এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২১০ ছাড়িয়েছে, নতুন আক্রান্ত ৯১৫ জন
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শনিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা একদিনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর একদিনে আটজন করে মারা গিয়েছিলেন ডেঙ্গুতে।
মৃত্যুর হার বাড়ছে
এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে এ বছর এখন পর্যন্ত ২১০ জন মারা গেছেন, যা মৃত্যুর তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮১ জন। সাম্প্রতিক মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শনিবার মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ছয়জন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া বরিশালে ২ জন, চট্টগ্রামে ১ জন এবং ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শুধু মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৪৩ জন এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে ৫৭২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮১০ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাইরে বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, চট্টগ্রামে ১৯৭ জন, খুলনায় ৯৭ জন, ময়মনসিংহে ৪৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৪৯ জন। তবে এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৬৫১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৮৪৯ জন, আর ঢাকার বাইরে ১৮০২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার বাইরের আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বর মাসের ভয়াবহতা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ হাজার ২৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যা এ বছরের সবচেয়ে বেশি। একই সময়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়, যা এক মাসে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
অক্টোবরের শুরুতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি। অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে ১০ হাজার ৮৭২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭ জনে পৌঁছেছে।
বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর বিস্তার
চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে আসে এবং ৩৩৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যার মধ্যে মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে ৩১১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়, আর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে এপ্রিল থেকে। ওই মাসে ৫০৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২ জনের মৃত্যু হয়। মে মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪৪ জনে এবং ১২ জন মারা যান। এরপর জুনে ৭৯৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন এবং মারা যান ৮ জন।
জুলাই ও অগাস্টে ডেঙ্গুর প্রকোপ
জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। ওই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১২ জন মারা যান। অগাস্টে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, ওই মাসে ৬৫২১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং মৃত্যু হয় ২৭ জনের।
পূর্বের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য সংরক্ষণ করে আসছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন
দেশে ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এইডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২১০ ছাড়িয়েছে, নতুন আক্রান্ত ৯১৫ জন
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শনিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা একদিনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর একদিনে আটজন করে মারা গিয়েছিলেন ডেঙ্গুতে।
মৃত্যুর হার বাড়ছে
এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে এ বছর এখন পর্যন্ত ২১০ জন মারা গেছেন, যা মৃত্যুর তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮১ জন। সাম্প্রতিক মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শনিবার মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ছয়জন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া বরিশালে ২ জন, চট্টগ্রামে ১ জন এবং ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শুধু মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৪৩ জন এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে ৫৭২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮১০ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাইরে বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, চট্টগ্রামে ১৯৭ জন, খুলনায় ৯৭ জন, ময়মনসিংহে ৪৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৪৯ জন। তবে এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৬৫১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৮৪৯ জন, আর ঢাকার বাইরে ১৮০২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার বাইরের আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বর মাসের ভয়াবহতা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ হাজার ২৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যা এ বছরের সবচেয়ে বেশি। একই সময়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়, যা এক মাসে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
অক্টোবরের শুরুতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি। অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে ১০ হাজার ৮৭২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭ জনে পৌঁছেছে।
বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর বিস্তার
চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে আসে এবং ৩৩৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যার মধ্যে মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে ৩১১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়, আর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে এপ্রিল থেকে। ওই মাসে ৫০৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২ জনের মৃত্যু হয়। মে মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪৪ জনে এবং ১২ জন মারা যান। এরপর জুনে ৭৯৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন এবং মারা যান ৮ জন।
জুলাই ও অগাস্টে ডেঙ্গুর প্রকোপ
জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। ওই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১২ জন মারা যান। অগাস্টে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, ওই মাসে ৬৫২১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং মৃত্যু হয় ২৭ জনের।
পূর্বের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য সংরক্ষণ করে আসছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন
দেশে ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এইডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।