alt

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত নিহত হয়েছেন। দ আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে গণতদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য জানানো হয়।

সরকার পতনের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন - সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই আন্দোলনে নিহত-আহত শ্রমিকদের সংখ্যা বের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে মজুরি ইস্যুতে আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য তুলে ধরে তদন্ত কমিটি। আন্দোলনে ৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১২ হাজার মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। কিন্তু শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিককে গুলি করা হয়েছে, তাকে পুলিশ নাকি অন্য কেউ গুলি করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিক মারা গেছেন, তিনি কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু আপনি বলছেন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কোনটা সঠিক? এর উত্তরে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে যে শ্রমিক মারা গেছেন তার শরীরে ছররা গুলি পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রশাসন প্রশ্ন তোলে। সুতরাং প্রশাসনও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিজিএমইএ থেকে কোনো তথ্য আমরা পায়নি। শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের দমন-পীড়নে কাজ করেছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিল্প পুলিশ বিলুপ্ত করাসহ তদন্ত কমিটির ৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে,

>> শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

>> পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, গুলি করে হতাহত করেছে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছে, নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

>> প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।

>> আমরা বরাবর দেখছি শিল্প পুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিকপক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুণ্ন করে এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সে জন্য শিল্পের স্বার্থেই এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।

>> সাধারণভাবে পুলিশ যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হবার বদলে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে কাজ করে কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায তার কারণ এর গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমলানির্ভর বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করে নতুন ভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

>> মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়। মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

>> কারখানায় সুস্থ কর্মপরিবেশ এবং সব শ্রমিকের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

>> বাংলাদেশে কার্যকর শ্রম আদালত নেই। যতটুকু আছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে।

>> শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ বর্তমানে যেভাবে নির্ধারণ করা হয় তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অপমানজনক। ক্ষতিপূরণ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে হতাহতের জীবনের জন্য যথেষ্ট হয় এবং একইসঙ্গে তা যাতে অপরাধীর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং সদস্য সচিব বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আর সদস্যরা হলেন, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট), অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ), অ্যাডভোকেট মো. নেসার আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ (বিশিষ্ট চিকিৎসক ও প্রাক্তন অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিটফোর্ড হাসপাতাল), অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), মোশরেফা মিশু (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেরাম), অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), প্রকৌশলী এ এ এম ফয়েজ হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন), শামীম ইমাম (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ), হারুনার রশিদ ভুইয়া (আহ্বায়ক, শ্রমজীবী আন্দোলন), সুশান্ত সিনহা সুমন (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন), মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক (সভাপতি, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি), আব্দুল আলী (সভাপতি, শ্রমজীবী সংঘ), সাদেকুর রহমান শামীম (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র), মাসুদ রেজা (সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন), শবনম হাফিজ (সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন), সত্যজিত বিশ্বাস (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন), সাইফুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি), জিয়াউল কবির খোকন (গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গাজীপুর জেলা), মানস নন্দী (সমন্বয়ক, ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিক ফেডারেশন) এবং আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন (উপদেষ্টা, চা শ্রমিকদের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি)।

ছবি

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

দলগুলো না পারলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব

কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতার বিকল্প নেই: টিআইবি

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা: নতুন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা, জানাতে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি

ছবি

৪ দিনের সফরে চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং

ছবি

ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না: প্রধান বিচারপতি

ছবি

প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য

ছবি

রাজশাহীতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

tab

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত নিহত হয়েছেন। দ আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে গণতদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য জানানো হয়।

সরকার পতনের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন - সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই আন্দোলনে নিহত-আহত শ্রমিকদের সংখ্যা বের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে মজুরি ইস্যুতে আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য তুলে ধরে তদন্ত কমিটি। আন্দোলনে ৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১২ হাজার মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। কিন্তু শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিককে গুলি করা হয়েছে, তাকে পুলিশ নাকি অন্য কেউ গুলি করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিক মারা গেছেন, তিনি কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু আপনি বলছেন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কোনটা সঠিক? এর উত্তরে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে যে শ্রমিক মারা গেছেন তার শরীরে ছররা গুলি পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রশাসন প্রশ্ন তোলে। সুতরাং প্রশাসনও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিজিএমইএ থেকে কোনো তথ্য আমরা পায়নি। শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের দমন-পীড়নে কাজ করেছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিল্প পুলিশ বিলুপ্ত করাসহ তদন্ত কমিটির ৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে,

>> শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

>> পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, গুলি করে হতাহত করেছে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছে, নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

>> প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।

>> আমরা বরাবর দেখছি শিল্প পুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিকপক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুণ্ন করে এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সে জন্য শিল্পের স্বার্থেই এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।

>> সাধারণভাবে পুলিশ যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হবার বদলে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে কাজ করে কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায তার কারণ এর গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমলানির্ভর বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করে নতুন ভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

>> মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়। মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

>> কারখানায় সুস্থ কর্মপরিবেশ এবং সব শ্রমিকের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

>> বাংলাদেশে কার্যকর শ্রম আদালত নেই। যতটুকু আছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে।

>> শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ বর্তমানে যেভাবে নির্ধারণ করা হয় তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অপমানজনক। ক্ষতিপূরণ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে হতাহতের জীবনের জন্য যথেষ্ট হয় এবং একইসঙ্গে তা যাতে অপরাধীর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং সদস্য সচিব বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আর সদস্যরা হলেন, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট), অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ), অ্যাডভোকেট মো. নেসার আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ (বিশিষ্ট চিকিৎসক ও প্রাক্তন অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিটফোর্ড হাসপাতাল), অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), মোশরেফা মিশু (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেরাম), অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), প্রকৌশলী এ এ এম ফয়েজ হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন), শামীম ইমাম (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ), হারুনার রশিদ ভুইয়া (আহ্বায়ক, শ্রমজীবী আন্দোলন), সুশান্ত সিনহা সুমন (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন), মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক (সভাপতি, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি), আব্দুল আলী (সভাপতি, শ্রমজীবী সংঘ), সাদেকুর রহমান শামীম (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র), মাসুদ রেজা (সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন), শবনম হাফিজ (সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন), সত্যজিত বিশ্বাস (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন), সাইফুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি), জিয়াউল কবির খোকন (গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গাজীপুর জেলা), মানস নন্দী (সমন্বয়ক, ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিক ফেডারেশন) এবং আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন (উপদেষ্টা, চা শ্রমিকদের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি)।

back to top