কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ১০ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলমের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন। এদিন বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাদের হাজির করেন পুলিশ। এরপর তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে তাদের এজলাসে ওঠানো হয়।
১৪ আগস্ট বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী কামাল মিয়া (৩৯) পেশায় একজন রিকশাচালক। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৩০ মিনিটে আমার স্বামী রিকশা নিয়ে পল্টন থানাধীন বটতলা গলির মুখে ভিআইপি রোডে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পল্টন মডেল থানাধীন ভিআইপি রোডের বটতলা গলির মুখে রাস্তার ওপর পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি জানতে পারি, ওই স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাস্তায় আগুন দেয় এবং বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। তখন পল্টন থানার এক পুলিশ সদস্য ডিউটি শেষে মোটরসাইকেলযোগে কাকরাইল থেকে পল্টন থানায় আসার পথে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা তার মোটরসাইকেল আটকে তাকে মারধর করে এবং তার কাছে থাকা পিস্তল, গুলি, ওয়্যারলেস সেট, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে যায় এবং দুষ্কৃতকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও ফাঁকা গুলি করলে আমার স্বামী ধাওয়ার মাঝে পড়ে যায়। দুষ্কৃতকারীদের গুলির আঘাতে আমার স্বামী গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তা পড়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।’
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা হয়েছিল বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি সূত্র জানিয়েছিল। তখন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, পলককে ‘একটি বাহিনীর কাছে’ হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই ঘটনার ৮দিন পর বুধবার রাতে পলককে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকেও বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার টুকু সম্পর্কে তেমন আলোচনা ছিল না। পলকের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।
পল্টন মডেল থানার ওসি সেন্টু মিয়া বলেন, শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক ও তানভীর হাসান সৈকতকে গত ১৯ জুলাই পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য তিনি ও তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হচ্ছে। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সালমান ও আনিসুলকে ১০ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দিশেহারা আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়তে পারলেও বেশিরভাগ থেকে যান দেশে। তাদের অধিকাংশই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ১০ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলমের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন। এদিন বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাদের হাজির করেন পুলিশ। এরপর তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে তাদের এজলাসে ওঠানো হয়।
১৪ আগস্ট বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী কামাল মিয়া (৩৯) পেশায় একজন রিকশাচালক। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৩০ মিনিটে আমার স্বামী রিকশা নিয়ে পল্টন থানাধীন বটতলা গলির মুখে ভিআইপি রোডে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পল্টন মডেল থানাধীন ভিআইপি রোডের বটতলা গলির মুখে রাস্তার ওপর পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি জানতে পারি, ওই স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাস্তায় আগুন দেয় এবং বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। তখন পল্টন থানার এক পুলিশ সদস্য ডিউটি শেষে মোটরসাইকেলযোগে কাকরাইল থেকে পল্টন থানায় আসার পথে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা তার মোটরসাইকেল আটকে তাকে মারধর করে এবং তার কাছে থাকা পিস্তল, গুলি, ওয়্যারলেস সেট, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে যায় এবং দুষ্কৃতকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও ফাঁকা গুলি করলে আমার স্বামী ধাওয়ার মাঝে পড়ে যায়। দুষ্কৃতকারীদের গুলির আঘাতে আমার স্বামী গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তা পড়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।’
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা হয়েছিল বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি সূত্র জানিয়েছিল। তখন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, পলককে ‘একটি বাহিনীর কাছে’ হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই ঘটনার ৮দিন পর বুধবার রাতে পলককে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকেও বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার টুকু সম্পর্কে তেমন আলোচনা ছিল না। পলকের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।
পল্টন মডেল থানার ওসি সেন্টু মিয়া বলেন, শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক ও তানভীর হাসান সৈকতকে গত ১৯ জুলাই পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য তিনি ও তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হচ্ছে। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সালমান ও আনিসুলকে ১০ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দিশেহারা আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়তে পারলেও বেশিরভাগ থেকে যান দেশে। তাদের অধিকাংশই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।