী ভাঙন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ভাঙতে ভাঙতে তার পৈত্রিক ভিটা ও কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভিটেবাড়ী ছেড়ে অন্য জায়গায় বসতি গড়েন তিনি। কয়েক মাস আগে অসুস্থ হয়ে এক পা হারিয়েছেন। নদী ভাঙনে বাস্তচ্যুত ইদ্রিস আলী খোঁজ কেউ নেয়নি। কোনো গণমাধ্যমে তার কষ্টের কথা উঠে আসেনি।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে এখন আলোচিত শব্দ। আর এর নির্মম শিকারের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ধরিত্রীর জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়ে খবরের হার খুবই কম। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা, যথাযথ লোকদের সেই খবর তৈরি ও পরিবেশনের দায়িত্ব দেয়া, আর প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান। ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিজমের ওপর পিএইচডি করেছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশের গণমাধ্যমের ক্যাপাসিটি (সামর্থ্য) কম। আর আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো পলিট্রিক্স ও ইকনোমিক্সকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সায়েন্স জার্নালিজম একটু পিছিয়ে আছে। সায়েন্স জার্নালিজমের (বিজ্ঞানভিত্তিক সাংবাদিকতার) একটা ইম্পরট্যান্ট আস্পেক্ট (গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ) জলবায়ু, পরিবেশ। এগুলো বোঝার মতো মানুষও কম। এই ইস্যুতে একটার (বিষয়ের) সঙ্গে আরেকটার কানেক্ট (যুক্ত) করার ধৈর্য্য ও পড়াশোনা করার আগ্রহও কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে এফোর্ড (কুলাতে) করতে পারেনা। তখন রিপোর্টারও ভাবে এই তো ডে ইভেন্ট কাভার (দিনের ঘটনার খবর পরিবেষণ) করেই চলে যাচ্ছে। আর এই চলে যাওয়ার বিষয়টাই আমাদের গণমাধ্যমে বেশি।’
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ আবদুর রহমান, সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রোনমেন্টের (সিপিই) পরিচালক। তিনিও বলছেন বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়ে খবরের হার ‘খুবই কম’।
‘যে কারণে স্থানীয় পর্যায় থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সমাধান, ভবিষ্যত দিক নির্দেশনা নিয়ে তেমন কোনো তথ্যই সংবাদপত্রের পাতা থেকে পাওয়া যায় না।’
আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সব পত্রিকা ও টেলিভিশন জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে খবর পরিবেশন করে। তবে বেশিরভাগ খবরেই নিউজের (তথ্য) চেয়ে ভিউজকে (মতামত) গুরুত্ব দেয়। যতগুলো খবর পত্রিকার পাতায় আসে তার বেশিরভাগই বিভিন্ন সভা সেমিনারের নিউজ। পাশাপাশি এও দেখা যায় পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের কোনো মতামত না নিয়ে যার তার বক্তব্য নিয়েই খবর পরিবেশন করে, যা গুরুত্ব হারায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সভা সেমিনারে অনেক সময় কিছু ভুল তথ্যও পরিবেশিত হয়। সেগুলোকে যাছাই-বাছাই করে সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। নতুবা গণমানুষের কাছে ভুল তথ্য যাবার সুযোগ থাকে আর এতে করে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
আর সাংবাদিকতার শিক্ষক মফিজুর রহমানের মতে পরিবেশ বা জলবায়ু পরিবর্তনের সাংবাদিকতা চরিত্রগতভাবেই অনুসন্ধানী ধরনের; শুধু দিনের ঘটনার খবর পরিবেশন করে বা প্রচারধর্মী সাংবাদিকতা (এডভোকেসি জার্নালিজম) করে খুব বেশি মানুষকে সচেতন করা যাবে না।
১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। দিবসটি সামনে এলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপদ পরিবেশের কথা আলোচনা হয়।
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে ‘ইট ভাটা, পরিবেশ দূষণ এবং বায়ু দূষণ’ সম্পর্কিত খবরেই ‘বেশি মনোযোগ’ বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের।
ওই খবরগুলোই পুনরাবৃত্তি বিষয় হিসেবে আসে সংবাদপত্রের পাতায়। এর বাইরে কালেভাদ্রে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ুর মান বিষয়ক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করা হয় সংবাদমাধ্যমে।
গবেষণাটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ ইদ্রিস আলী। ছোটবেলায় ৬ ভাইয়ের সংসারে খুব আয়েশে মানুষ। কিন্তু কয়েকটি বড় বন্যায় তার জীবন একেবারে উল্টে গেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর তার গ্রামের পাশে নদী ভাঙন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ভাঙতে ভাঙতে তার পৈত্রিক ভিটা ও কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভিটেবাড়ী ছেড়ে অন্য জায়গায় বসতি গড়েন তিনি। কয়েক মাস আগে অসুস্থ হয়ে এক পা হারিয়েছেন। নদী ভাঙনে বাস্তচ্যুত ইদ্রিস আলী খোঁজ কেউ নেয়নি। কোনো গণমাধ্যমে তার কষ্টের কথা উঠে আসেনি।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে এখন আলোচিত শব্দ। আর এর নির্মম শিকারের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ধরিত্রীর জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়ে খবরের হার খুবই কম। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা, যথাযথ লোকদের সেই খবর তৈরি ও পরিবেশনের দায়িত্ব দেয়া, আর প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান। ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিজমের ওপর পিএইচডি করেছেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশের গণমাধ্যমের ক্যাপাসিটি (সামর্থ্য) কম। আর আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো পলিট্রিক্স ও ইকনোমিক্সকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সায়েন্স জার্নালিজম একটু পিছিয়ে আছে। সায়েন্স জার্নালিজমের (বিজ্ঞানভিত্তিক সাংবাদিকতার) একটা ইম্পরট্যান্ট আস্পেক্ট (গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ) জলবায়ু, পরিবেশ। এগুলো বোঝার মতো মানুষও কম। এই ইস্যুতে একটার (বিষয়ের) সঙ্গে আরেকটার কানেক্ট (যুক্ত) করার ধৈর্য্য ও পড়াশোনা করার আগ্রহও কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে এফোর্ড (কুলাতে) করতে পারেনা। তখন রিপোর্টারও ভাবে এই তো ডে ইভেন্ট কাভার (দিনের ঘটনার খবর পরিবেষণ) করেই চলে যাচ্ছে। আর এই চলে যাওয়ার বিষয়টাই আমাদের গণমাধ্যমে বেশি।’
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ আবদুর রহমান, সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রোনমেন্টের (সিপিই) পরিচালক। তিনিও বলছেন বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়ে খবরের হার ‘খুবই কম’।
‘যে কারণে স্থানীয় পর্যায় থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সমাধান, ভবিষ্যত দিক নির্দেশনা নিয়ে তেমন কোনো তথ্যই সংবাদপত্রের পাতা থেকে পাওয়া যায় না।’
আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সব পত্রিকা ও টেলিভিশন জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে খবর পরিবেশন করে। তবে বেশিরভাগ খবরেই নিউজের (তথ্য) চেয়ে ভিউজকে (মতামত) গুরুত্ব দেয়। যতগুলো খবর পত্রিকার পাতায় আসে তার বেশিরভাগই বিভিন্ন সভা সেমিনারের নিউজ। পাশাপাশি এও দেখা যায় পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের কোনো মতামত না নিয়ে যার তার বক্তব্য নিয়েই খবর পরিবেশন করে, যা গুরুত্ব হারায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সভা সেমিনারে অনেক সময় কিছু ভুল তথ্যও পরিবেশিত হয়। সেগুলোকে যাছাই-বাছাই করে সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। নতুবা গণমানুষের কাছে ভুল তথ্য যাবার সুযোগ থাকে আর এতে করে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
আর সাংবাদিকতার শিক্ষক মফিজুর রহমানের মতে পরিবেশ বা জলবায়ু পরিবর্তনের সাংবাদিকতা চরিত্রগতভাবেই অনুসন্ধানী ধরনের; শুধু দিনের ঘটনার খবর পরিবেশন করে বা প্রচারধর্মী সাংবাদিকতা (এডভোকেসি জার্নালিজম) করে খুব বেশি মানুষকে সচেতন করা যাবে না।
১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। দিবসটি সামনে এলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপদ পরিবেশের কথা আলোচনা হয়।