সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। খুন, ছিনতাই, পিটিয়ে হত্যাসহ নানা ঘটনায় জনগণের মধ্য আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাড়ে ৪০০ এর বেশি থানায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পিটিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। এরপর পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করলে অপরাধীরা অবাধে বিচরণ করতে থাকে। পরে পুলিশ কাজে ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও অপরাধীদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দেড়মাসের কিছুটা বেশি সময়ে শুধু রাজধানীতে শতাধিক খুন, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০টি। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধী ধরা পড়ার সংখ্যা খুবই কম। পুলিশ আরও জানায়, নানা অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীরা এতদিন কারাগারে ছিল। এখন যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেসব অপরাধে তাদের নামও আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ তারা বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
ডিএমপির একাধিক থানার ওসি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে আগের চেয়ে কিছুটা খারাপ হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের ভেতর এখনো আতঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া সব থানাতেই সম্প্রতি তাদের পদায়ন হয়েছে। এখনো এলাকা হিসেবে সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। সময়ের সঙ্গে অপরাধ কমে আসবে বলে জানান তারা।
ডিএমপি’র মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে। এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। যখন একটা ঘটনা ঘটে, ঘটনার কারণ কি এবং অপরাধীদের চিন্তা কি, এসব বিশ্লেষণ করে পুলিশ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে।’
এসব অপরাধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, উল্টো দাগি আসামিরা জামিনে বেড়িয়ে অপরাধীদের হাতকে শক্ত করে তোলে। এরই প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে সব ধরনের অপরাধ। প্রতিদিনই ঘটছে খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা। পুলিশ ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও গাড়ি সংকটে আগের মতো টহল দিতে পারছে না, অপারেশনাল কার্যক্রমও সেভাবে শুরু হয়নি। চেইন অব কমান্ডেরও ভঙ্গুর অবস্থা।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এসব পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। পাশাপাশি ছিনতাই, পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার, দখল ও মতের পার্থক্যকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি ঘটছে প্রতিদিন। বিশেষ করে পুলিশের অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনোখুনি ঘটছে। অপরাধীরা মনে করছে, এখন কোনো ঘটনা ঘটালে থানা পুলিশ সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। থানা থেকে লুট হওয়া হাজারেরও বেশি অস্ত্র অপরাধীদের কাছে চলে যাওয়ায় নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ছিনতাইকারীদের হটস্পট হিসেবে রাজধানীর ১৮টি স্থানকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব জায়গার মধ্যে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শাহবাগ, মতিঝিল, খিলগাঁও, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর এলাকা। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ অন্য স্থানগুলো হলো ভাটারা, শের-ই বাংলা নগর, রামপুরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, উত্তরা পশ্চিম, পল্লবী, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল ও তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকা।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার সাদিক খান আড়তের সামনে নাসির ও মুন্নাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জোড়া খুনের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে ২৪ বছর পর শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল জেল থেকে ছাড়া পান। মোহাম্মদপুর এলাকায় তার একক আধিপত্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতা জেরে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালী সাততলা বস্তিতে মধু ভান্ডারী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে মারধরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মহাখালীতে নেশার টাকা না দেওয়ায় মশিউর রহমান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি আপন ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন। অভিযুক্ত ভাইয়ের নাম শেখ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে বাবু। একইদিন রাতে বিমানবন্দরের কাওলা রেলগেট এলাকায় অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ পাওয়া যায়। তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরের লোহারগেট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে জিন্নাহ নামে এক অটোরিকশা চালক খুন হয়। ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নাসির বিশ্বাস নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন খিলগাঁও তালতলা ঝিলপাড়ের ঝোপ থেকে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
১৮ সেপ্টম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যা নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সিগনাল ছাড়তে দেরি হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বকশিবাজার মোড়ে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধর করে প্রাইভেটকার আরোহীরা। ১৬ সেপ্টেম্বর মেরুল বাড্ডায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে বিথী আক্তার নামে এক গৃহবধূ খুন হন। ১৩ সেপ্টম্বর মুগদার মান্ডায় দুই দোকানের মালামাল বেঁচাকেনা নিয়ে মারামারিতে এলাহি শাকিল নামে একজন নিহত হন। একইদিন যাত্রাবাড়ীতে আশরাফ আলী নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে চোর সন্দেহে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে বোরহান উদ্দিন সাইমন নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে খুন করা হয়েছে। একই দিন আদাবর থানার শনিরবিল এলাকায় রাতে তুহিন নামে এক বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় রইচ বেপারী নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাতে ওয়ারী এলাকা থেকে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে কদমতলী মেরাজনগর কাঁচারাস্তার উপর ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. হাশেম নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী খুন হন। ৩০ আগস্ট হাজারীবাগে খুন হন ইফতেখার হোসাইন ইমন নামে এক তরুণ। একই দিন বনশ্রী এলাকায় নড়াই নদী থেকে মাহফুজুর রহমান বিপ্লব নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর একদিন আগে তিনি নিখোঁজ হন। ৩১ আগস্ট ভোরে বাসাবো ফ্লাইওভারের ঢালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন অটোরিকশাচালক মো. ইউসুফ। একই দিন কদমতলীর মিনারবাগ থেকে মাহবুব নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২৭ আগস্ট ভোরে মিরপুরের দারুসসালাম সড়কে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রীতম। একই দিন যাত্রাবাড়ীতে বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সীমা আক্তার (২২) নামে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজিত জনতার আক্রমণের পর থানাগুলোর কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর ছিল। পুলিশের টহল গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়ায় সেই অর্থে টহল কার্যক্রমও শুরু করা যায়নি। তবে দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। খুন, ছিনতাই, পিটিয়ে হত্যাসহ নানা ঘটনায় জনগণের মধ্য আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাড়ে ৪০০ এর বেশি থানায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পিটিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। এরপর পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করলে অপরাধীরা অবাধে বিচরণ করতে থাকে। পরে পুলিশ কাজে ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও অপরাধীদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দেড়মাসের কিছুটা বেশি সময়ে শুধু রাজধানীতে শতাধিক খুন, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০টি। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধী ধরা পড়ার সংখ্যা খুবই কম। পুলিশ আরও জানায়, নানা অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীরা এতদিন কারাগারে ছিল। এখন যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেসব অপরাধে তাদের নামও আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ তারা বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
ডিএমপির একাধিক থানার ওসি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে আগের চেয়ে কিছুটা খারাপ হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের ভেতর এখনো আতঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া সব থানাতেই সম্প্রতি তাদের পদায়ন হয়েছে। এখনো এলাকা হিসেবে সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। সময়ের সঙ্গে অপরাধ কমে আসবে বলে জানান তারা।
ডিএমপি’র মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে। এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। যখন একটা ঘটনা ঘটে, ঘটনার কারণ কি এবং অপরাধীদের চিন্তা কি, এসব বিশ্লেষণ করে পুলিশ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে।’
এসব অপরাধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, উল্টো দাগি আসামিরা জামিনে বেড়িয়ে অপরাধীদের হাতকে শক্ত করে তোলে। এরই প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে সব ধরনের অপরাধ। প্রতিদিনই ঘটছে খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা। পুলিশ ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও গাড়ি সংকটে আগের মতো টহল দিতে পারছে না, অপারেশনাল কার্যক্রমও সেভাবে শুরু হয়নি। চেইন অব কমান্ডেরও ভঙ্গুর অবস্থা।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এসব পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। পাশাপাশি ছিনতাই, পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার, দখল ও মতের পার্থক্যকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি ঘটছে প্রতিদিন। বিশেষ করে পুলিশের অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনোখুনি ঘটছে। অপরাধীরা মনে করছে, এখন কোনো ঘটনা ঘটালে থানা পুলিশ সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। থানা থেকে লুট হওয়া হাজারেরও বেশি অস্ত্র অপরাধীদের কাছে চলে যাওয়ায় নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ছিনতাইকারীদের হটস্পট হিসেবে রাজধানীর ১৮টি স্থানকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব জায়গার মধ্যে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শাহবাগ, মতিঝিল, খিলগাঁও, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর এলাকা। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ অন্য স্থানগুলো হলো ভাটারা, শের-ই বাংলা নগর, রামপুরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, উত্তরা পশ্চিম, পল্লবী, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল ও তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকা।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার সাদিক খান আড়তের সামনে নাসির ও মুন্নাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জোড়া খুনের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে ২৪ বছর পর শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল জেল থেকে ছাড়া পান। মোহাম্মদপুর এলাকায় তার একক আধিপত্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতা জেরে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালী সাততলা বস্তিতে মধু ভান্ডারী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে মারধরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মহাখালীতে নেশার টাকা না দেওয়ায় মশিউর রহমান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি আপন ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন। অভিযুক্ত ভাইয়ের নাম শেখ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে বাবু। একইদিন রাতে বিমানবন্দরের কাওলা রেলগেট এলাকায় অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ পাওয়া যায়। তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরের লোহারগেট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে জিন্নাহ নামে এক অটোরিকশা চালক খুন হয়। ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নাসির বিশ্বাস নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন খিলগাঁও তালতলা ঝিলপাড়ের ঝোপ থেকে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
১৮ সেপ্টম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যা নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সিগনাল ছাড়তে দেরি হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বকশিবাজার মোড়ে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধর করে প্রাইভেটকার আরোহীরা। ১৬ সেপ্টেম্বর মেরুল বাড্ডায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে বিথী আক্তার নামে এক গৃহবধূ খুন হন। ১৩ সেপ্টম্বর মুগদার মান্ডায় দুই দোকানের মালামাল বেঁচাকেনা নিয়ে মারামারিতে এলাহি শাকিল নামে একজন নিহত হন। একইদিন যাত্রাবাড়ীতে আশরাফ আলী নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে চোর সন্দেহে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে বোরহান উদ্দিন সাইমন নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে খুন করা হয়েছে। একই দিন আদাবর থানার শনিরবিল এলাকায় রাতে তুহিন নামে এক বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় রইচ বেপারী নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাতে ওয়ারী এলাকা থেকে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে কদমতলী মেরাজনগর কাঁচারাস্তার উপর ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. হাশেম নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী খুন হন। ৩০ আগস্ট হাজারীবাগে খুন হন ইফতেখার হোসাইন ইমন নামে এক তরুণ। একই দিন বনশ্রী এলাকায় নড়াই নদী থেকে মাহফুজুর রহমান বিপ্লব নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর একদিন আগে তিনি নিখোঁজ হন। ৩১ আগস্ট ভোরে বাসাবো ফ্লাইওভারের ঢালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন অটোরিকশাচালক মো. ইউসুফ। একই দিন কদমতলীর মিনারবাগ থেকে মাহবুব নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২৭ আগস্ট ভোরে মিরপুরের দারুসসালাম সড়কে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রীতম। একই দিন যাত্রাবাড়ীতে বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সীমা আক্তার (২২) নামে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজিত জনতার আক্রমণের পর থানাগুলোর কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর ছিল। পুলিশের টহল গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়ায় সেই অর্থে টহল কার্যক্রমও শুরু করা যায়নি। তবে দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।