alt

ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক দখল নিয়ে অস্থিরতা

রেজাউল করিম : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪

রাজনৈতিক পালা বদলের পর বিভিন্ন ব্যাংকে শুরু হয়েছে বড় ধরনের অস্থিরতা। কোনো ব্যাংকের সাধারণ কর্মীরা ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করছেন। কোনো ব্যাংকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আবার কোনো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে হামলা, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক পালা বদলের পর এমন ঘটনা ঘটবে এটা আগে থেকে অনুমান করা যাচ্ছিল। তবে যা-ই হোক না কেন, ব্যাংকে অবশ্যই আমানতারীদের স্বার্থ রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই সংকট প্রথম শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই অর্থাৎ ৬ আগস্টে ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০১৭ সালের মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বহিষ্কারের দাবি তোলেন। সে সময় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। পুরনো কর্মীদের অভিযোগ, ‘মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব জনবলের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া এসব জনবলের অধিকাংশ অযোগ্য এবং অনেকের শিক্ষা সনদ নেই।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীরা ঘোষণা দেন, মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যাংকে ঢুকতে দেয়া হবে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১১ আগস্ট রোববার সকালে নতুন কর্মীরা একত্র হয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে যান। এ সময় পুরনো কর্মীরা তাদের বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন নতুন কর্মীদের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়। এতে ব্যাংকটির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন।

ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, এএমডি জেকিউএম হাবিবুল্লাহ, মো. আলতাফ হুসাইন, মো. আকিজ উদ্দিন, মো. মিফতাহ উদ্দিন, মো. সাব্বির, কাজী মো. রেজাউল করিম, আবদুল্লাহ আল মামুন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন, তাহের উদ্দিনসহ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপকদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংকখাতে এই অরাজগতা একদিনে হয়নি। এক সময় যারা জোর করে ব্যাংকগুলো দখল করেছে এখন তাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছে। এমনটা হবে সেটা আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। তবে কোনো কিছুই আইনের বাইরে হওয়া উচিত নয়। ব্যাংকে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

একই ঘটনা ঘটেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল)। ব্যাংকটি দখলদার মুক্ত করার দাবিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবন্ধনে এসআইবিএল ব্যাংক দখলদার মুক্ত করার দাবিতে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানানো হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট ও অবৈধ দখলদার এস আলমের থাবা থেকে ব্যাংকটি উদ্ধার করতে হবে। অবিলম্বে মূল মালিকদের মালিকানা ফেরত দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা স্পন্সর ডিরেক্টরদের সমন্বয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এস আলম গং নামে-বেনামে এই ব্যাংক হতে বিপুল অর্থ সরিয়ে নিয়েছে, সেটি পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এস আলমের পেটোয়া বাহিনী ইতোমধ্যে দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।’

তারা বলেন, ‘এস আলম ও তার সহযোগীদের চক্রান্তে সাধারণ আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে লোপাট করা হয়েছে। সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও উদ্যোক্তা পরিচালকরা এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।’

একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ারের শাস্তির দাবি জানান তারা।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবারের কবল থেকে মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ইউসিবি ব্যাংকের কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার ও কর্মচারীরা। তারা বলছেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ, অবৈধভাবে লন্ডনে ইউসিবি ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারকারী সাইফুজ্জান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবার হতে ব্যাংকের মুক্তি চাই।’

কিছুদিনের মধ্যে সবকিছুর সমাধান হবে জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আগে যদি আইন মেনে ব্যাংকগুলো চলতো তাহলে তো আজ এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না। নতুন সরকার দায়িত্বে এসেছে। তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। বাকি শেয়ার ছিল বিকল্পধারার সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নানের হাতে। ২০১৬ সালে আবদুল মান্নানের শেয়ার কিনে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর পটিয়া এলাকার নাগরিকদের ব্যাপক হারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৭০০ জনই পটিয়া এলাকার।

সরকার পতনের পর ব্যাংকে যাচ্ছেন না এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম। সোমবার ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদের অফিসে গেলে তাকে ঘিরে ধরেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কেউ চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানান, আবার কেউ পদোন্নতির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এই সময় কেউ কেউ ব্যাংককে এস আলম মুক্ত করার দাবি জানান।

এই পরিস্থিতিকে ব্যাংক খাতের জন্য শুভ নয় জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের দখল নিয়ে যদি গোলাগুলি হয় সেটা এই খাতের জন্য খারাপ সংবাদ। এতে আমানতকারী আস্থা হারাবে। এমনিতে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থার সংকট রয়েছে। আবার নতুন করে এসব শুরু হলে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতো তাহলে ব্যাংকগুলোতে অবৈধ দখলদারিত্ব থাকতো না। তবে আগে যা হয়েছে সেটাতো এখন বলে লাভ নাই। এখন বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।’

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকে রাখা অর্থ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন আমানতকারীরা। অনেকে এসব ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে অন্য ব্যাংকে রাখবেন বলে জানাচ্ছেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে নিতে হবে। মালিকানা নিয়ে দখল পাল্টা দখল খেলা চললে যাতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

এমপিওভুক্তির দাবিতে ৩৩তম দিনে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান

নবম গ্রেডে বেতন নির্ধারণসহ চার দাবিতে ‘শিক্ষা ভবন’ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি মাধ্যমিক শিক্ষকদের

৪৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ: সুপারিশ পেলেন ৫৬৫ জন

ছবি

বিমানবাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

‘ঘুষ-দুর্নীতি’: ঢাকা উত্তরের প্রশাসক এজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

সাগরে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা

বাউলদের ওপর হামলা: সাঁড়াশি অভিযান চলছে, বললেন প্রেস সচিব

প্রবাসী ভোটার: পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না দিলে ব্যালট যাবে না

ভবন ও নির্মাণ কাজ অনুমোদনে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আরাকান আর্মির হাতে আটক ১২ জেলে

ট্রাইব্যুনালে হাসিনার পক্ষে লড়বেন না জেড আই খান পান্না

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ৫৬৭ জন

আতঙ্ক না কাটতেই আবারও ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে কাঁপলো দেশ

ত্রয়োদশ নির্বাচন: নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হবে তিন স্তরে

ছবি

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা ও দুই সন্তানের সাজা

ছবি

সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হলেন ড. মো. আতিকুস সামাদ

ছবি

দুই দিনে চার দফা ভূমিকম্প—আতঙ্কের মধ্যেই ফের কেঁপে উঠল বাংলাদেশ

ছবি

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি মামলায় সর্বোচ্চ সাজা না পেয়ে হতাশ দুদক

ছবি

প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৬১৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩

ছবি

৩৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি

ছবি

‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’: বিএনপির প্রার্থী তুলির বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই

ছবি

ক্রিকেটার সাকিবের মামলায় প্রতিবেদন জমা ৩ মার্চে

ছবি

সাবেক আইজিপি বেনজীরের স্ত্রী-কন্যা ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ

ছবি

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে লেখা চিঠির জবাব এখনও দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হাসিনার লকার থেকে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ

ছবি

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ; ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ

ছবি

শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোচিং বা গাইড বই বন্ধ হবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

পোস্টাল ভোটিং: একযোগে সব প্রবাসীর নিবন্ধন শুরু

ছবি

নির্বাচন ঠেকাতে চাইবে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: সিইসি

ছবি

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ দুই দফা চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি ভারত : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

তারাগঞ্জে উপকারভোগীদের তালিকা হালনাগাদ পর্যবেক্ষণ করেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ

ছবি

এয়ারবাস না কেনার ব্যাপারে সতর্ক করলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় জার্মানি

ছবি

রঙিন হবে গণভোটের ব্যালট, সাদাকালো সংসদেরটি

ছবি

চাপ দিলে নাম প্রকাশ করে দেব: দুদক চেয়ারম্যান

tab

ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক দখল নিয়ে অস্থিরতা

রেজাউল করিম

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪

রাজনৈতিক পালা বদলের পর বিভিন্ন ব্যাংকে শুরু হয়েছে বড় ধরনের অস্থিরতা। কোনো ব্যাংকের সাধারণ কর্মীরা ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করছেন। কোনো ব্যাংকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আবার কোনো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে হামলা, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক পালা বদলের পর এমন ঘটনা ঘটবে এটা আগে থেকে অনুমান করা যাচ্ছিল। তবে যা-ই হোক না কেন, ব্যাংকে অবশ্যই আমানতারীদের স্বার্থ রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই সংকট প্রথম শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই অর্থাৎ ৬ আগস্টে ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০১৭ সালের মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বহিষ্কারের দাবি তোলেন। সে সময় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। পুরনো কর্মীদের অভিযোগ, ‘মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব জনবলের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া এসব জনবলের অধিকাংশ অযোগ্য এবং অনেকের শিক্ষা সনদ নেই।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীরা ঘোষণা দেন, মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যাংকে ঢুকতে দেয়া হবে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১১ আগস্ট রোববার সকালে নতুন কর্মীরা একত্র হয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে যান। এ সময় পুরনো কর্মীরা তাদের বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন নতুন কর্মীদের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়। এতে ব্যাংকটির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন।

ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, এএমডি জেকিউএম হাবিবুল্লাহ, মো. আলতাফ হুসাইন, মো. আকিজ উদ্দিন, মো. মিফতাহ উদ্দিন, মো. সাব্বির, কাজী মো. রেজাউল করিম, আবদুল্লাহ আল মামুন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন, তাহের উদ্দিনসহ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপকদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংকখাতে এই অরাজগতা একদিনে হয়নি। এক সময় যারা জোর করে ব্যাংকগুলো দখল করেছে এখন তাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছে। এমনটা হবে সেটা আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। তবে কোনো কিছুই আইনের বাইরে হওয়া উচিত নয়। ব্যাংকে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

একই ঘটনা ঘটেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল)। ব্যাংকটি দখলদার মুক্ত করার দাবিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবন্ধনে এসআইবিএল ব্যাংক দখলদার মুক্ত করার দাবিতে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানানো হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট ও অবৈধ দখলদার এস আলমের থাবা থেকে ব্যাংকটি উদ্ধার করতে হবে। অবিলম্বে মূল মালিকদের মালিকানা ফেরত দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা স্পন্সর ডিরেক্টরদের সমন্বয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এস আলম গং নামে-বেনামে এই ব্যাংক হতে বিপুল অর্থ সরিয়ে নিয়েছে, সেটি পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এস আলমের পেটোয়া বাহিনী ইতোমধ্যে দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।’

তারা বলেন, ‘এস আলম ও তার সহযোগীদের চক্রান্তে সাধারণ আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে লোপাট করা হয়েছে। সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও উদ্যোক্তা পরিচালকরা এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।’

একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ারের শাস্তির দাবি জানান তারা।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবারের কবল থেকে মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ইউসিবি ব্যাংকের কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার ও কর্মচারীরা। তারা বলছেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ, অবৈধভাবে লন্ডনে ইউসিবি ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারকারী সাইফুজ্জান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবার হতে ব্যাংকের মুক্তি চাই।’

কিছুদিনের মধ্যে সবকিছুর সমাধান হবে জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আগে যদি আইন মেনে ব্যাংকগুলো চলতো তাহলে তো আজ এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না। নতুন সরকার দায়িত্বে এসেছে। তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। বাকি শেয়ার ছিল বিকল্পধারার সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নানের হাতে। ২০১৬ সালে আবদুল মান্নানের শেয়ার কিনে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর পটিয়া এলাকার নাগরিকদের ব্যাপক হারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৭০০ জনই পটিয়া এলাকার।

সরকার পতনের পর ব্যাংকে যাচ্ছেন না এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম। সোমবার ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদের অফিসে গেলে তাকে ঘিরে ধরেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কেউ চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানান, আবার কেউ পদোন্নতির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এই সময় কেউ কেউ ব্যাংককে এস আলম মুক্ত করার দাবি জানান।

এই পরিস্থিতিকে ব্যাংক খাতের জন্য শুভ নয় জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের দখল নিয়ে যদি গোলাগুলি হয় সেটা এই খাতের জন্য খারাপ সংবাদ। এতে আমানতকারী আস্থা হারাবে। এমনিতে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থার সংকট রয়েছে। আবার নতুন করে এসব শুরু হলে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতো তাহলে ব্যাংকগুলোতে অবৈধ দখলদারিত্ব থাকতো না। তবে আগে যা হয়েছে সেটাতো এখন বলে লাভ নাই। এখন বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।’

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকে রাখা অর্থ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন আমানতকারীরা। অনেকে এসব ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে অন্য ব্যাংকে রাখবেন বলে জানাচ্ছেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে নিতে হবে। মালিকানা নিয়ে দখল পাল্টা দখল খেলা চললে যাতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

back to top