alt

পাহাড়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা সুপারিশ জনসংহতি সমিতির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে গত ১৮, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত তিন দফা সুপারিশ করেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।

আজ বৃহস্পতিবার ওই হামলাগুলোর বিষয়ে জেএসএস এক প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের সাথে তিন দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের তরফ থেকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা এবং খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, রাঙামাটি সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি সদরে বিশেষ মহলের সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জুম্মদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান–ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলায় চারজন জুম্ম নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই সাম্প্রদায়িক হামলায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়েছেন, অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত ও লুণ্ঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।’

জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠান। দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে জেএসএস। দলটির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমেই আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরে ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতা হয়। ওই দিন দীঘিনালায় পিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামে এক ব্যক্তি মারা যান। রাতে সদরে গোলাগুলি হয়। এ সময় দুজন পাহাড়ি যুবক মারা যান।

এর প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। শহরের বনরূপা বাজারে মিছিলটি গেলে সেখানে বাঙালিদের সঙ্গে সংঘাত বাধে। পরে শহরের দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনিক কুমার চাকমাকে। কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র অনিককে হত্যার দৃশ্যসংবলিত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জেএসএসের প্রতিবেদনে এসব ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে সংঘাতের বিষয়ে বলা হয়, ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের রাঙামাটির মিছিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের দুই শতাধিক ছাত্র–যুবক অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে পৌঁছালে অন্যান্য স্লোগানের সঙ্গে “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” স্লোগানটি তুলে ধরলে অধিকাংশ ছাত্র “বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” বললেও ইউপিডিএফের সেই ছাত্র-যুবকেরা “ভুয়া, ভুয়া” বলে চিৎকার করে। মিছিলটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শিল্পকলা একাডেমির কাছে পৌঁছালে সেখান থেকে প্রায় ২০০ জন অপরিচিত ছাত্র-যুবক মিছিলে শামিল হন, যাঁদেরকে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকেরা চেনেন না বলে জানিয়েছেন।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মিছিলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে আবার জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেসব অপরিচিত ইউপিডিএফ ছাত্র-যুবকেরা জোর করে মিছিলটি বনরূপায় দিকে এগিয়ে নেন। এরপর হ্যাপী মোড়ে পৌঁছালে সেই যুবকেরা বাঙালিদেরকে ধাওয়া করে। অপর দিকে বনরূপায় পেট্রোলপাম্পে মিছিলটি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দোকানের ছাদের ওপর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সেসব অপরিচিত ছাত্র-যুবক মিছিল থেকে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে তোলে।’

জেএসএসের প্রতিবেদনে তাদের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো। এটি ঠিক যে সেদিন মিছিলে যারা যোগ দিয়েছিল, তারা আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকেই গিয়েছিল। আমরা তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে সহযোগিতা করছি। কিন্তু জেএসএস সমগ্র ঘটনা ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করতে সাজানো কথা বলছে।’

জেএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিশেষ মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের সাম্প্রদায়িক হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ২১টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই পার্বত্য সমস্যার সমাধানের সূত্র নিহিত রয়েছে।

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

tab

পাহাড়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা সুপারিশ জনসংহতি সমিতির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে গত ১৮, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত তিন দফা সুপারিশ করেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।

আজ বৃহস্পতিবার ওই হামলাগুলোর বিষয়ে জেএসএস এক প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের সাথে তিন দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের তরফ থেকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা প্রদান করা এবং খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, রাঙামাটি সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি সদরে বিশেষ মহলের সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জুম্মদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান–ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলায় চারজন জুম্ম নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই সাম্প্রদায়িক হামলায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়েছেন, অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত ও লুণ্ঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।’

জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠান। দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে জেএসএস। দলটির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমেই আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদরে ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতা হয়। ওই দিন দীঘিনালায় পিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামে এক ব্যক্তি মারা যান। রাতে সদরে গোলাগুলি হয়। এ সময় দুজন পাহাড়ি যুবক মারা যান।

এর প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। শহরের বনরূপা বাজারে মিছিলটি গেলে সেখানে বাঙালিদের সঙ্গে সংঘাত বাধে। পরে শহরের দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনিক কুমার চাকমাকে। কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র অনিককে হত্যার দৃশ্যসংবলিত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জেএসএসের প্রতিবেদনে এসব ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে সংঘাতের বিষয়ে বলা হয়, ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের রাঙামাটির মিছিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের দুই শতাধিক ছাত্র–যুবক অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে পৌঁছালে অন্যান্য স্লোগানের সঙ্গে “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” স্লোগানটি তুলে ধরলে অধিকাংশ ছাত্র “বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” বললেও ইউপিডিএফের সেই ছাত্র-যুবকেরা “ভুয়া, ভুয়া” বলে চিৎকার করে। মিছিলটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শিল্পকলা একাডেমির কাছে পৌঁছালে সেখান থেকে প্রায় ২০০ জন অপরিচিত ছাত্র-যুবক মিছিলে শামিল হন, যাঁদেরকে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকেরা চেনেন না বলে জানিয়েছেন।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মিছিলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে আবার জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেসব অপরিচিত ইউপিডিএফ ছাত্র-যুবকেরা জোর করে মিছিলটি বনরূপায় দিকে এগিয়ে নেন। এরপর হ্যাপী মোড়ে পৌঁছালে সেই যুবকেরা বাঙালিদেরকে ধাওয়া করে। অপর দিকে বনরূপায় পেট্রোলপাম্পে মিছিলটি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দোকানের ছাদের ওপর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সেসব অপরিচিত ছাত্র-যুবক মিছিল থেকে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে তোলে।’

জেএসএসের প্রতিবেদনে তাদের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো। এটি ঠিক যে সেদিন মিছিলে যারা যোগ দিয়েছিল, তারা আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকেই গিয়েছিল। আমরা তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে সহযোগিতা করছি। কিন্তু জেএসএস সমগ্র ঘটনা ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করতে সাজানো কথা বলছে।’

জেএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিশেষ মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের সাম্প্রদায়িক হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ২১টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই পার্বত্য সমস্যার সমাধানের সূত্র নিহিত রয়েছে।

back to top