alt

আ’লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন

হত্যা ও গুমের আরও দুই মামলা

আদালত বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০২৪

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বাগেরহাটের আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম বুধবার (১৪ আগস্ট) এ অভিযোগ দায়ের করেন। একই অপরাধে ব্যক্তির পাশাপাশি দল এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে। ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা অভিযোগটি তদন্ত করবে এবং সত্যতা পেলে মামলা করার সুপারিশ করবে। এরপর এই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করা হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এছাড়া রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ। এসব আসামির পাশাপাশি নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার গুম ও ছাত্র হত্যার ঘটনায় আরও দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। উত্তরা-পশ্চিম থানায় এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় র‌্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা ডিগ্রি কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের ভাই মো. রাজীব বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের মামলার আবেদন করলে শুনানি নিয়ে হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবির অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজধানীর কাফরুল থানাকে নির্দেশ দেন। বুধবার রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা-পশ্চিম থানাকে এজহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

কাফরুল থানায় মামলায় শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন হত্যার মামলার প্রথম আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিরা হলেন- হাসিনা সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, ?এমপি কামাল আহম্মেদ মজুমদার,

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত।

এ ছাড়াও এই মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজন ঢাকার কাফরুল থানার ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। বাদীর অভিযোগ,‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন আন্দোলনে একমত পোষণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হন।

ছাত্রজনতার গণআন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকরের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। আসামি শেখ হাসিনার এহেন ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য দেশের সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়। আসামি শেখ হাসিনার এই উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করেন।

‘এই পরিস্থিতিতে মামলার ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের গত ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে ছাত্রলীগনামীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণহত্যার নির্দেশ প্রদান করেন।’

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খসরু চৌধুরীদের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন।

‘আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিকনির্দেশনা পালনের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্দেশনা প্রদান করেন আসামি পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান।’

বাদী অভিযোগ করেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আসামির সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও হামলায় ওই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ১৯ জুলাই শুক্রবার হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে গুলি চালালে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন মিরপুর-১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। এদিন ফয়জুল ইসলাম রাজন ছাড়াও আরও অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এবং নিহত হন।’

এছাড়া মঙ্গলবার শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ঢাকার আদালতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেয়।

ছবি

২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৮৮ জন

ছবি

রোজ গার্ডেন কিনে রাষ্ট্রের ‘৩৩২ কোটি টাকা ক্ষতি’, অনুসন্ধানে দুদক

ছবি

আমার মায়ের জীবন বাঁচানোয় মোদি সরকারের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ: জয়

ছবি

ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ ৬টি মরদেহ পুড়িয়েছে: রাজসাক্ষী আফজালুল

মৃত ও ভুয়া ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা, বললেন ডিসি

ছবি

আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি ও পুড়িয়ে হত্যা: মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক এসআই আবজালুলের রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি

ছবি

গণভোট: করণীয় ঠিক করতে অধ্যাদেশের অপেক্ষায় ইসি

ছবি

খেলাপি ঋণ অবলোপনের সময়সীমা তুলে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

একইদিনে ইসির সংলাপে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, বিভিন্ন প্রস্তাব

ছবি

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সেনা ও পুলিশের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

।দিল্লিতে অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকে খলিলুর রহমান, আলোচনায় সিএসসি ও দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু

ছবি

বিজয় দিবসে এবারও প্যারেড নয়: জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় ২৫ কোটি টাকা খরচ করবে সরকার

ছবি

পলাতক ও দণ্ডিত আসামিদের বক্তব্য প্রচারে উদ্বেগ, সতর্ক করলো এনসিএসএ

ছবি

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ছবি

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

গাড়ি ভাঙচুর-পোড়ানোর মামলায় বিএমইউর চিকিৎসক গ্রেপ্তার, জামিন নামঞ্জুর

ছবি

এনসিপি ও বাসদ মার্কসবাদীকে নিবন্ধন দিয়ে ইসির প্রজ্ঞাপন

ছবি

নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুলের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

হাসিনা-আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড: বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক: এইচআরডব্লিউ

ছবি

দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি

ছবি

অ্যাপে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু, ব্যালট ডাকযোগে

ছবি

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ কত

ছবি

নগদের সাবেক এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের ৭৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

কৃষি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে সিএ এবং ডাচ মন্ত্রীর আলোচনা

ছবি

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৭০ বাংলাদেশি

ছবি

লি‌বিয়া থে‌কে দে‌শে ফি‌রলেন ১৭০ বাংলা‌দে‌শি

ছবি

ভারতকে চিঠি দেবে সরকার

ছবি

যা বললো ভারত

ছবি

রাষ্ট্রনিযুক্ত হাসিনার আইনজীবী

ছবি

প্রধান কৌঁসুলি ও অ্যাটর্নি জেনারেল

ছবি

‘ঐতিহাসিক’ রায়: সরকার ও উপদেষ্টাদের প্রতিক্রিয়া

tab

আ’লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন

হত্যা ও গুমের আরও দুই মামলা

আদালত বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০২৪

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বাগেরহাটের আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম বুধবার (১৪ আগস্ট) এ অভিযোগ দায়ের করেন। একই অপরাধে ব্যক্তির পাশাপাশি দল এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে। ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা অভিযোগটি তদন্ত করবে এবং সত্যতা পেলে মামলা করার সুপারিশ করবে। এরপর এই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করা হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এছাড়া রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ। এসব আসামির পাশাপাশি নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার গুম ও ছাত্র হত্যার ঘটনায় আরও দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। উত্তরা-পশ্চিম থানায় এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় র‌্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা ডিগ্রি কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের ভাই মো. রাজীব বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের মামলার আবেদন করলে শুনানি নিয়ে হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবির অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজধানীর কাফরুল থানাকে নির্দেশ দেন। বুধবার রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা-পশ্চিম থানাকে এজহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

কাফরুল থানায় মামলায় শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন হত্যার মামলার প্রথম আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিরা হলেন- হাসিনা সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, ?এমপি কামাল আহম্মেদ মজুমদার,

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত।

এ ছাড়াও এই মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজন ঢাকার কাফরুল থানার ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। বাদীর অভিযোগ,‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন আন্দোলনে একমত পোষণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হন।

ছাত্রজনতার গণআন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকরের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। আসামি শেখ হাসিনার এহেন ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য দেশের সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়। আসামি শেখ হাসিনার এই উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করেন।

‘এই পরিস্থিতিতে মামলার ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের গত ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে ছাত্রলীগনামীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণহত্যার নির্দেশ প্রদান করেন।’

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খসরু চৌধুরীদের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন।

‘আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিকনির্দেশনা পালনের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্দেশনা প্রদান করেন আসামি পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান।’

বাদী অভিযোগ করেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আসামির সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও হামলায় ওই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ১৯ জুলাই শুক্রবার হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে গুলি চালালে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন মিরপুর-১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। এদিন ফয়জুল ইসলাম রাজন ছাড়াও আরও অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এবং নিহত হন।’

এছাড়া মঙ্গলবার শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ঢাকার আদালতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেয়।

back to top