alt

দলীয় রাজনীতির কারণেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ

রেজাউল করিম : শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি খাতের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এই বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করেছে সাভার, আশুলিয়া ও গাজিপুরে অবস্থিত পোশাক ও ওষুধ কারখানাগুলোতে। ইতোমধ্যে কিছু তৈরি পোশাক ও ওষুধ কারখানা বন্ধ রয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন বেতন না হওয়া, চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাগুলোর কারণে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা ও নেতারা। শ্রমিকেরা মূলত ব্যবসার হাতবদলের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। দ্রুত এই বিক্ষোভ না থামলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।

এই অবস্থায় শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে সাভারের আশুলিয়ার তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা হতাশ। তারা বলেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হামলার কারণে কারখানা চালানো যায়নি। অনেক কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করতে আসছে হামলাকারীরা। আগুন দিয়ে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও হয়েছে কোথাও কোথাও।’

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) কথা হয় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বেশ কিছু এলাকার কারখানার মালিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই অবস্থায় তারা কারখানা বন্ধ রাখতে চাচ্ছে। আমরা মালিকদের বলেছি, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি। তারপর সিদ্ধান্ত নিবো কারখানা চালু রাখবো নাকি বন্ধ রাখবো।’

বিক্ষোভের কারণ সন্ধানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বললেও প্রকৃত কারণ নিশ্চিত নয় বলে জানান তারা। কেউ বলছেন, বিক্ষোভের মূল কারণ রাজনৈতিক কোন্দল। কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের নায্য দাবিগুলো না মানার কারণে তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাইরে থেকে এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে।

শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাঁচ উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ অসন্তোষের কোনো গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। ভাঙচুরের পেছনে ভাড়াটে ও টোকাইদের দায়ী করা হয়েছে।

প্রায় একই রকম কারণকে দায়ী করেন পোশাক শ্রমিকদের নেতারা। শুক্রবার কথা হয় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দল এসব খাত নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন তাদের বড় বড় নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছে। এখন আছে তাদের চেয়ে একটু নিচের নেতারা। বড় নেতার অনুপস্থিতিতে ছোট নেতারা ভাগবাটোয়ারা করা শুরু করেছে। যারা ভাগ পাচ্ছে না তারা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে।’

তবে এর কারণ আরেকটাও হতে পারে বলে তিনি জানান, ‘অনেক এলাকার চিত্র ভিন্নও হতে পারে। যেমন গত ১৫ বছরে একটি রাজনৈতিক দল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো, এখন আরেকটি বিরোধি দল নতুন করে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক উগ্রপন্থি শ্রমিক এই সুযোগে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে।’

কিছু কারখানায় শ্রমিকদের নায্য দাবি-দাওয়াতেও আন্দোলন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কারখানায় ওপর লেভেলের কর্মকর্তারা নিজেদেরকে জমিদার মনে করে। আর কর্মীদের মনে করে তারা দাস। তারা চায়, আগের মনিবরা তাদের দাসের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছিল তারাও এমন আচরণ করবে। অনেক কারখানায় এমন আচরণ করেও। উপর লেভেলের কিছু কর্মকর্তার আচরণ খুবই খারাপ। তারা বাপ-মা তুলে গালি দেয় কর্মীদের। অনেক কর্মী এটা সহ্য করে, আবার অনেক কর্মী ক্ষোভ পুষে রাখে। এছাড়াও, কম বেতন, পদোন্নতি না হওয়া, কাজের পরিবেশ না থাকা, ডে কেয়ার না থাকা ইত্যাদির কারণেও শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পারে।’

শুধু পোশাক শিল্পই নয়, দেশের ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হলে একে একে বন্ধ হয়ে যায় ১৭টিরও বেশি ওষুধ কারখানা।

গত ২৭ আগস্ট ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে অস্থায়ী কর্মচারীরা বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিতে, আইনবহির্ভূত আন্দোলন করছেন। তারা অনেক ফ্যাক্টরিতে কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন। এভাবে সব কোম্পানিতে হামলা চলতে থাকলে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না।

বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে। এতে দেশে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে। স্টাফদের বন্দী করে রেখে তারা (শ্রমিকরা) কাগজে সই নিতে চাচ্ছে। ইনসেপ্টায় প্রায় ৪০০ স্টাফকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। শ্রমিকরা দাবি জানাতে পারে, তাই বলে এভাবে জিম্মি করা তো ঠিক না। বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে।’

একাধিক ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ার পর আবার নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এমন দাবিও আসছে, যেগুলো পূরণ করতে গেলে কারখানার ভেতরে চেইন অব কমান্ড বা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পমালিকেরা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এই কর্মকর্তারা মনে করেন, শ্রমিকদের দিয়ে অস্থিরতা তৈরির পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে।

প্রায় দুই সপ্তাহের এ আন্দোলনে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেড, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এরিস্টোফার্মা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল পিএলসি, ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এসএমসি ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, সিটুসি ফার্মা লিমিটেড এবং ইনসেপ্টার দুটি কারখানাসহ ১৯টি ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৩০০ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে সচল কারখানার সংখ্যা প্রায় ২০০। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে এসব কারখানা। পাশাপাশি ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে দেশের কয়েকটি কোম্পানি।

একইভাবে ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে গাজীপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে খুলে দেয়া হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানা এলাকার নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। আর বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সময়ে ওষুধ রপ্তানি ছিল ১৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারের। এই রপ্তানি তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি ছিল।

নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট দু’টি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন

নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গোৎসব: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতীতে নদীর বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ছবি

কাঁটাতারে ঝুলে মারা যাওয়া সেই ফেলানীর ছোট ভাই এখন বর্ডারগার্ড

ডেঙ্গু: আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৪৭ জন

৪ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়: নাহিদ ইসলাম

ছবি

কুমিল্লায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪টি মাজারে হামলা, আগুন

ছবি

জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় রামপুরায় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ: পাঁচ আসামির বিচার শুরু

ছবি

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিসের আবেদন

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

tab

দলীয় রাজনীতির কারণেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ

রেজাউল করিম

শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি খাতের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এই বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করেছে সাভার, আশুলিয়া ও গাজিপুরে অবস্থিত পোশাক ও ওষুধ কারখানাগুলোতে। ইতোমধ্যে কিছু তৈরি পোশাক ও ওষুধ কারখানা বন্ধ রয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন বেতন না হওয়া, চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাগুলোর কারণে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা ও নেতারা। শ্রমিকেরা মূলত ব্যবসার হাতবদলের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। দ্রুত এই বিক্ষোভ না থামলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।

এই অবস্থায় শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে সাভারের আশুলিয়ার তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা হতাশ। তারা বলেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হামলার কারণে কারখানা চালানো যায়নি। অনেক কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করতে আসছে হামলাকারীরা। আগুন দিয়ে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও হয়েছে কোথাও কোথাও।’

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) কথা হয় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বেশ কিছু এলাকার কারখানার মালিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই অবস্থায় তারা কারখানা বন্ধ রাখতে চাচ্ছে। আমরা মালিকদের বলেছি, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি। তারপর সিদ্ধান্ত নিবো কারখানা চালু রাখবো নাকি বন্ধ রাখবো।’

বিক্ষোভের কারণ সন্ধানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বললেও প্রকৃত কারণ নিশ্চিত নয় বলে জানান তারা। কেউ বলছেন, বিক্ষোভের মূল কারণ রাজনৈতিক কোন্দল। কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের নায্য দাবিগুলো না মানার কারণে তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাইরে থেকে এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে।

শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাঁচ উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ অসন্তোষের কোনো গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। ভাঙচুরের পেছনে ভাড়াটে ও টোকাইদের দায়ী করা হয়েছে।

প্রায় একই রকম কারণকে দায়ী করেন পোশাক শ্রমিকদের নেতারা। শুক্রবার কথা হয় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দল এসব খাত নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন তাদের বড় বড় নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছে। এখন আছে তাদের চেয়ে একটু নিচের নেতারা। বড় নেতার অনুপস্থিতিতে ছোট নেতারা ভাগবাটোয়ারা করা শুরু করেছে। যারা ভাগ পাচ্ছে না তারা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে।’

তবে এর কারণ আরেকটাও হতে পারে বলে তিনি জানান, ‘অনেক এলাকার চিত্র ভিন্নও হতে পারে। যেমন গত ১৫ বছরে একটি রাজনৈতিক দল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো, এখন আরেকটি বিরোধি দল নতুন করে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক উগ্রপন্থি শ্রমিক এই সুযোগে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে।’

কিছু কারখানায় শ্রমিকদের নায্য দাবি-দাওয়াতেও আন্দোলন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কারখানায় ওপর লেভেলের কর্মকর্তারা নিজেদেরকে জমিদার মনে করে। আর কর্মীদের মনে করে তারা দাস। তারা চায়, আগের মনিবরা তাদের দাসের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছিল তারাও এমন আচরণ করবে। অনেক কারখানায় এমন আচরণ করেও। উপর লেভেলের কিছু কর্মকর্তার আচরণ খুবই খারাপ। তারা বাপ-মা তুলে গালি দেয় কর্মীদের। অনেক কর্মী এটা সহ্য করে, আবার অনেক কর্মী ক্ষোভ পুষে রাখে। এছাড়াও, কম বেতন, পদোন্নতি না হওয়া, কাজের পরিবেশ না থাকা, ডে কেয়ার না থাকা ইত্যাদির কারণেও শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পারে।’

শুধু পোশাক শিল্পই নয়, দেশের ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হলে একে একে বন্ধ হয়ে যায় ১৭টিরও বেশি ওষুধ কারখানা।

গত ২৭ আগস্ট ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে অস্থায়ী কর্মচারীরা বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিতে, আইনবহির্ভূত আন্দোলন করছেন। তারা অনেক ফ্যাক্টরিতে কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন। এভাবে সব কোম্পানিতে হামলা চলতে থাকলে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না।

বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে। এতে দেশে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে। স্টাফদের বন্দী করে রেখে তারা (শ্রমিকরা) কাগজে সই নিতে চাচ্ছে। ইনসেপ্টায় প্রায় ৪০০ স্টাফকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। শ্রমিকরা দাবি জানাতে পারে, তাই বলে এভাবে জিম্মি করা তো ঠিক না। বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে।’

একাধিক ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়ার পর আবার নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এমন দাবিও আসছে, যেগুলো পূরণ করতে গেলে কারখানার ভেতরে চেইন অব কমান্ড বা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পমালিকেরা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এই কর্মকর্তারা মনে করেন, শ্রমিকদের দিয়ে অস্থিরতা তৈরির পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে।

প্রায় দুই সপ্তাহের এ আন্দোলনে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেড, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এরিস্টোফার্মা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল পিএলসি, ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এসএমসি ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, সিটুসি ফার্মা লিমিটেড এবং ইনসেপ্টার দুটি কারখানাসহ ১৯টি ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৩০০ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে সচল কারখানার সংখ্যা প্রায় ২০০। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে এসব কারখানা। পাশাপাশি ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে দেশের কয়েকটি কোম্পানি।

একইভাবে ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে গাজীপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে খুলে দেয়া হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানা এলাকার নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। আর বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সময়ে ওষুধ রপ্তানি ছিল ১৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারের। এই রপ্তানি তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি ছিল।

back to top