alt

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত নিহত হয়েছেন। আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে গণতদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের এ তথ্য জানানো হয়।

সরকার পতনের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন-সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই আন্দোলনে নিহত-আহত শ্রমিকদের সংখ্যা বের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে মজুরি ইস্যুতে আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য তুলে ধরে তদন্ত কমিটি। আন্দোলনে ৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১২ হাজার মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। কিন্তু শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিককে গুলি করা হয়েছে, তাকে পুলিশ নাকি অন্য কেউ গুলি করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিক মারা গেছেন, তিনি কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু আপনি বলছেন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কোনটা সঠিক? এর উত্তরে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে যে শ্রমিক মারা গেছেন তার শরীরে ছররা গুলি পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রশাসন প্রশ্ন তোলে। সুতরাং প্রশাসনও এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিজিএমইএ থেকে কোনো তথ্য আমরা পায়নি। শিল্পপুলিশ শ্রমিকদের দমন-পীড়নে কাজ করেছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিল্পপুলিশ বিলুপ্ত করাসহ তদন্ত কমিটির ৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে,

শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, গুলি করে হতাহত করেছে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছে, নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।

৪. আমরা বরাবর দেখছি শিল্পপুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিকপক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুণœ করে এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সে জন্য শিল্পের স্বার্থেই এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।

৫. সাধারণভাবে পুলিশ যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হওয়ার বদলে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে কাজ করে কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায তার কারণ এর গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমলানির্ভর বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করে নতুনভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

৬. মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়। মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

৭. কারখানায় সুস্থ কর্মপরিবেশ এবং সব শ্রমিকের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৮. বাংলাদেশে কার্যকর শ্রম আদালত নেই। যতটুকু আছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে।

৯. শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ বর্তমানে যেভাবে নির্ধারণ করা হয় তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অপমানজনক। ক্ষতিপূরণ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে হতাহতের জীবনের জন্য যথেষ্ট হয় এবং একইসঙ্গে তা যাতে অপরাধীর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং সদস্য সচিব বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আর সদস্যরা হলেন, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট), অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ), অ্যাডভোকেট মো. নেসার আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ (বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাবেক অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিটফোর্ড হাসপাতাল), অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), মোশরেফা মিশু (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফেরাম), অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), প্রকৌশলী এ এ এম ফয়েজ হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন), শামীম ইমাম (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ), হারুনার রশিদ ভুইয়া (আহ্বায়ক, শ্রমজীবী আন্দোলন), সুশান্ত সিনহা সুমন (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন), মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক (সভাপতি, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি), আবদুল আলী (সভাপতি, শ্রমজীবী সংঘ), সাদেকুর রহমান শামীম (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র), মাসুদ রেজা (সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন), শবনম হাফিজ (সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন), সত্যজিত বিশ্বাস (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন), সাইফুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি), জিয়াউল কবির খোকন (গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গাজীপুর জেলা), মানস নন্দী (সমন্বয়ক, ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিক ফেডারেশন) এবং আবদুল্লাহ আল কাফি রতন (উপদেষ্টা, চা শ্রমিকদের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি)।

ছবি

খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ; পরিবারের অন্য সদস্যরা সুবিধা পাবেন না: রিজওয়ানা হাসান

ছবি

সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি: আদালতকে নারী উদ্যোক্তা তনি

ছবি

রাজশাহীর রাজবাড়ী সংরক্ষণে পদক্ষেপ: প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চিঠি

ছবি

মক ভোটিং: দুই ব্যালটে ভোট দিতে জনপ্রতি গড়ে সময় লেগেছে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড

পোস্টাল ভোট: ১ লাখ ৫৭ হাজার প্রবাসীর নিবন্ধন

ছবি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় ব্রিটিশ চিকিৎসক ঢাকায়, হাসপাতালে বিজিবি মোতায়েন

ছবি

ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ

ছবি

বিটিআরসির সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ডাকা হলো, ধমক দিলেন চিফ প্রসিকিউটর, ক্ষমা চাইলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পান্না

ছবি

আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ছবি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ২

ছবি

এলপি গ্যাস: ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো ৩৮ টাকা

ছবি

নির্বাচন: লটারিতে ৫২৭ ওসির বদলি ভাগ্য নির্ধারণ

ছবি

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কর্মশালা হঠাৎ স্থগিত

ছবি

খালেদার শারীরিক অবস্থার ওপর ‘নির্ভর করছে’ তারেকের দেশে ফেরা

ছবি

খালেদা জিয়ার ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা’ কার্যকরের নির্দেশ সরকারের

ছবি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানালেন, তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননি

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৬১০ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ২

ছবি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৮ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ গেল জাপানে

ছবি

তারেক রহমানের দেশে আসতে আইনগত বাধা আছে বলে জানা নেই: আইন উপদেষ্টা

ছবি

সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাভিলাষী সংস্কার নতুন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ছবি

পূর্বাচল প্লট দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিক দণ্ডিত

পোস্টাল ভোট: প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন এক লাখ ছাড়ালো

ছবি

কামালকে দিয়ে প্রত্যর্পণ শুরুর তথ্য নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সরকারি এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যথাযথ নয়: বিইআরসি

১২২ বার পেছালো প্রতিবেদন জমার সময়

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ: হত্যাকাণ্ডে ‘হাসিনার সায়, জড়িত আওয়ামী লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস’, বলছে তদন্ত কমিশন

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৩৬ জন

ছবি

খালেদা জিয়া: কিডনির কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলছেন চিকিৎসকরা

ছবি

তারেক ফিরতে চাইলে একদিনে ট্রাভেল পাস: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে ট্রাইব্যুনালে তলব

ছবি

কামালকে প্রত্যর্পণের অফিসিয়াল তথ্য নেই : পররাষ্ট্র উপ‌দেষ্টা

ছবি

উপদেষ্টা পরিষদের সভা: এনজিও নিবন্ধনের নিয়ম ও অনুদান অবমুক্তির শর্ত সহজ হচ্ছে

tab

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত নিহত হয়েছেন। আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে গণতদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের এ তথ্য জানানো হয়।

সরকার পতনের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন-সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই আন্দোলনে নিহত-আহত শ্রমিকদের সংখ্যা বের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে মজুরি ইস্যুতে আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের তথ্য তুলে ধরে তদন্ত কমিটি। আন্দোলনে ৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১২ হাজার মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। কিন্তু শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিককে গুলি করা হয়েছে, তাকে পুলিশ নাকি অন্য কেউ গুলি করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় যে শ্রমিক মারা গেছেন, তিনি কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু আপনি বলছেন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কোনটা সঠিক? এর উত্তরে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে যে শ্রমিক মারা গেছেন তার শরীরে ছররা গুলি পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রশাসন প্রশ্ন তোলে। সুতরাং প্রশাসনও এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিজিএমইএ থেকে কোনো তথ্য আমরা পায়নি। শিল্পপুলিশ শ্রমিকদের দমন-পীড়নে কাজ করেছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিল্পপুলিশ বিলুপ্ত করাসহ তদন্ত কমিটির ৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে,

শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, গুলি করে হতাহত করেছে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছে, নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।

৪. আমরা বরাবর দেখছি শিল্পপুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিকপক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুণœ করে এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সে জন্য শিল্পের স্বার্থেই এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।

৫. সাধারণভাবে পুলিশ যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হওয়ার বদলে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে কাজ করে কিংবা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায তার কারণ এর গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমলানির্ভর বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করে নতুনভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

৬. মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়। মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

৭. কারখানায় সুস্থ কর্মপরিবেশ এবং সব শ্রমিকের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৮. বাংলাদেশে কার্যকর শ্রম আদালত নেই। যতটুকু আছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে।

৯. শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ বর্তমানে যেভাবে নির্ধারণ করা হয় তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অপমানজনক। ক্ষতিপূরণ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে হতাহতের জীবনের জন্য যথেষ্ট হয় এবং একইসঙ্গে তা যাতে অপরাধীর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং সদস্য সচিব বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আর সদস্যরা হলেন, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট), অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ), অ্যাডভোকেট মো. নেসার আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), ডা. ম. হারুন-অর-রশিদ (বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাবেক অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিটফোর্ড হাসপাতাল), অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), মোশরেফা মিশু (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফেরাম), অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), প্রকৌশলী এ এ এম ফয়েজ হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন), শামীম ইমাম (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ), হারুনার রশিদ ভুইয়া (আহ্বায়ক, শ্রমজীবী আন্দোলন), সুশান্ত সিনহা সুমন (সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন), মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক (সভাপতি, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি), আবদুল আলী (সভাপতি, শ্রমজীবী সংঘ), সাদেকুর রহমান শামীম (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র), মাসুদ রেজা (সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন), শবনম হাফিজ (সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন), সত্যজিত বিশ্বাস (সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন), সাইফুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি), জিয়াউল কবির খোকন (গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গাজীপুর জেলা), মানস নন্দী (সমন্বয়ক, ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিক ফেডারেশন) এবং আবদুল্লাহ আল কাফি রতন (উপদেষ্টা, চা শ্রমিকদের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি)।

back to top